নিউজ ডেস্ক।।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রায় অর্ধেক আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যদেরকে মনোনয়ন দিবে না। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা বলছেন, দেড়শ না আরও বেশিও হতে পারে। ইতোমধ্যে গত নির্বাচনে যারা প্রার্থী ছিলেন, নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের এলাকার অবস্থান যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে, এলাকায় তাদের অবস্থা, তাদের জনপ্রিয়তা, তারা কোনো বিতর্কে জড়িয়েছেন কিনা, সংগঠনবিরোধী কর্মকান্ডের সঙ্গে আছেন কিনা ইত্যাদি নিয়েও তথ্যানুসন্ধান চলছে, চলছে একাধিক মাঠ জরিপ।
তবে এই সমস্ত তথ্য উপাত্তের পাশাপাশি এরকম কয়েকজন নেতা আছেন যারা নিশ্চিতভাবে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর ব্যাপারে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি সুস্পষ্ট মনোভাব ব্যক্ত করেছেন এবং আগামী নির্বাচনে যে তারা মনোনয়ন পাবেন না এই সম্পর্কে তাদেরকে বার্তাটা পরোক্ষভাবে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরকম তালিকায় যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন-
হাবিবে মিল্লাত: হাবিবে মিল্লাত সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি। তিনি তার এলাকায় বিভক্তির সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তার এলাকায় প্রায় বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভক্তি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের বাইরে গিয়ে তিনি নতুন একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন, এমন অভিযোগও উঠেছে। এই কারণেই তাকে সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগের পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। হাবিবে মিল্লাত ইতোমধ্যেই লাল কার্ড পেয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পঙ্কজ দেবনাথ: বরিশাল-৪ আসন থেকে নির্বাচিত পঙ্কজ দেবনাথকে সাম্প্রতিক সময়ে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। যদিও এ অব্যাহতি মানে এই নয় যে তিনি আর সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারবেন না। এখন তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল রয়েছেন। তবে আগামী নির্বাচনে তিনি যে বরিশাল-৪ থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন না এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
মুরাদ হাসান: জামালপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মুরাদ হাসান তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তারপর তার বিভিন্ন রকম অসংলগ্ন কথাবার্তার জন্য তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর তিনি পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পরই তার এলাকার বিভিন্ন কমিটি থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়। বর্তমানে পর্দার আড়ালে আছেন মুরাদ হাসান। কিন্তু আগামী নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন পাবেন না বলেই নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। ওই নির্বাচনী এলাকায় একাধিক ব্যক্তি এখন নির্বাচন প্রচারণার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।
হাজী সেলিম: ঢাকা-৭ থেকে নির্বাচিত হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতির মামলার রায় হয়েছে এবং ওই মামলায় তিনি দণ্ডিত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়নি। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তবে সংসদ সদস্য বাতিল হোক না হোক, সর্বোচ্চ আদালতের রায় যদি শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে তবে আগামী নির্বাচনে হাজী সেলিমকে দেখা যাবে না।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন: ফরিদপুর-৩ থেকে নির্বাচিত দুইবারের এমপি খন্দকার মোশাররফ হোসেন আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। ফরিদপুরে তার ঘনিষ্ঠ লোকজনের ব্যাপক অর্থপাচার, লুটপাট, দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমে বছর জুড়েই চাউর হয়েছে এবং এই সমস্ত অভিযোগে তার সহকারী একান্ত সচিব এবং তার ঘনিষ্ঠ কর্মীদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে রাজনীতিতে তিনি এক ধরনের মৌনব্রত অবলম্বন করছেন এবং সবকিছু থেকেই তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে যে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে তিনি নির্বাচন করছেন না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
এরকম আরও অন্তত ৩০ জন রয়েছেন, যারা ইতোমধ্যেই মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগগুলো রয়েছে সেই সমস্ত অভিযোগগুলোর কারণে তারা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না বলে বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতজন নতুন প্রার্থীকে সামনে আনবে সেটি চূড়ান্ত হবে আরও পরে।
Leave a Reply