রাজশাহীতে চুরির আট দিন পর নবজাতকটিকে গতকাল শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে চুরির সঙ্গে জড়িত নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর পুলিশ নিশ্চিত হয়, সাম্প্রতিক সময়ে গর্ভধারণের কোনো লক্ষণ তাঁর মাঝে নেই। তাঁকে মানব পাচার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী আমেনা খাতুন শিশু চুরির সঙ্গে জড়িত শাহীন আক্তার ওরফে শুভ্রার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা শেষে তিনি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে গর্ভধারণের কোনো লক্ষণ শাহীন আক্তারের শরীরে নেই। তারপর মানব পাচারের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। অপরদিকে বেলা দেড়টার দিকে আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে তাঁর মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
নগরের শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, প্রথম থেকে শাহীন আক্তার দাবি করে আসছিলেন, এই বাচ্চা তাঁর নিজের। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষার পর জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি শিশু চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন এবং চুরির জন্য কী কৌশল অবলম্বন করেন তা-ও বলেন। তিনি এ জন্য ‘ইন্ডিপেনডেন্ট ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট, মেটারনিটি মাদার কেয়ার, অনলি ফর নিডি ফ্যামিলি’ লেখা একটি প্যাড তৈরি করেন। এতে তিনি শিশুটির মা মুক্তি খাতুনের স্বাক্ষর নেন। এতে লেখা হয়েছে, ‘অভাব অনটনের সংসারে গর্ভাবস্থায় তিনি খুব বিপদগ্রস্ত। ডেলিভারি খরচের কোনো টাকা তাঁদের কাছে নেই। এমতাবস্থায় তাঁকে আর্থিক সহায়তা দিতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো আপত্তি নাই।’
ওসি জানান, ডেলিভারি খরচ দেওয়ার নামে প্রতিষ্ঠানের ‘রেজল্যুশন’ দেখিয়ে কৌশলে ১০০ টাকা মূল্যমানের একটি স্ট্যাম্পে শিশুটির মা ও বাবার স্বাক্ষর নেওয়া হয়, যাতে পরে এই স্ট্যাম্পে তিনি ইচ্ছামতো বক্তব্য লিখে নিতে পারেন। শাহীন আক্তারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তাঁর বাসা থেকে পুলিশ তাঁর ভুয়া প্রতিষ্ঠানের প্যাড ও স্ট্যাম্প উদ্ধার করে।
শাহীন আক্তার যে বাসায় থাকেন সেই বাসার মালিক আমিরুল ইসলাম জানান, গর্ভাবস্থায় নারীরা যে রকম ঢিলেঢালা পোশাক পরেন, তিনি সেই ধরনের পোশাক পরেছেন। পাড়ার সবাই জানে তিনি সন্তানসম্ভবা। শাহীন আক্তারের মেয়ে পাশের একটি বিদ্যালয়ে পড়ত। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজিনা ফারুক বলেন, শাহীন আক্তার কয়েক দিন আগে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের মিষ্টি খাইয়েছেন। তখন বলেছেন, এই জানুয়ারি মাসেই তাঁর ছেলে সন্তান হবে।
যে হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটি চুরি হয়েছে সেটি চালায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, দরিদ্র রোগীদের তাদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা। অথচ এই পরিবারটির সঙ্গে তারা ছয় হাজার টাকার চুক্তি করেছিল। পরিবারটির এই টাকার কোনো জোগাড় ছিল না। শাহীন আক্তার ওরফে শুভ্রা এই সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। হাসপাতালে সহযোগিতার এক ফাঁকে তিনি বাচ্চা নিয়ে কেটে পড়েন।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ বলেন, ‘ওরা যে গরিব, তা তাঁদের মাঠকর্মী প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাননি।’
১৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজশাহী নগর মাতৃসদন হাসপাতাল থেকে প্রসবের ছয় ঘণ্টার মাথায় শিশুটি চুরি হয়। সিসিটিভির ছবি দেখে গত শুক্রবার দুপুরে নগরের বাশার রোড এলাকার সপ্তর্ষি নামের একটি বাসা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির সম্পৃক্ততার অভিযোগে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাহীন আকতার শুভ্রার নাম প্রকাশিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করেছে। সেই সঙ্গে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গতকাল একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ছয় সদস্যবিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক এম এ কাইউম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

শিশু ফিরে গেল মায়ের কোলে
Total Page Visits: 30 - Today Page Visits: 1