ঢাকা: রাজধানীর আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর যে তিন জঙ্গির স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে, তারা নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তিনজনই বিয়ের আগে জানত তাদের হবু স্বামীরা উগ্রপন্থি। জেনেশুনেই তারা জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ তিন নেতাকে বিয়ে করে। তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, স্বামীরা যে উগ্রপন্থি এই বিষয়টি তিনজনই পরিবারের সদস্যদের কাছে গোপন রাখে।
তাদের মধ্যে জেএমবির নারী শাখায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল চকলেট ওরফে বাশারুজ্জামান ওরফে বাশারুল্লাহর স্ত্রী শারমিন ওরফে শায়লা আফরিন (২৫) ও সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা গাইবান্ধার বাসিন্দা তানভীর কাদেরী ওরফে করিম ওরফে জামসেদ ওরফে শিপারের স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা (৩৫)। সংগঠনের কাজে পিছিয়ে ছিল না নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী প্রিয়তি ওরফে আফরিন (২৫)। বাশারুল্লাহর শ্বশুর জানতেন, মেয়ে ও জামাই আমেরিকায় রয়েছে। তারা যে গোপনে উগ্রপন্থায় জড়িয়েছে এটা স্বজনের জানা ছিল না। এ ছাড়া কাদেরী তার পরিবারকে জানিয়েছিল, সে সপরিবারে মালয়েশিয়া যাচ্ছে।-খবর সমকালের।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আজিমপুরের ঘটনায় করা মামলায় কাদেরীর ছেলে তাহরীম কাদেরী ওরফে রাসেল (১৩), গ্রেফতার তিন নারী জঙ্গিসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলায় মেজর (অব.) জাহিদুলের স্ত্রীকে আসামি করা হয়নি।
গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর আটক এই তিন নারী জঙ্গি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ধীরে ধীরে তারা সুস্থ হয়ে উঠছে। পুরোপুরি সুস্থ হলেই পুলিশ তাদের ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এদিকে জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের ৭ বছর বয়সের মেয়ে ও বাশারুল্লাহর ১০ মাস বয়সের শিশুসন্তানকে পরিবারের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। এখন কেবল কাদেরীর ১৪ বছর বয়সের ছেলে গাজীপুরের কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। আজিমপুরের ঘটনায় করা মামলায় কাদেরীর ছেলেকে রিমান্ডে চায় পুলিশ। ওই আস্তানায় আলামত হিসেবে পাওয়া তিনটি পাসপোর্ট, ডায়েরিসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, চকলেট ওরফে বাশারুল্লাহ জেএমবির দুর্ধর্ষ একজন সদস্য। সে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। প্রেমের সম্পর্কের পর বছর দুয়েক আগে ইডেন কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস বিভাগ থেকে পাস করা শারমিনকে বিয়ে করে বাশারুল্লাহ। বিয়ের আগে থেকে শারমিন জানত, তার স্বামী উগ্রপন্থি। স্বামীর হাত ধরে সেও উগ্রপন্থায় জড়ায়। বাশারুল্লাহর গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে। তার শ্বশুরের বাসা কলাবাগানে।
বিয়ের পর মেয়ের জামাইয়ের জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি জানতে পেরে এই বিয়ে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেন বাশারুল্লাহর শ্বশুর। তিনি কিছু দিন মেয়েকে কলাবাগানের নিজ বাসায় নিয়েও রাখেন। এরপর বাশারুল্লাহ শ্বশুরের বাসায় গিয়ে জানায়, স্বামী-স্ত্রী মিলে তারা আমেরিকায় চলে যাচ্ছে। আমেরিকায় যাওয়ার কথা শুনে আবারও মেয়েকে বাশারুল্লাহর হাতে দেওয়া হয়। শ্বশুরপক্ষকে বিশ্বাস করাতে দেশে বসেই বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের নম্বর কোড উঠিয়ে স্ত্রী পক্ষের লোকজনকে ফোন করে সে। দীর্ঘ দিন বাশারুল্লাহ ও তার স্ত্রী যোগাযোগ না করে হঠাৎ একদিন শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানায়, ‘তারা আমেরিকা থেকে এসেছে।’ পরে আবার অনেক দিনের জন্য স্বামী-স্ত্রী মিলে উধাও হয়ে যায়। জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর শারমিন ধরা পড়লেও তার স্বামী বাশারুল্লাহকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। যে কোনো সময় তাকে আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।