নিজস্ব প্রতিবেদক
বরিশালে ব্রীজ নির্মাণের নামে খালে বাঁধ দেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। একইসাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরাও। সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের মধ্য কড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গত ৩ বছর পুর্বে স্বৈরাচারি আওয়ামী সরকারের সময়ে ঝালকাঠির জি.এস জাকির নামের এক যুবলীগ নেতা এলজিইডির মাধ্যমে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকায় বিদ্যালয় সংলগ্ন হাজ্বীর খালে একটি ব্রীজ নির্মাণে ঠিকাদার হিসেবে নিযুক্ত হন। পুর্বের একটি স্টিল ব্রীজ ভেঙ্গে সেখানে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই নির্মাণ কাজ স্থগিত করে রাখেন তিনি। এছাড়া নির্মাণে নিন্মমানের সামগ্রী ও বিভিন্ন অনিয়মের স্থানীয়দের রোষানলেও পড়েন ওই ঠিকাদার। এনিয়ে স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতিও দেখায় ঐ যুবলীগ নেতার বাহিনী।
স্থানীয়রা জানান, শুরুর দিকে এখানে থাকা স্টিল ব্রীজটি ভেঙ্গে কাজ শুরু করেন ঠিকাদার যুবলীগ নেতা জাকির। কিন্ত কিছুদিন যেতে না যেতেই তা বন্ধ করে রাখেন। নির্মাণের সময়ে খালের মাঝে একটি বাঁধ দেয়া হয়। আর অদ্যবধি সেই বাধ সেখানে রয়েছে। এছাড়া কোন ব্রীজও নির্মাণ হয়নি। আর এতে করে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা হওয়ায় কৃষি জমিতে সেচ দেয়া যাচ্ছে না । ফলে ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন এলাকার কৃষকরা ।
কয়েকজন কৃষক জানান, ব্রীজতো নির্মাণ হয়নি, উল্টো খালের মাঝে বাঁধ দিয়ে রাখায় পানি ঠিকভাবে ক্ষেতে পৌছাচ্ছে না। বীজ বপনও করা যাচ্ছে না। এতে আমাদের প্রায় ২০ হাজার টাকা এ বছর লোকসান গুনতে হয়েছে। অবিলম্বে খালের বাধটি অপসারণ ও ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানান তারা।
সুমন নামের স্থানীয় এক যুবক জানান, ৩ বছর পুর্বে প্রথম দিকে ব্রীজ নির্মাণে বালু, সিমেন্ট ও রড আনা হয়েছিল । কিন্ত দৃশ্যমান কোন কাজ না করায় এখন তা পড়ে পড়ে বিনষ্ট হচ্ছে। এছাড়া ব্রীজ নির্মাণ না করায় একটি অস্থায়ী সাঁকো বানিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। তিনি আরও জানান, প্রতিনিয়ত এই সাঁকো দিকে ৫ থেকে ৭ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এর মধ্যে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। একদিকে যেমন ব্রীজ ছাড়া ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হয়, অন্যদিকে খালের মাঝে বাঁধের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় ফসলী জমিতেও সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। অতিদ্রুত ব্রীজের নির্মাণ কাজ ও পানি প্রবাহের অবাধ চলাচলের দাবি জানান তিনি।
এদিকে এমন বন্দিদশা থেকে উত্তোরণে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কাজী মোঃ জামাল হোসেন নামের একজন কৃষক। তিনি জানান, ব্রীজ নির্মাণের জন্য খালের মাঝে বাধ দেয়ায় পানি চলাচলে বিঘ্নতা হচ্ছে। ঐ খালটিই হচ্ছে একমাত্র মাধ্যম যার মাধ্যমে ঐ এলাকার ফসলী জমিতে পানি পৌছে। বাঁধ দেয়ায় ফসল উৎপাদন ব্যহতসহ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে আশাপাশের মানুষ । এ-অবস্থায় বাঁধটি অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রশিদ জানান, ইউএনও মহোদয় খালের বাধ অপসারণে নির্দেশ দিয়েছেন। দ্রুত আমি শ্রমিক নিয়ে বাধটি অপসারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী মাইনুল মাহমুদ জানান, দ্রুত বাধটি অপসারণে চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। এছাড়া ব্রীজ নির্মাণেও উদ্যোগ গ্রহণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।