বাংলার কন্ঠস্বরঃ সরকারে থেকেও একের পর এক সরকারের সমালোচনা করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মন্ত্রিসভা থেকে তার দলের সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়ে প্রায়ই কথা বলেন তিনি। কিন্তু সরকারি দায়িত্ব কবে ছাড়বেন বা আদৌ ছাড়বেন কিনা, সে বিষয়ে তিনি একেবারে চুপ থাকছেন বরাবরই।
সূত্রে মতে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে এরশাদের মাসিক বেতন ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ১০০ টাকা, যা সম্পূর্ণ করমুক্ত। জাতীয় সংসদ ভবনে একটি কার্যালয়ও পেয়েছেন তিনি। বিশেষ দূত হিসেবে বসানো হয়েছে তার নামফলকও। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা, একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব এবং দুজন অফিস স্টাফসহ পাচ্ছেন বিশেষ নিরাপত্তা সুবিধা ও পুলিশ প্রটোকল। জাতীয় পতাকাবাহী সরকারি পাজেরো গাড়ি ব্যবহার করছেন। এছাড়াও বিদেশ ভ্রমণ, ভ্রমণের জন্য বিশেষ ভাতা, ইনস্যুরেন্স, নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা, দেশ-বিদেশে যোগাযোগের জন্য বাসাভাড়া ও অফিসের টিঅ্যান্ডটি ফোন এবং হাতে রাখা মোবাইল ফোনের বিল এসবই চলছে সরকারি খরচে। সবকিছু মিলিয়ে তার পেছনে প্রতি মাসে সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা।
২২ ডিসেম্বর বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট যেভাবে সকাল ৯টার মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল, আমার আশঙ্কা পৌর নির্বাচনও তেমন হবে। আওয়ামী লীগ অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাওয়ায় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা আর নেই। উনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) ওনার দায়িত্ব ভুলে গেছেন। এটা তো চাকরি নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন করা সাংবিধানিক দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একবার সুষ্ঠু নির্বাচন দেন, দেখেন কী হয়!
প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রদূত এরশাদ গত ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির মহানগর শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে বলেন, গণতন্ত্র এখন ১০০ ফুট মাটির নিচে সমাহিত হয়েছে। গণতন্ত্র মানে কি? ভোট দেওয়া, কথা বলা, লেখার ও বাঁচার অধিকার। কিন্তু সেই অধিকার নেই। সাংবাদিকরা অনেক কিছু রেকর্ড করে নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু লিখতে পারবেন না। কণ্ঠ রুদ্ধ, কলম রুদ্ধ ও বাক রুদ্ধ।
গত ১৫ নভেম্বর নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজ অডিটোরিয়ামে জেলা জাতীয় পাটির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্যে এরশাদ বলেন, দেশের কোনো মানুষের নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিন মানুষ মরছে, গুম হচ্ছে, রাস্তায় লাশ পড়ে থাকছে, নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয় এসব ঘটনা পরিবারের সদস্যরা জানে না। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় তা কেউ জানে না। লাশ পড়ে থাকবে। পরিবারের সদস্যরা কাঁদবে এরপর কাহিনি শেষ।
এরশাদ বলেন, গণতন্ত্র বন্দী ছিল। গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখন দেশে কি গণতন্ত্র? সরকারের বিরুদ্ধে কারও কথা বলার সাহস আছে কি? কারও সাহস নেই। আমার ভয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করা হয়েছে। কোথায় সেই গণতন্ত্র?

সরকারে থেকে সুবিধা নিয়েও সমালোচনায় ব্যস্ত এরশাদ
Total Page Visits: 70 - Today Page Visits: 2