ইতি শিকদার, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়কে চলন্ত যানবাহন থেকে অবৈধভাবে টোল আদায়ের কারণে নিত্যদিন যানজটের সৃষ্টি হয়ে রাস্তা পারাপারে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারী, স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া ভালুকা-গফরগাঁও সড়কে শিমুলতলী এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিক্সার স্ট্যান্ড করায় সার্বক্ষনিক শতাধিক সিএনজি চালিত অটোরিক্সা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যানবাহনের বাজারে পরিনত হয়েছে। ফলে জরুরী ভিত্তিতে আগুন নিভাতে কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত স্থানে যাওয়ার মুর্হূতে ভালুকা দমকল বাহিনীর গাড়ি এসব জ্যামে দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে দেখা গেছে। এসব নিরসনে প্রশাসনের কোন জোড়ালো পদক্ষেপ না থাকায় অনিয়ম যেন নিয়মে পরিনত করেছে একটি প্রভাবশালী মহল। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বর্তমানে ফোরলেনে উন্নীত হওয়ায় রাজধানীর সাথে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কয়েকটি জেলার যাত্রী ও পন্যবাহী গাড়ি চলাচলসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ বিভাগের কর্তা ব্যাক্তিরা চলাচল করেন প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন সকাল হতেই মহাসড়কের ভালুকা চৌরাস্তায় লাঠি আর রঙ্গিন রশীদ হাতে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে লেগে যায় টোল আদায় কাজে। তারা উত্তর দক্ষিন খেয়াল করে দুর পাল্লার চলন্ত পিকআপ ভ্যান, ছোট ট্রাক, লড়ি, দুর দুরান্ত থেকে হটাৎ করে আসা সিএনজি থামিয়ে পৌরসভা টার্মিনালের ২০ টাকার একটি রশীদ ধরিয়ে টাকা রাখছেন জনৈক ইজারাদারের নামে। কোন গাড়ি থামতে না চাইলে লাঠি উঁচিয়ে পিছু দৌড়াতে থাকে টোল আদায়কারীরা। অনেক সময় চালককে লাঠি দিয়ে আঘাত করে এমনকি গ্লাস ভেঙ্গে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনা ঘটে চলেছে ভালুকা চৌরাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সামনেই। উত্তর দক্ষিন দুই দিকেই যখন গাড়ি থামানো হয় তখন পিছনে জ্যাম লেগে যায়। এতে অনেক সময় রোগী বহনকারী এ্যাম্ব্যুলেন্স আটকা পরে সাইরেন বাজিয়েও জ্যাম ছাড়তে পারেননা। তারা চাঁদা অর্থাৎ রশীদের ভাষায় টোল না পাওয়া পর্যন্ত রাস্তার গাড়ি ছাড়েননা। টোল আদায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পৌরসভার ইজারা নিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার শিমুলতলী স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ৩ হাজার ৩০০ টাকা, মহাসড়কে চলন্ত যানবাহনসহ লোকাল গাড়ি থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, ভালুকা বাজার এলাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, থানামোড় পনাশাইল রোড থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, মল্লিকবাড়ি মোড় থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, ভালুকা বাজার পাঁচরাস্তারমোড় থেকে ৮০০ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। তাছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার ভরাডোবা, উথুরা, মল্লিকবাড়ি বাজার, সিডস্টোর বাজার, মাস্টারবাড়ি ও চাঁনপুর বাজারসহ বড় বড় বাজার থেকে চলাচলরত যানবাহন ও মালামাল পরিবহনকারী গাড়ি থেকে শ্রমিক সংগঠনের নামে ১০০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসহ থ্রী-হুইলার যানবাহন মহাসড়কে নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে মহাসড়কের ভালুকা চৌরাস্তা হতে পূর্বদিকে উপজেলা পরিষদ হয়ে চলে গেছে গফরগাঁও সড়ক। চৌরাস্তা হতে ঢালী মার্কেট পর্যন্ত সড়কে কয়েকশ ইজিবাইক ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সার দখলে থাকে সারাদিন। রাস্তার উপর এসব যানবাহন ঠাসা ঠাসি করে দাঁড় করিয়ে রাখায় যানবাহন চলাচলে যেমন বিঘেœর সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি ভালুকা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সংলগ্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হালিমুনন্নেছা চৌধুরানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ভালুকা পাইলট উচ্চ বিদ্যাল ও ভালুকা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর স্কুলে আসা যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। চালকরা জানায়, তারা প্রতিদিন রশীদের মাধ্যমে পৌর টোল ২০ টাকা ও বিনা রশীদে জিপি টোল ৩০ টাকা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। জিপি টোল বিষয়টির কোন ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেননি তবে ষ্টেশন মাষ্টার এ টাকা আদায় করে থাকেন বলে তারা জানান। চালকরা আরো জানান, ভালুকা হতে গফরগাঁও যাত্রী নিয়ে গেলে সম পরিমান টাকা টোল সেখানেও দিতে হয়। ভালুকা-গফরগাঁও সড়কের শহীদ নাজিম উদ্দীন রোডে শিমুলতলা, কাইয়ূম মার্কেট ও খান মার্কেটের দোকানীদের অভিযোগ, দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্যে চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে। তারা প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাচ্ছেননা। ভালুকা পৌর এলাকায় কোন টার্মিনাল না থাকলেও মহাসড়ক ও আশ পাশের সংযোগ সড়কের উপর যান বাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠা নামা করার ফলে যানজটসহ প্রায়ই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ভালুকার ভরাডোবা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মারুফ রহমান জানান, ‘বাসস্ট্যান্ডে যানজট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকেন ট্রাফিক পুলিশ। এ ব্যাপারে আমার কিছুই করনীয় নেই।’ ভালুকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শাহজাদা জানান, ‘যানযনট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে যথাযথ চেষ্টা করছি। ’ইজারাদার নজরুল ইসলাম চলন্ত যানবাহন থেকে টোল আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন বলেন, ‘পৌরসভা থেকে এক বছরের জন্য প্রায় ১৬ লাখ টাকায় ইজারা নিয়ে লোকাল যানবাহন থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে ভালুকা পৌর মেয়র ডা. একেএম মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ূম জানান, ‘বর্তমানে ভালুকায় কোন বাস টার্মিনাল নেই। তারপরও যেহেতু ইজারা দেয়া হয়েছে, ইজারাদরগণ শুধুমাত্র লোকাল যানবাহন থেকে টোল আদায় করতে পারবেন। চলন্ত যানবাহন থেকে টোল আদায় করতে পারবেন না।’