নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অলিখিত রাজনৈতিক প্রথা হিসেবে বিভিন্ন সময়ে হোন্ডা বা গাড়ির শোডাউন বেশ লক্ষণীয়। এবার এই রেওয়াজে ভিন্নতা প্রদর্শন করলেন বাউফলের সুজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর হাওলাদার। প্রায় শতাধিক হোন্ডা সহ তিন থেকে চারশত লোক নিয়ে এলাকায় শো ডাউন করলেন তিনি। আর শো ডাউন করবেন নাইবা কেন? তিনি তো রাজনৈতিক নেতা, তিনি ইউনিয়ন বি এন পি’র সভাপতি। গত ৬ই মার্চ বৃহস্পতিবার বেলা আনুমানিক ০২.০০ মিনিটের দিকে বাউফল উপজেলার নারায়নপাশায় শতাধিক হুন্ডাযোগে দলীয় শ্লোগান দিয়ে এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন তিনি। এ সময় জাহাঙ্গীরের সাথে থাকা লোকজনদের দলীয় বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে। যেমন – ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর ভাইকে শুভেচ্ছা, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর ভাইকে শুভেচ্ছা, জাহাঙ্গীর ভাইয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম ইত্যাদি। যদিও বিষয়টি ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বাউফল উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ নবী আলী হাওলাদার এর ছেলে অটো চালক সুজন হাওলাদারকে চাঁদার দাবিতে নৃশংস ভাবে দিন-দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে হত্যা করে এই জাহাঙ্গীর হাওলাদার এবং তার সঙ্গীরা। মামলার এজাহারে নিহতের বাবা নবী হাওলাদার উল্লেখ করেন, গত পাঁচ ই আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরপর তার বড় সন্তান অটোচালক সুজনের কাছ থেকে প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন আসামি জাহাঙ্গীর হাওলাদার। চাঁদা দিতে অশ্বিকৃতি জানালে সুজনকে আর অটো চালাতে দিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেয় জাহাঙ্গীর। ঘটনার দিন চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ বিকেল পাঁচটা ৩০ মিনিটের দিকে বাউফল থানাধীন কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়ণপাশা এলাকায় মিজানুরের ফার্মেসীর সামনে জাহাঙ্গীর হাওলাদার সহ প্রায় ২০-২৫ জনের সঙ্ঘবদ্ধ চক্র অটোচালক সুজনের গতি রোধ করে চাঁদা দাবি করে। সুজন চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার জানালে মমিনুল মিরাজ, মুরসালিন, মনজুর সরোয়ার, রাসেল সহ অন্যান্য আসামিরা অটোচালক সুজনকে ধারালো অস্ত্র, ছুরি, রামদা, লোহার পাইপ দিয়ে উপর্যুপরি জখম করে দ্রুত ঘটনা স্থল ত্যাগ করে। ঘটনা পরবর্তীতে সুজনের রক্তাক্ত নিথর দেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় জনতা বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার সুজনের নিথর দেহকে মৃত বলিয়া ঘোষণা দেন।
অটো চালক সুজনহত্যার প্রেক্ষিতে তার বাবা নবী আলী হাওলাদার বাদী হইয়া বাউফল থানায় প্রায় ২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের এর পরপর বাউফল থানা পুলিশ মামলার এক নম্বর আসামি জাহাঙ্গীর হাওলাদার সহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত আসামিদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাউফল উপজেলার একজন ব্যবসায়ী জানান চলতি মাসের ৪ তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক জামিন পান মামলার এক নম্বর আসামি জাহাঙ্গীর। যদিও আসামী জাহাঙ্গীর জানান, পটুয়াখালী আদালত থেকেই তার জামিন মঞ্জুর হয়েছে। পটুয়াখালী জেলা কারাগার থেকে জামিন পেয়ে জাহাঙ্গীর গত বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে তার নিজ এলাকায় হোন্ডার বহর নিয়ে শো ডাউন করেন যাহা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল। আসামিদের এহেন বীরদর্পে হোন্ডার বহর দেখে নিহতের বাবা মোঃ নবী আলী হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে দেশের আইনের কাছে আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
এদিকে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আদালত থেকে হত্যা মামলার আসামি জাহাঙ্গীর জামিন প্রাপ্ত হয়ে এলাকায় শোডাউনসহ বীরদর্পে প্রত্যাবর্তন দেখে হতভম্ভ এলাকার সাধারণ মানুষ! গত বৃহস্পতিবার বাউফলের কনকদিয়ার ‘ টক অফ দা টাউন ‘ ছিল সুজন হত্যা মামলার আসামি জাহাঙ্গীরের হোন্ডার বহর নিয়ে শোডাউন।
যদিও এই হোন্ডার বহর সহ শোডাউন ঘিরে জাহাঙ্গীরকে দেখা যায় উৎফুল্লময়, যেন তিনি কোন রাজ্য জয় করে তার বাহিনী নিয়ে ফিরে এসেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, যেদিন সুজন হত্যা হয় সেদিন তিনি এলাকাতেই ছিলেন না। এমনকি পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা মামলার আসামি করা হয় বলে জানান জাহাঙ্গীর। বিগত ৩০ বছর যাবত তিনি কনকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি বলে ও দাবি করেন।
এ বিষয়ে বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীরের শোডাউন এর বিষয়ে আমরা শুনেছি, থানা পুলিশের দায়িত্ব আমরা পালন করেছি তবে আদালত কোন আসামীকে জামিন দিবে আর জামিন দিবে না সেটা আদালতের এখতিয়ার।।