বিতর্কিত ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত। নেতৃত্বে আসছে পদবঞ্চিত-ত্যাগি-শিক্ষিতরা।
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশাল বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে কৌশলী পথে হাঁটছেন মহানগরের শীর্ষ নেতৃত্ব মনিরুজ্জামান ফারুক এবং জিয়া উদ্দিন সিকদার। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসনামলে হামলা-মামলাসহ ব্যাপক নির্যাতনের শিকার এই নেতৃত্ব তাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার আলোকে ওয়ার্ডপর্যায়ে ত্যাগি-পদবঞ্চিত এবং পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চাইছেন। প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে ইতিমধ্যে ওয়ার্ডপর্যায়ের বিতর্কিত কমিটিগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের দোসরদের সাথে সখ্যতা থাকাসহ আছে গুরুতর অভিযোগও। সরকার পতনের আগে ওয়ার্ডপর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী মাঠে না থাকলেও ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময় তারা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে দলের সুনাম নষ্ট করাসহ নিজেরাও বিতর্কিত হয়েছেন। অবশ্য এই বিতর্কিত অংশটি মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক এবং সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারকে স্থানীয় রাজনীতিতে কোনঠাসা করতে ষড়যন্ত্রের পথ বেঁচে নিয়েছে। এবং তাদের কেউ কেউ বর্ষীয়াণ রাজনীতিবিদ মজিবর রহমান সরোয়ারের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে শীর্ষ নেতাদ্বয়কে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে বিতর্কিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তবে এনিয়ে মোটে বিচলিত বা শঙ্কিত নন দুই নেতা মনিরুজ্জামান ফারুক এবং জিয়া উদ্দিন সিকদার। সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করাসহ নেতা তারেক রহমানের নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং ওয়ার্ড কমিটিতে যোগ্যদের স্থান দেওয়ার পথে এগিয়ে চলছেন, এতে কর্মীরাও খুশি।
ওয়ার্ডের ত্যাগি ও বঞ্চিত নেতাকর্মীরা জানান, বিগত সময়ে ওয়ার্ডপর্যায়ের নেতৃত্বসারিতে যে সকল নেতাকর্মী ছিলেন, বিশেষ করে সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসরদের সাথে সখ্যতা রাখার অভিযোগ ছিল। এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে মিলেমিশে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজিতেও লিপ্ত হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে অনেকে রাজপথে ভুমিকা রাখলেও বড় একটি অংশ ছিল নিরব-নিশ্চুপ। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পরে তারাই বড় নেতা হয়ে উঠেছে এবং বিতর্কিত নানান ঘটনায় জড়িয়েছে। ওয়ার্ডপর্যায়ে এই সংখ্যা অনেক দীর্ঘ বলেও জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়ে আলোচিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিলকিস জাহান শিরিন এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক যখন গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি ছিলেন, তখন অনেকে রাজপথে নামার সাহস না দেখালেও সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার তার কর্মীবাহিনী নিয়ে নিয়মিত নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন। এছাড়া ক্ষুব্ধ বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহরের চৌমাথা এলাকায় মহানগর বিএনপির দুই শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করাসহ বগিদা গিয়ে কুপিয়ে জখমও করেছিল। তাদের পাশপাশি যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিনও সমান্তরাল আন্দোলন চালিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, ৫ অগাস্টের পরে শীর্ষ নেতৃত্ব দল গোছানোর লক্ষে এগিয়ে চলছে দুর্বার, এরই মধ্যে সপ্তাহখানেক আগে এসেছে নেতা তারেক রহমানের নতুন এক নির্দেশনা। সেই নির্দেশনার আলোকে সারা দেশে ত্যাগি-পদবঞ্চিত এবং নিপিড়িতদের অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। এবং বিএনপির যে সকল নেতাকর্মীদের স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সাথে ন্যূনতম সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাদের কোনো ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিতেও নির্দেশনা দিয়েছেন। মূলত সেই নির্দেশনা পাওয়ার পরেই বরিশাল মহানগরের শীর্ষ নেতৃত্ব জোরেশোরে মাঠে নেমেছে, বাড়িয়েছেন সাংগঠনিক তৎপরতা। বিতর্কিতদের বাদ দিতে গত শুক্রবার রাতে ভেঙে দেওয়া হয় বরিশাল মহানগর বিএনপির আওতাধীন অন্তত ২৯টি কমিটি। মাসখানেক আগে ১৭ নং ওয়ার্ড কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, গত শুক্রবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর সম্মতিতে ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপরেও আলোচনায় আসে তাহলে কি ওয়ার্ডপর্যায়ে যেসকল বিতর্কিত নেতাকর্মীরা আছেন তাদের নেতৃত্বের ইতি ঘটতে যাচ্ছে? এবং পরবর্তীতে ওয়ার্ডে যে কমিটি হতে যাচ্ছে, তা কোন প্রক্রিয়ায় হবে এবং এতে কারা স্থান পেতে এনিয়ে বরিশাল রাজনৈতিক অঙ্গনে সরস আলোচনা চলছে।
সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশনা এসেছিল। পাশাপাশি ত্যাগি-নিপিড়িত-বঞ্চিত-শিক্ষিতদের ওয়ার্ড কমিটিতে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়। এই নির্দেশনা খোদ দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। মূলত নেতার নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষেই মহানগরের দুই শীর্ষ নেতৃত্ব মনিরুজ্জামান ফারুক এবং জিয়া উদ্দিন সিকদার দিন-রাত সমান্তরাল কাজ করে যাচ্ছেন। এতে দলীয় ঘরনার বিরোধী শিবিরের ঘুম হারাম হয়ে গেছে এবং ব্যক্তি স্বার্থ সংরক্ষণের ধান্ধায় অনেকে দুই শীর্ষস্থানীয় নেতাকে কোনঠাসা করে রাখার উপায়ান্ত খুঁজছেন।
অভিযোগ আছে, তারেক রহমানের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দুই নেতাকে চেপে ধরাসহ তাদের বিতর্কিত করতে বিএনপির হাইকমান্ডে অভিযোগও করা হয়েছে। যদিও এই বিষয়টি বেশিদূর আর গড়ায়নি। কারণ মনিরুজ্জামান ফারুক এবং জিয়ার আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা সম্পর্কে হাইকমান্ডও ভালো ভাবে অবগত। সুতরাং কোনো ষড়যন্ত্র করে তাদের চেয়ার লড়ানো সম্ভব হচ্ছে, তা নিশ্চিত হয়ে অনেকে আবার দুই নেতার পিছনে হাঁটতে শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ গোপন যোগাযোগও রক্ষা করে চলছেন। সবকিছু মিলিয়ে মনিরুজ্জামান এবং জিয়ার বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে বলা ভুল হবে না।
তবে নিজেদের মধ্যেকার বিভাজনের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে জিয়া উদ্দিন সিকদার বলছেন, ওয়ার্ডপর্যায়ের কমিটি হাইকমান্ডের নির্দেশনার আলোকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নেতা তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে, আগে দলে ত্যাগি-নিপিড়িত, বঞ্চিত এবং শিক্ষিতদের প্রাধান্য দিতে হবে। বরিশাল মহানগর বিএনপি সেই লক্ষে পৌছাতেই কাজ করছে। এতে অনেকে সকলের সহযোগিতাও পাওয়া যাচ্ছে।
অভিন্ন তথ্য দিয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানিয়েছেন, তাদের নেতার নির্দেশনার আলোকে ওয়ার্ড কমিটি গঠনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের মূল্যায়নের ভিত্তিতে যোগ্য এবং পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বকে কাউন্সিলের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে জোর গতিতে কাজ চলছে। খুব শিগগিরই প্রতিফলন দেখা যাবে।