ঢাকা: সাগর সকালে নীল, রাতে কালো। ভালো করে দেখলে আরো কত রং। গভীরেও বর্ণময় বৈচিত্র। ডুব দিলেই অন্য জগত, সীমাহীন সম্পদ আবিষ্কারের অপেক্ষা। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরেও রয়েছে ঐশ্বর্য। টেনে তুললে ফুলে ফেঁপে উঠবে দেশটা। পাল্টাবে অর্থনীতি।
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পলিমাটি জমছে বছরে ২০০ কোটি টন। টেনে আনছে নদী। সাগর যদি তেজ দেখিয়ে নদীতে ঢোকে তখন নোনা জলে ফসল নষ্ট হয় সত্য। দুর্যোগে ও সমুদ্র প্রকোপে ক্ষতি যতটুকু তার চেয়ে লাভ অনেক বেশি। খনিজ, জ্বালানি সম্পদ জমে বঙ্গোপসাগরের বুকের ভেতর সেটা আহরণ করে আনাটাই কাজ। যাকে বলে ‘ব্লু ইকোনমি’ বা নীল সমুদ্রের অর্থনীতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বঙ্গোপসাগরের সম্পদ কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় রয়েছে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম। এ ছাড়া ১৩টি জায়গায় রয়েছে সোনার চেয়ে দামি বালি। যাতে মিশে ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট। আর অগভীরে জমে রয়েছে ‘ক্লে’ যার পরিমাণ হিমালয়কেও হার মানায়। এখন এটা আহরণ করাটাই হচ্ছে আসল কাজ
বঙ্গোপসাগরের জমাকৃত ‘ক্লে’ দিয়ে তৈরি হয় সিমেন্ট। এই ক্লে হাতে পেলে সিমেন্ট কারখানাগুলোকে কাঁচামালের জন্য আর বসে থাকতে হবে না। তেল-গ্যাসের সন্ধানও মিলেছে। চেষ্টা করলে তাও আয়ত্তে আনা সম্ভব। দরকার শুধু তল্লাশি চালিয়ে তুলে আনা।
যদিও বিষয়টা খুব সহজ নয় আবার তেমন কঠিনও নয়। প্রযুক্তিগত উদ্যোগটা নিখুঁত হলেই হয়। কাজটা করতে বিদেশি কোম্পানিকে ব্লক ইজারা দেওয়া হয়েছে। তাদের আঠারো মাসে বছর। দেরি হওয়ার কৈফিয়ত ঠোঁটে মজুত।
বিদ্যুত্, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, ‘সমুদ্রে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, খনন, আহরণ বিশাল কারিগরী বিষয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে কাজটা করা জরুরি। ঠিকমত অনুসন্ধান, জরিপ চালাতে না পারলে জাতীয় সম্পদের অপচয় মাত্রা ছাড়াবে’।
তিনি বলেছেন, ‘২০১৯ সালের মধ্যেই সমুদ্র অর্থনীতিতে বিপ্লব আনতে হবে। দেরি হলে চলবে না। এটাও ঠিক, সমুদ্র সম্পদ পাতকুয়ার জল নয়। দড়িতে বালতি বেঁধে অবলীলায় টেনে তোলা যায় না, বিশেষজ্ঞরা সেটা বোঝেন।
তিনি আরো বলেছেন, ‘পাশের দেশ মায়ানমার বঙ্গোপসাগরে বড় গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। গ্যাস তোলাও চলছে নির্বিঘ্নে’।
বঙ্গোপসাগরের সীমানা নিয়ে বিরোধ ছিল তিন দেশের মধ্যে। ২০১২-তে মায়ানমার, ২০১৪-তে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর ভাগাভাগি সমস্যা মিটেছে।
বাংলাদেশের ভাগে যে অংশ পড়েছে তা বিশাল। ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। হাতে আছে ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অধিকার। চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩০৪ নটিক্যাল মাইল মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ, অপ্রাণিজ সম্পদের সার্বভৌম কর্তৃত্ব।
সম্পদশালী হয়েও কূপমণ্ডুক হওয়াটা কাজের কথা নয়। সমুদ্র মন্থন করে অমৃত তোলার মতো অনতিবিলম্বে তুলতে হবে যা বদলে দেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র।