বাংলার কন্ঠস্বর প্রতিবেদক : সকাল থেকে সন্ধ্যা— পুরোটা দিন কাটল সাইফুল ইসলাম মান্নু পরিচালিত ‘পুত্র’ চলচ্চিত্রের সেটে। উত্তরার একটা শাদা রঙের বাড়িতে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) রাত অবধি চলে চলচ্চিত্রটির শুটিং।
কয়েকদিন আগে শুটিং শুরু হলেও চলচ্চিত্রটির প্রধান অভিনেত্রী জয়া আহসানের প্রথম দিন ছিল মঙ্গলবার। দুপুরের আগেই হাজির হন সেটে। বেশ সময় ধরেই চলল তার সাজ-সজ্জা।
নির্মাতাসহ সবাই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। একসময় অপেক্ষার নদীতে থামল তরী। সহজ-সরল শহুরে বাঙালী নারীর সাজে মেকআপ রুম থেকে বের হয়ে আসলেন ‘ডুবসাঁতার’ নায়িকা। খয়েরী রঙের শাড়িতে তাকে মানিয়েছে বেশ। তার সঙ্গে মেকআপ রুম থেকে বের হয়ে এলেন বাংলা চলচ্চিত্রের চিরায়ত মা ডলি জহুর। তিনি এই চলচ্চিত্রে জয়ার শাশুড়ির চরিত্রে অভিনয় করছেন।
সবাই তৈরি। তাই সাইফুল ইসলাম মান্নুর ক্যামেরা-রেডি-এ্যাকশন বলতে সময় লাগল না বেশি। এবার দেখা যাক ‘পুত্র’ সিনেমায় সে দিন কী ঘটল—
ডাইনিংয়ের সোফাতে মুখ ভার করে হাতে তসবি নিয়ে বসে আছেন ডলি জহুর। জয়া হন্তদন্ত হয়ে বেডরুমের দিকে ছুটে গেলেন। বেরিয়েও এলেন তক্ষণাৎ। ডাইনিংয়ে ফিরে ডলি জহুরের সামনে দাঁড়ান। চোখে-মুখে অস্থিরতার ছাপ, ‘আম্মা সূর্যকে খুঁজে পাচ্ছি না।’ ডলি বললেন, ‘দেখ। ভাল করে খুঁজে দেখ’। জয়া আবারও খোঁজে। আবারও শাশুড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। শুরু হয় শীতল বাগবিতণ্ডা। শাশুড়ির ডায়ালগ, ‘তোমার ছেলের রেসপন্সিবিলিটি তোমার। কারণ তুমি ওকে জন্ম দিয়েছো।’
জয়ার রাগ চরমে, ‘আপনার ছেলের কোনো রেসপন্সিবিলিটি নেই। বাবা ছাড়া কোনো মা ছেলের জন্ম দিতে পারে না। বলেন, আমার ছেলেকে কোথায় রেখেছেন।’
ডলি জহুর বলতে থাকেন.. একটা অটিস্টিক বাচ্চা, সারাজীবন… এভাবেই একের পর এক দৃশ্যায়ন চলে সন্ধ্যা নাগাদ। জয়া মাঝে মাঝে আসেন পরিচালকের কাছে, স্ক্রিনে দেখে নিচ্ছেন শট পারফেক্ট হয়েছে কি-না। মনপুত না হলে আবারও শর্ট দিচ্ছেন।
কাছ থেকে না দেখলে বোঝা যায় না। একটা দৃশ্য একজন আর্টিস্টের জন্য কত কত গুরুত্বপূর্ণ। একটা দৃশ্য একজন শিল্পীকে দিতে পারে আকাশ ছোঁয়া খ্যাতি। ভালভাবে একটা দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জয়া। পুরোপুরি ‘পুত্র’ সিনেমার মায়ের ভেতর ঢুকে পড়েছেন তিনি।
এ দিকে কয়েকজন সংবাদকর্মী তার জন্য অপেক্ষারত। জয়া সব সিকুয়েন্স শেষ না করে কথা বলতে চাচ্ছেন না। মোট কথা নিজেকে চরিত্র থেকে বাইরে আনতে চাচ্ছেন না। একসময় শুটিং শেষ হল। সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুললেন জয়া।
নতুন সিনেমা নিয়ে বললেন, ‘স্পেশাল চাইল্ডদের নিয়ে এমনিতেই কাজ হয়েছে অনেক কম। এমন একটা ভাল সিনেমায় সুযোগ পেয়ে আমি বেশ আনন্দিত। প্রত্যেকটা মানুষেরই সামাজিক কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। একজন আর্টিস্ট হিসেবে এই চলচ্চিত্রটিকে আমার সামাজিক কাজের অংশই মনে করি।’
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের প্রযোজনায় ‘পুত্র’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড। হারুন রশীদের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপে সিনেমাটি তৈরি হচ্ছে। সহকারী পরিচালক হিসেবে আছেন সাদিয়া শবনম। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করছেন ফেরদৌস, জ্যোতিকা জ্যোতি, শর্মীমালা, শিশুশিল্পী লাজিম, লায়লা হাসান, সাবেরী আলম, শাওতি, আহসান হাবীব নাসিম, করভী মিজান, আল মামুন, রাজীব সালেহীন প্রমুখ।