বরিশাল প্রতিনিধি // সরকারি বরাদ্দকৃত মোটরসাইকেল দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার না করে এক সহকারী শিক্ষকের কাছে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ( হাসপাতাল ) ইপিআই টেকনোলজিস্ট অঞ্জনা রানী দাসের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় ওই টেকনোলজিস্টের নামে মোটরসাইকেল ব্যবহার না করেও সরকারি বিল আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে।
ঝালকাঠি সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানাগেছে , নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই টেকনোলজিস্টকে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য সরকারি ভাবে একটি মটরসাইকেল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তা অবশ্যই সরকারি কাজে ব্যবহার করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক স্টাফ জানিয়েছেন ,কাগজে কলমে ইপিআই টেকনোলজিস্টের নামে গাড়ি বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে সেটি ভাড়ায় চলিত। টেকনোলজিস্ট অঞ্জনা রানী দাস Akij Durbar ( রেজিস্ট্রেশন নাম্বার – ঢাকা মেট্রো – হ – ২২৭০০৩ ) নামক ১১০ সিসি সরকারি মটরসাইকেলটি উপজেলার ২৯ নং রানাপাশা মল্লিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শুভ গুহর কাছে ৫ হাজার টাকা মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছেন ।
তাঁরা আরও জানান, অঞ্জনা রানী দাস সরকারি মটরসাইকেল নিজে ব্যবহার না করেও প্রতি তিন মাস পরে, পরে তেল , মবিল ও সার্ভিসিং বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেও আত্মসাৎ করছেন। অনুসন্ধানেও মিলেছে অভিযোগের সত্যতা। ঢাকা মেট্রো হ- ২২৭০০৩ রেজিস্ট্রেশন নাম্বারের Akij Durbar মটরসাইকেলটি স্কুলে যাওয়া আসা সহ বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করতে দেখা গেছে সহকারী শিক্ষক শুভ গুহ কে। যাহার প্রমাণাদি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। গাড়ির বিষয়ে জানার জন্য সহকারী শিক্ষক শুভ গুহর সন্ধানে তাঁর কর্মস্থল ২৯ নং রানাপাশা মল্লিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে সি এল ছুটিতে রয়েছেন। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ( ০১৭১২-৪৮৮৫২৭ ) সংগ্রহ করে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। গাড়ি ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই টেকনোলজিস্ট অঞ্জনা রানী দাস বলেন, “গাড়িটা আমার বাসায় থাকে। আমার ছেলে মাঝেমধ্যে চালায়। সরকার তো আর আমাকে রোজ, রোজ অতিরিক্ত তেল ও সার্ভিসিং খরচ দেয়না। ব্যাক্তিগত খরচ দিয়ে আমার একটা বাইক আমার ছেলে চালাতেই পারে।
কোন বদমাইশ যেন আপনাদের কাছে এটা খুঁচিয়ে দিয়েছে। আমার টাকার তেল দিয়ে আমার গাড়িটা আমার ছেলে চালালে আপনাদের সমস্যা কি ? ২৯ নং রানাপাশা মল্লিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শুভ গুহ গাড়িটা কিভাবে চালায় সে বিষয়ে জিগ্যেস করলে তিনি শুভ কে ভাসুর ছেলে দাবি করে বলেন, শুভ দুই একদিন আমার গাড়ি নিয়েছে আর নিবে না। ওদের টাকা পয়সা আছে গাড়ি কিনে চালাতে পারবে। অঞ্জনা রানীর বংশ দাস আর গুহ বংশের শুভ কিভাবে ভাসুর ছেলে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে মেলেনি কোন সদুত্তর। গাড়ির তেল ও সার্ভিসিং বিল বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতি তিন মাস পরে,পরে ১ হাজার টাকা পাই। তাতে বছরে ৩ হাজার টাকা হয়।
গাড়ির কাগজের বিষয়ে বলেন, গাড়িটি ঢাকা থেকে বরাদ্দ দেয়ার সময়ই সবকিছু করে দিয়েছে। সরকারি গাড়ি বাসায় রাখা যাবে কিনা তা জানতে চাইলে বলেন, হাসপাতালে গাড়ি রাখার নিরাপদ যায়গা নেই। আমাদের হাসপাতালে সিকিউরিটি কম। কিছু দিন আগে আমার এই রুমের ফ্যান চুরি হয়েছে। আমার ড্রয়ার কেটে টাকা নিয়ে গেছে ।
তাই নিরাপত্তার জন্য গাড়ি বাসায় রেখেছি। সরকারি গাড়ি বাসায় রেখে অপব্যবহারের বিষয়ে মেডিকেলের প্রধান জানেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন গাড়ি অপব্যবহার হলে তিনি জানবেন কিভাবে।” নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শিউলি পারভীন বলেন, এবিষয়ে আমার জানা নেই। আমার জানা মতে গড়িটি অকেজো অবস্থায় হাসপাতালের স্টোরে রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (সিভিল সার্জন) শিহাব উদ্দিন বলেন, বিষয়টি এর আগেও আমি একবার শুনেছি। সরকারি বরাদ্দকৃত মটরসাইকেল দাপ্তরিক কাজের বাহিরে কোন ভাবেই ব্যবহার করতে পারবে না। গাড়ির অপব্যবহারের উপযুক্ত প্রমাণ পেলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply