ঝালকাঠি প্রতিনিধি: কলেজ পড়–য়া কর্মজীবী ছেলে সোহেলকে হত্যার পর রাজাপুর থানায় দশজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছিল বাবা আমজেদ ফকির (৬০)। পুলিশ দুইজন আসামীকে গ্রেফতার করলেও তারা এক মাসের মধ্যে আদালত থেকে জামিনে বেড়িয়ে আসে। আর এখন জামিনে থাকা আসামীরাসহ হত্যা মামলার দশ আসামী ও তাদের প্রভাবশালী আত্মীয় স্বজনের অব্যহত হুমকিতে আমজেদ ফকির পরিবারের ১১ সদস্য নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রাত কাটাচ্ছেন নিজেদের বাড়ী ঘর ফেলে অন্যের বাড়ীতে। গতকাল রবিবার বিকাল চারটায় ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া গ্রামের দরীদ্্র আমজেদ ফকির। সংবাদ সম্মেলনে নিহত কলেজ ছাত্র সোহেলের মা রাজিয়া বেগম, বড় ভাই মো. ফয়সাল উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখত বক্তব্যে ও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আমজেদ ফকির অভিযোগ করেন সংসারে অভাব অনটনের কারনে তার দুই ছেলে বরিশালে মাহিন্দ্র গাড়ী চালায়। ছোট ছেলে সোহেল বড়ইয়া ডিগ্রি কলেজে দ্বাদশ শ্রেনীতে পড়ালেখার পাশাপাশি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালাতে সহযোগিতা করে। একই গ্রামের প্রভাবশালী আবদুল্লাহ আল-মাহবুবের ছেলে শুভ সোহেলের মোটরসাইকেলটি প্রায়ই জোড় পূর্বক চালাত। হত্যা ঘটনার কয়েকদিন আগে এ নিয়ে সোহেলের সাথে শুভর কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায় শুভ বলে ‘ আমাকে মোটরসাইকেল না দিলে তোকেসহ মোটরসাইকেল খাইয়া ফালামু’ । হুমকির তিনদিন পর সোহেলের মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। সোহেলের পরিবার এ চুরির জন্য সোহেলকে দায়ী করলে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ সৃস্টি হয়। সোহেলের পরিবার আমজেদ ফকিরকে নির্বংশ ও পঙ্গু করার হুমকি দেয়। এ বিষয়ে আমজেদ ফকির রাজাপুর থানায় গত ১৬ আগস্ট ৫৫৫ নং জিডি দায়ের করে। এর পর গত ২৬ আগস্ট সকাল ১১ টার দিকে ফোরকান নামে একজন সোহেলকে ফোন করে বড়ইয়া কলেজে আসতে বলে। সোহেল কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে লস্কর বাড়ীর কাছে কাচা রাস্তার ওপর শুভ, তার বাবা আবদুল্লাহ আল মাহাবুবসহ ১২/১৩ জন সোহেলের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরতর জখম করে। সোহেল অজ্ঞান হয়ে পড়লে হামলা কারীরা সোহেল মারা গেছে ভেবে তার দেহ পার্শ্ববর্তী বীজতলার পানির মধ্যে ফেলে দেয়। ঘটনার পনের মিনিট পর স্থানীয় শামসুল হকসহ কয়েকজন সোহেলকে পানি থেকে উঠিয়ে রাজাপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে দুপুর একটায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। ওই দিন রাতে রাজাপুর থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরে আরো তিন জনের নামে আদালতে মামলা করা হয়। সোহেল হত্যার দিনই রাজাপুর থানা পুলিশ প্রধান আসামী শুভর মা নারগীস আক্তার এবং কয়েকদিন পর কামাল নামে একজনকে গ্রেফকার করে। সম্প্রতি এরা জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসে। জামিনে এসে তারা সোহেলের পরিবারের ওপর নানাভাবে ভয়ভীতি ও চাপ সৃস্টি করে আসছে। এ ছাড়া এজাহার ভুক্ত আসামীরা প্রায়ই গ্রামে এসে দুই তিন ঘন্টা থেকে সোহেলের বাবা আমজেদ ফকির ও বড় ভাই ফয়সালকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আবার চলে যায়। আসামী ও তাদের আত্মীয় স্বজনের উপুর্যপুরি হুমকিতে আমজদে ফকির, তার ছেলে মেয়ে, নিহত সোহেলের স্ত্রী রুমা বেগম তার ছয় মাসের কন্যা সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মাঝে মধ্যে দিনের বেলা তারা বাড়িতে আসলেও রাতের বেলা অন্য বাড়িতে গিয়ে ঘুমাতে হয়।
ঝালকাঠির রাজাপুরে ছেলে হত্যার মামলা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার পরিবার
Total Page Visits: 72 - Today Page Visits: 2