নিজস্ব প্রতিবেদক // জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে সব ভুলে যাই, আওয়ামী লীগের শাসনামলের ওই ষোল বছর ভুলে গেছি। এবং জুলাই-আগস্টের ভয়াত্মক ওই ৩৬ দিনও ভুলে গেছি, এখন আমরা নতুন কিছু নিয়ে আছি। কিন্তু এই জবাব খুনি হাসিনা এবং তার দোসরদের দিতে হবে। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনে বরিশাল বিভাগের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে শনিবার অপরাহ্নে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সাক্ষাৎকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তরুণ সমন্বয়ক আলম বলেন, খুনি হাসিনা সারাজীবন শুধু নিজের পরিবারের গান গাইতে গাইতে ক্ষমতাটাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে রেখেছিলেন। যেখানে গেছেন, সেখানেই তার পরিবার নিয়ে কান্নাকাটি করেছেন। তার পরিবারের ১৮ জনই শুধু মানুষ, আর এই দুই হাজার জন মানুষ না! এদেরকে খুন করার সময় তার বুকটা একটুও কাঁপেনি। আজ আমার যে ভাই শহীদ হয়েছে, যে বোন শহীদ হয়েছে, সেই শহীদ পরিবারের বাবা-মা ভাই বোনকে আমরা কীভাবে সান্ত্বনা দেব?
বিদগ্ধ সারজিস বলেন, খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসনের প্রশ্ন, তাদের পক্ষে কারও সাফাই গাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও আমরা এটা করতে দেবো না। খুনি হাসিনা সারাজীবন ১৯৭৫ সালের গল্প বলে ক্ষমতাকে সবসময় সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন। এখন তিনি দুই হাজার মানুষকে কীভাবে খুন করলেন? তিনি যদি দরদ বোঝেন তাহলে এ খুনগুলো কীভাবে করতে পারেন? যে রাজনৈতিক প্লাটফর্মকে সামনে রেখে তারা এ কাজগুলো করেছে, তাদের কোনো অধিকারই নেই এই বাংলাদেশে চলার।
সারজিস আলম আরও বলেন, সবার কথা এখানে বলতে পারছি না। কিন্তু সবার আলাদা কষ্ট-ব্যথা আছে, এগুলো বলার মতো না। আবার সবাই বলতেও পারেন না, এমনকি অনেকে প্রকাশ করতে পারেন না। আমার অনেক বোন আছে যাদের বিয়ে হওয়ার কয়েকদিন পর স্বামী হারিয়েছে, তাদের সারাজীবন কীভাবে কাটবে? যে নবজাতক পৃথিবীতে আসার আগে জানতই না সে তার বাবার মুখ কোনোদিন দেখবে না, সে জানতই না কোনোদিন তার বাবা তাকে কোলে নিতে পারবে না। সে কাউকে বাবা বলে ডাকতে পারবে না, ওর কী দোষ ছিল?
তরুণ সারজিস বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে সব ভুলে যাই, আওয়ামী লীগের শাসনামলের ওই ষোল বছরও ভুলে গেছি, আমরা ওই ৩৬ দিন ভুলে গেছি, এখন আমরা নতুন কিছু নিয়ে আছি। কিন্তু এই জবাব খুনি হাসিনাকে দিতে হবে, খুনি হাসিনার দোসরদের জবাব দিতে হবে। আর এই বিষয়গুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত একটি যৌক্তিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই বাংলাদেশে তাদের পুনর্বাসনের কথা যারা বলে, আমরা মনে করি খুনি হাসিনার মতো তারা আরেক ধরনের ক্ষমতা পিপাসু লোভী। এই বাংলাদেশে তাদের বিচার হওয়ার প্রশ্নে তাদের একটা কথা হওয়া উচিত- তাদেরকে পুনর্বাসনের প্রশ্নে তাদের পক্ষে কারও সাফাই গাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা এটা আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও করতে দেবো না।
গণঅভ্যুত্থানে নিহত বরিশাল বিভাগের শহীদ ৭৯ জনের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। শনিবার বেলা ১২টা থেকে প্রত্যেক শহীদ পরিবারের হাতে পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।’