মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি গ্রামে বিএনপির দুই গ্রুপের বিরোধের জেরে গুলিতে তুহিন দেওয়ান (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রবিবার (২ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত তুহিন বেহেরকান্দি গ্রামের সেলিম দেওয়ানের ছেলে।
মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির বিভাজিত দুটি গ্রুপের পূর্ববিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এ ঘটনার পর মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি ও মুন্সীকান্দি গ্রামের বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এতে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক
বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের চাচাতো ভাই আকাশ দেওয়ান সাংবাদিকদের বলেন, রবিবার রাতে তুহিন বাসা থেকে হাঁটার জন্য বাইরে বের হয়। এ সময় মুন্সীকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রতিপক্ষ মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা উজির আলী ও আওলাদ গ্রুপের অনুসারী লিটন বেপারীর নেতৃত্বে পেছন থেকে তুহিনকে গুলি করা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, নিহত তুহিন মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদ মোল্লা ও বিএনপি নেতা আতিক মল্লিকের অনুসারী। স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে আগে থেকে বিরোধ ছিল।
পুলিশ ও গ্রামবাসী জানায়, আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। এর জের ধরে দুই গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। রবিবার রাতে তুহিনকে দেখতে পেয়ে লিটন বেপারী পেছন থেকে গুলি চালায়। গুলির শব্দ ও তুহিনের চিৎকারে গ্রামবাসী গিয়ে উদ্ধার করে রাত ১০টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রান্ত সরদার বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার পিঠে ও ঘাড়ে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে।
নিহত তুহিনের মা লাকী বেগম হাসপাতালে আহাজারি করে বলেন, ‘লিটন বেপারী আমার নিষ্পাপ ছেলেকে গুলি কইরা মাইরা লাইছে। আমি তার ফাঁসি চাই।’
তুহিনের ভাই আক্কাস দেওয়ান বলেন, ‘রাতে বাড়ি ফেরার পথে আগে থেকে ওত পেতে থাকা লিটন বেপারী পেছন থেকে গুলি করে আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। লিটন বিএনপি নেতা উজির আলী গ্রুপের সন্ত্রাসী।’
এ ঘটনার পর পর অভিযুক্ত লিটন বেপারী পালিয়ে গেছে। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
বিএনপি নেতা উজির আলী বলেন, ‘আমি ঢাকায় থাকি। গ্রামে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই। আমি এর সঙ্গে জড়িত নই।’
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। বর্তমানে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি ও মুন্সীকান্দি গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির সাংবাদিকদের বলেন, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত করলে বিষয়টি জানা হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।