সম্মানিত,
পাশকৃত ও শিক্ষারত মেডিকেল টেকনোলজিষ্টগন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পরিষদ এর পক্ষ থেকে আপনাদের সংগ্রমী শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পরিষদ কি?
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পরিষদ একটি সংগঠন। যা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদের একমাত্র সংগঠন। এই সংগঠন ২০০৮ সালে গঠিত হয়। সংগঠনটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত মেডিকেল টেকনোলজি কোর্সের ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে থাকে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদনের স্মারক নংঃ বাকাশিবো/ক(স্বাঃপ্রাঃ)/২০১৫/৮৯।
আন্দোলন ও সফলতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ২০০৫ ইং সালে মেডিকেল টেকনোলজি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে। চালু করার পরপরই ছাত্র-ছাত্রীরা মেডিকেল টেকনোলজি কোর্সে ব্যাপক হারে ভর্তি হতে থাকে। এরই মাঝে বাংলাদেশ রষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের প্রধান প্রধান পত্রিকায়, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স অবৈধ দাবী করে প্রজ্ঞাপন জারী করে। প্রজ্ঞাপন জারী করার পররই বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড হতে অনুমোদিত কলেজের সম্মানীত মালিকগণ কলেজের সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলেন। গোপনে গোপনে ক্লাশ চলতে থাকে। আবার যখন কোন সমস্যা দেখা দেয় তখন অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ ছুটি ঘোষনা করা হয়। যখন সমস্যা শেষ হয় তখন সম্মানিক কলেজ মালিকগণ ছাত্র-ছাত্রীদের ফোন করে ক্লাশের জন্য ডেকে আনতেন। সমস্যার কারনে ১ম ও ২য় ব্যাচ একত্র হয়ে যায় ও একটি ব্যাচ হিসাবে গন্য করা হয়। এভাবেই ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে।

সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ফিল্ড ট্রেনিং প্রদানের দাবীতে ২০০৯ সালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পরিষদ।
২০০৯ সাল ফিল্ড ট্রেনিং আন্দোলনঃ
২০০৯ সাল প্রথম ব্যাচ ও দ্বিতীয় ব্যাচের ফিল্ড ট্রেনিং এর সময় চলে আসে। এখন সবাই ফিল্ড ট্রেনিং করবে কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পথের কাঁটা হয়ে দাড়িয়ে যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স অবৈধ ঘোষনা করে ও ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলাদেশের কোন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, মেডিকেল কলেজে ফিল্ড ট্রেনিং করতে পারবেনা মর্মে একটি প্রজ্ঞাপন জারী করে। ফিল্ড ট্রেনিং আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের ডাক দেয় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পরিষদ। সংগঠনের ডাকে সারা দেয় অবহেলিত মেডিকেল টেকনোলজিষ্টগন। প্রখর আন্দোলনের ফলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ফিল্ড ট্রেনিং করার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়। সবাই ফিল্ড ট্রেনিং করার আনন্দে মেতি উঠি।
২০১১ সাল আমাদের একটি পরাজয়ঃ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংস্থাপনা মন্ত্রণালয় হতে একটি সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড হতে পাশকৃত মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদের বঞ্চিত করা হয়। আবারও আমরা আন্দোলন শুরু করি। কিন্তু কলেজ মালিক ও বোর্ডের তেমন কোন সারা না পাওয়ায় ২০১১ সালের আন্দোলনে আমাদের ব্যার্থ হতে হয়েছে। ২০১১ সাল হতে ২০১২ ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আমরা অনেক সভা সেমিনার, মানব বন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করি কিন্তু তেমন কোন সফলতার মুখ দেখতে পাইনি।

১৮/০১/২০১৩ ইং তারিখ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধনের জন্য ২০/০১/১৩ইং তারিখ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সামনে অবস্থান নেয় বাংলাদেশ কারিকরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পরিষদ।
২০১৩ সাল আমাদের একটি বিশাল সফলতা ও কয়েকটি ত্যাগঃ
২০১৩ সালের ১৮ই জানুয়ারী স্বাস্থ অধিদপ্তর হতে ২২০০ জনের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবারও আমাদের বঞ্চিত করা হয়। এবার প্রথমেই সম্মানিত কলেজ মালিকদের নিয়ে ১৯/০১/২০১৩ ইং তারিখ একটি আলচোনা করি। উক্ত আলোচনায় নির্ধারিত হয়, ২০/০১/২০১৩ ইং তারিখ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সামনে অবস্থান করা হবে ও একটি আন্দোলনের মঞ্চ তৈরি করা হবে এবং ঐ মঞ্চ থেকেই আমাদের দাবী আদায়ের আন্দোলন পরিচালিত হবে। ২০/০১/২০১৩ইং তারিখ বোর্ডের সামনে অবস্থান করা হয়। কিছু কুচক্রী কলেজ মালিক ও বোর্ডের কর্মকর্তার ইন্ধনে পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ন অবস্থানে গুলি ও কাদুনি গ্যাস নিক্ষেপ করে। রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হন সংগঠনের সভাপতি মোঃ ইমান উদ্দিন ডালিম , বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোঃ বেলাল হোসেনসহ নাম না জানা আরো অনেকেই (প্রায় ১০০-১৫০জন)। পুলিশের শর্টগানের গুলিতে গুরুতর আহত হন সংগঠনের অন্যতম কার্যকরি সদস্য ইমরান হোসেন। পুলিশ ১২ জনকে গ্রেফতার করে। পরে ১০ জনকে শর্তস্বাপক্ষে ছেড়ে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পরিষদের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক (সাবেক প্রচার সম্পাদক) মোঃ ফয়সাল হোসেন ফরহাদ ও বাপ্পিকে পুলিশ অমানষিক নির্যাতন করে ও মিথ্যা মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে দেয়।

গ্রেফতারকৃত প্রচার সম্পাদক (বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক) মোঃ ফয়সাল হোসেন ফরহাদ (বামে) ও বাপ্পি (ডানে)
তারা ২৫/০১/২০১৩ ইং তারিখ জামীনে মুক্তি পায়। তারা মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও আন্দোলন শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধীদপ্তরের নিয়োগের বিরুদ্ধে মহামান্য উচ্চ আদালতে মামলা করা হয়। ফলাফল হিসাবে মহামান্য উচ্চ আদালত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগটি স্থগিত করে দেন। যা বর্তমানেও স্থগিত আছে। আমাদের আন্দোলন ও উচ্চ আদালতের আদেশের কারনে সাইফুদ্দিন নিউরোসাইন্সেস ইন্সটিটিউ ও হাসপাতালে সরকারি চাকুরি পেয়েছে।
কোন আমরা সরকারি চাকুরি হতে বঞ্চিত?
আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন বর্তমানে যে সকল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় সেগুলোতে শর্ত হিসাবে নিচের কথা গুলো উল্ল্যেখ করা থাকে।
১। ফার্মাসিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষগত যোগ্যতা হিসাবে ফার্মেসী কাউন্সিল হতে রেজিষ্ট্রেশনকৃতদের আবেদন করতে বলা হয়। যেহেতু বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড হতে যারা ফার্মাসী বিষয়ে পাশ করেছেন তারা ফার্মেসী কাউন্সিলের রেজিষ্ট্রেশনকৃত না সেহেতু তারা আবেদন করতে পারবেনা।
২। যারা পেশেন্ট কেয়ার (নার্সিং) হতে পাশকৃত তাদের নার্সিং কাউন্সিল কর্তৃক রেজিষ্ট্রেশনকৃত না।
৩। যারা ডেন্টাল হতে পাশকৃত তাদের বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল হতে রেজিষ্ট্রেশনকৃত না।
৪। যারা ল্যাবরোটেরী মেডিসিন, ফিজিওথেরাপী, রেডিওলোজী এন্ড ইমেজিং হতে পাশকৃত তারা স্বাস্থ্য অধীদপ্তরের অনুমোদিত না।
বর্তমান আশংকাঃ
বর্তমানে ২০১৩ ইং সালের নিয়োগ স্থগিত আছে। কতদিন স্থগিত থাকবে তার কোন ঠিকঠিকানা নাই। এইভাবে স্থগিত হতে হতে দেখা যাবে আমাদের সরকারি চাকুরি করার বয়স শেষ, কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। আবার নতুন একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে , স্বাস্থ্য অধীদপ্তর আমাদের সম্পূর্নরূপে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য ও রায় তাদের পক্ষে নেওয়ার জন্য নিল নকশা একেছে। আমরা গোপন সূত্রে জানতে পেয়েছি আমরা যাদি কোন পদক্ষেপ গ্রহন না কারি তাহলে ২০১৩ সালের স্থগিত নিয়োগ ৯৮% স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষেই যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদের সংগঠন হতে পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছে তারা রায় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিকে চাকুরিরত কারিগরি মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দেওয়া হবে।
এখন আপনারাই জবাব দিন আমাদের ভবিষ্যত কি? আমাদের বাবা মা আমাদের আমাদের পথ চেয়ে আছেন আমরা ডিপ্লোমা পাশ করে তাদের মুখ উজ্জল করব। কিন্তু যখন দেখা যাবে আমরা কোন চাকুরি করতে পারতেছিনা তখন কি হবে আমাদের ভবিষ্যত? কোথায় থাকবে আমাদের বাবা মার স্বপ্ন। আসলেই কি আমরা পারব আমাদের বাবা মার মুখ রক্ষা করতে? আমরা কি পারব আমাদের বাবা মার কষ্টার্জিত টাকা পয়সা সঠিক মূল্য দিতে?
আমাদের করনিয়ঃ
আবারও আমাদের অতীতের আন্দোলনে মত আন্দোলন করেত হবে। আর আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি কারিগরি মেডিকেল টেকনোলজিষ্টদের একতাবদ্ধ হতে হবে। সবাইকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট পরিষদ এর সদস্য হতে হবে। প্রতিটি জেলায় জেলা কমিটি গঠন করতে হবে। আমরা অতীতে আন্দোলন করেছি সফল হয়েছি। আশাকরি এবারও সফল হব।