বাংলার কন্ঠস্বর ডেস্ক : সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চান তার আট ভাই। সম্প্রতি সালমানের জীবিত ১১ ভাইয়ের মধ্যে একজন ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে এ কথা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করা ওই প্রিন্স জানিয়েছেন, তারা সালমানের (৭৯) পরিবর্তে বাদশাহ হিসেবে ৭৩ বছর বয়সী প্রিন্স আহমেদ বিন আব্দুল আজিজকে বসাতে চান। শুধু সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে সৌদের নাতিরাই নন, দেশটির বেশিরভাগ আলেমও এ বিদ্রোহের পক্ষে রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রিন্স বলেন, ‘আলেম ও ধর্মীয় ব্যক্তিরা প্রিন্স আহমেদকে পছন্দ করেন— তবে তাদের সবাই নন, ৭৫ শতাংশ।’ দেশটির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনে ধর্মীয় আলেমরা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন।
প্রিন্সের এই বক্তব্যে সৌদির রাজপরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশিত হল। এর আগে সৌদির নেতৃত্বে পরিবর্তন চেয়ে রাজপরিবারের সদস্যদের কাছে দুটি চিঠি দেন এই প্রিন্স। যা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বেশ আলোড়ন তুলে।
১৯৬৪ সালে পারিবারিক বিদ্রোহের মাধ্যমে বাদশাহ সৌদকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। এবারও সে ধরনের একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ওই প্রিন্স।
তিনি বলেন, ‘বাদশাহ (সালমান) যদি বাদশাহ সৌদের মতো সৌদি ছেড়ে চলে যান তাহলে তাকে দেশে ও দেশের বাইরে সম্মান করা হবে। অথবা প্রিন্স আহমেদকে ক্রাউন প্রিন্স বানাতে হবে এবং তাকে পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিতে হবে। অর্থনীতি, তেল, সামরিক বাহিনী, ন্যাশনাল গার্ড, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা— এ থেকে জেড পর্যন্ত সব দায়িত্ব।’
বার্ধক্যজনিত কারণে মস্তিষ্কের সমস্যায় ভুগা বাদশাহ সালমান রাষ্ট্রীয় পদে নিয়োগ দানের ক্ষেত্রে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে সম্প্রতি ইয়েমেন যুদ্ধ ও হজে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণে তার প্রতি জনগণের অসন্তোষ বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন প্রিন্স।
গত এপ্র্রিলে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিজ ছেলে মোহাম্মদকে (৩০) নিয়োগ দেন সালমান। তাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদও দেন বাদশাহ।
ইয়েমেন যুদ্ধের দায়িত্বে থাকা প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদকে ‘অজনপ্রিয়’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রিন্স। একই সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্স ও বাদশাহ সালমানের ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকেও (৫৬) ‘অজনপ্রিয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রিন্স আহমেদ টানা ৩৭ বছর দেশটির ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া চার বছর মক্কার ধর্মীয় স্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ২০১২ সালে তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে পাঁচ মাস পরই পদ থেকে সরে দাঁড়ান আহমেদ।
প্রিন্স বলেন, রাজনৈতিক বন্দীদের ব্যাপারে তৎকালীন বাদশাহের সঙ্গে মতাদ্বৈততার কারণেই তিনি (আহমেদ) পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রিন্স আহমেদ চিন্তার স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয় এমন রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে আগ্রহী।’
তিনি বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে বিজ্ঞ মতামত ও মডারেট ইসলামিক চিন্তা-ভাবনার কারণে অনেককে রাজনৈতিক বিবেচনায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। যদি প্রিন্স আহমেদ ক্ষমতায় যান তাহলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’
প্রিন্স বলেন, রাজনীতি বিজ্ঞানে মাস্টার্স করা প্রিন্স আহমেদের পেশাগত অভিজ্ঞতা ও মডারেট জীবন-যাপনের কারণে ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ ও রাজপরিবারের সদস্যরা তাকে পছন্দ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রিন্স আহমেদ স্বাস্থ্যবান ও জ্ঞানী হওয়ায় বড় ভাইরা তাকে পছন্দ করেন। তিনি (আহমেদ) সবসময়ই সৎ জীবন-যাপন করে আসছেন। তার মধ্যে জুয়া, নারী, মদ বা মাদকের কোনো নেশা নেই।’
প্রিন্স আহমেদকে ধার্মিক কিন্তু উদারমনা বলে উল্লেখ করেছেন এই বিদ্রোহী প্রিন্স। আহমেদ ইংরেজি জানেন ও বৈশ্বিক খবরাখবর রাখেন বলেও জানান তিনি।
বিদ্রোহী প্রিন্স আরও জানান, তারা রক্তাক্ত নয়, অভ্যন্তরীণ বিপ্লব চান।
তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার, চিন্তার স্বাধীনতা ও বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তন, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি ও সঠিক ইসলামী আইন প্রয়োগ করতে চাই।’
এদিকে ইন্ডিপেন্ডেন্টের পক্ষ থেকে রাজপরিবারের মধ্যে অসন্তোষের ব্যাপারে লন্ডনস্থ সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব নেন তার ভাই সালমান বিন আব্দুল আজিজ।