নিজস্ব প্রতিবেদক
নারীদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। রাষ্ট্রে নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার ও গুরুত্ব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নারী পক্ষের উদ্যোগে ও ‘অধিকার এখানে, এখনই’ প্রকল্পের আওতায়’ তরুণ প্রজন্মের সফলতার গল্প’ শীর্ষক দিনব্যাপী সম্মেলনে প্রধান অতিথী হিসেবে একথা বলেন তিনি।
এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, বরিশালে নারী নির্যাতনের হার ২৬.৬ শতাংশ, যা উদ্বেগজনকভাবে জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি। এ জেলায় নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্য। আর দারিদ্র্যতার ফলেই বাল্যবিবাহের হার বেড়ে যাচ্ছে, যা নারী নির্যাতন চক্রকে আরও জটিল করে তুলছে। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় অনেক মেয়ের শিক্ষাজীবন থেমে যায়, তারা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল থেকে নির্যাতনের ঝুঁকিতে পড়ে। তাই নারীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য হলো এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা শুধু একজন নারীর শারীরিক নয়, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতার সঙ্গেও গভীরভাবে সম্পর্কিত। প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক পুষ্টি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপদ মাতৃত্ব অপরিহার্য। কৈশোরকাল থেকেই নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে তারা মাসিক, গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদান এবং পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এ-ছাড়া সমাজে প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কুসংস্কার ও লজ্জাবোধ দূর করা জরুরি, যাতে নারীরা সহজে চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতে পারেন। নারী প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকলে পরিবার ও সমাজ উভয়ই সুস্থ ও সমৃদ্ধ হতে পারে।
এদিকে সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক সামিয়া আফরিন। এরপর তথ্যচিত্রের মাধ্যমে প্রকল্পের আওতাভুক্ত আট জেলার কার্যক্রম, অর্জন, চ্যালেঞ্জ এবং তরুণ প্রজন্মের সফলতার গল্প তুলে ধরা হয়। বরিশাল জেলার কার্যক্রম ও অর্জনও বিশেষ তথ্যচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
নারীপক্ষ জানায়, ‘অধিকার এখানে, এখনই’ প্রকল্পের মাধ্যমে নেতৃত্ব বিকাশ, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে ‘তারুণ্যের কণ্ঠস্বর’ একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। বরিশালে এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করেছে বরিশাল মহিলা কল্যাণ সংস্থা (বিএমকেএস) সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী তরুণ-তরুণীরা তাদের পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি, বয়সন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, অধিকার সুরক্ষা এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। নারীপক্ষ ২০১৭ সাল থেকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী, তরুণ ও যুবদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত করা এবং সমাজে লৈঙ্গিক সমতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সহায়তা করছে।
কর্মশালায় নারীপক্ষ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শিরীন পারভীন হক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেহেরুন নাহার মুন্নী, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রিন্স বাহাউদ্দীন তালুকদার, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হাসান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের শফিকুল ইসলাম, কাওছার পারভিন (পরিচালক, বিএমকেএস) তারুণ্যের কন্ঠস্বর থেকে ইফাত জাহান বন্যা (বাকেরগঞ্জ উপজেলা তারুণ্যের কন্ঠস্বর এর সমন্বয়কারী), দূর্বার নেটওয়ার্ক এর সদস্য, নারী জোটের সদস্যবৃন্দ, জেলা-উপজেলা থেকে বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিস্কুল শিক্ষক ও স্কুলের হেলথ ক্লাবের সদস্যবৃন্দ, তারুণ্যের কন্ঠস্বর প্ল্যাটফর্ম জেলা উপজেলার সদস্যবৃন্দসহ বরিশাল সদর, বাকেরগঞ্জ ও বাবুগঞ্জ উপজেলার ১০০ জন তরুণ এবং সাংবাদিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। প্রকল্পটির বরিশাল এর ফেলো ময়ুরি আক্তার টুম্পা সকলকে শুভেচ্ছা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন তরুণ্যের কণ্ঠস্বর বরিশাল জেলার সদস্য মারিয়া সাবরিন এবং ফাহিম মাহমুদ।