1. faysal.rakib2020@gmail.com : admin :
  2. thelabpoint2022@gmail.com : Rifat Hossain : Rifat Hossain
নৈরাজ্যের ঝুঁকিতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা - বাংলার কন্ঠস্বর ।। Banglar Konthosor
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ১২:২৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরনাম :

নৈরাজ্যের ঝুঁকিতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা 

  • প্রকাশিত :প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৭০ 0 বার সংবাদি দেখেছে

বিশ্বের ৫০টি দেশের অংশগ্রহনে বিনিয়োগ সম্মেলন চলাকালেই গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাটের মত ঘটনা ঘটে।

এমন অবস্থায় বিনিয়োগ সম্মেলন আশার আলো দেখালেও সর্বশেষ ভাঙচুর, হামলা ও লুটপাটের ঘটনা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় হামলা, আগুন ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসব কারনে বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। আবার কিছু শিল্প কারখানা ধ্বংসযজ্ঞের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও নানা কারণে পারছে না।

৫ আগস্টের পর হামলা, ভাংচুরের পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষ, মালিকের পলায়ন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ও খেলাপি ঋণ শোধে অপারগতাসহ বিভিন্ন কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কেউ কেউ সংসদ সদস্য, মন্ত্রিপরিষদসহ সরকারের বিভিন্ন পদে ছিলেন। তাদের কেউ কেউ আত্মগোপন করেছেন। আবার কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হয়েছেন। গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয় বেঙ্গল গ্রুপের চেয়াম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেক্সিমকো গ্রুপ গভীর সংকটে পড়ে। বেক্সিমকোর ভাইস চেয়াররম্যান সালমান এফ রহমান ক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ছিলেন। হত্যা, দুর্নীতি ও ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক লাভের জন্য রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোসহ নানা অভিযোগে মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। বেক্সিমকো গ্রুপের অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণসহ সালমান এফ রহমান ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়মের তথ্য সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।

গত ডিসেম্বরে এস আলম গ্রুপের ৯টি কারখানা আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারখানাগুলো হলো-এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, এস আলম স্টিলস লিমিটেড, এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস লিমিটেড, চেমন ইস্পাত লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড(এনওএফ), এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড ও ইনফিনিটি সিআর স্টিপস লিমিটেড।

আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ীও এখন পলাতক বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুদক জানিয়েছে, তারা এখন এস আলমের পাচার করা এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। এস আলমের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোও দুর্বল হয়ে গেছে। পরিচালনা পর্যদে পরিবর্তন আনা হলেও বিশেষ কাজ হচ্ছে না। সরকার এস আলম ও তার পরিবারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঁচ হাজার ১০৯ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করেছে।

৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন রূপগঞ্জের টায়ার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গাজী টায়ার্স কারখানায় ৩২ ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলে। ব্যাপক লুটপাট চালানো হয় তখন। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া প্রতিষ্ঠানটিতে এখন কয়েকটি ইঞ্জিন আর ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা ছাড়া কিছুই নেই। সরকার পরিবর্তনের পর গোলাম দস্তগীর গাজীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তিনিও এখন কারাগারে।

৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় ৫টি পোশাক কারখানায় হামলা চালিয়ে আগুন দেয়া হয়। কারখানাগুলো হচ্ছে সিনহা টেক্সটাইল, বেক্সিমকো সিনথেটিকস, ডরিন টেক্সটাইল, বেঙ্গল গ্রুপের কারখানা ও হামিম গোডাউন। আগুন ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার তালিকায় আরো আছে বেক্সিমকো গ্রুপের ১৪টি পোশাক কারখানা, গাজী গ্রুপের পাঁচটি টায়ার কারখানা, বেঙ্গল গ্রুপের তিনটি প্লাস্টিক কারখানা এবং আশুলিয়া সাভার, জিরাবো ও জিরানীর বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা।

চট্টগ্রামে গত ছয় মাসে ৫২টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে সাভার- আশুলিয়ায় ৫২টি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। সেসব কারখানার মধ্যে বেশ কিছু এখনো চালু হয়নি।

সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের মালিকানাধীন এসএস এগ্রো কমপ্লেক্সেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হামলা চালানো হয়। ধামরাইয়ের বারাকৈর এলাকায় গত ৫ আগস্ট থেকে টানা তিন দিন লুটপাট চালিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পাঁচ শতাধিক গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হরিণ, পাখি, হাঁস, মাছ ও অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

হামলা, লুটপাট, আগুনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত কিছু কারখানা অবশ্য ধীরে ধীরে চালু করার চেষ্টা চলছে। গাজী গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমরা আমাদের কারখানাগুলো আবার চালু করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আমরা আর্থিক সহায়তা চেয়েছি। কারখানার শ্রমিকদের তাদের পাওনা দিয়ে দিয়েছি।

আমাদের যে কারখানাগুলো পোড়ানো হয়েছে তার মধ্যে আছে গাজী টায়ার, গাজী ট্যংক, গাজী পাইপ, গাজী ডোর, গাজী ইন্টারনাশনাল রয়েছে। আমাদের ভবন, যন্ত্রপাতি মালামাল সব পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভবনগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। আমরা যে হিসাব করেছি তাতে দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন সরকার তো এত টাকা লোন একসঙ্গে দেবে না। আমরা তাই ফেস বাই ফেস সরকারের সহায়তা চাচ্ছি, বলেন তিনি।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আগে যে মব ভায়োলেন্স ছিল, তা এখন তেমন নাই। তবে আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি যে, কখন আবার হামলা হয়। আর আমাদের মালিক তো কারাগারে আছেন। তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ছিলেন। ফলে ভয়টা একটু বেশি। তিনি বলেন, আরো অনেক শিল্প গোষ্ঠী ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে আমাদের মতো এত ক্ষতিগ্রস্ত আর কেউ হয় নাই।

বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানাগুলো চালু করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করে শ্রমিক কর্মচারীদের দায়-দেনা শোধ করা হচ্ছে। শ্রম এবং কর্মসংস্থান সচিব এই এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, পোশাক কারখানাসহ আরো কিছু কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। মালিক পালিয়েছে, মালিক জেলে, টাকা পাচার করে দিয়েছে। এখন সরকার তো আর সেই কারখানার শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেবে না।

চলতি সপ্তাহে ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলনের মধ্যেই গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাটা জুতার আউটলেট, পেপসি ও কেএএফসির আউটলেটসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালায়। গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবারের বিক্ষোভের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, হামলা ও লুটপাট চালানোর অভিযোগে এ পর্যন্ত ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সদরদপ্তরের এক বার্তায় জানানো হয়।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছে খুলনায় ৩৩ জন, সিলেটে ১৯ জন, চট্টগ্রামে পাঁচ জন, গাজীপুরে চার জন, নারায়ণগঞ্জে চার জন, কুমিল্লায় তিন জন এবং কক্সবাজারে চার জন। এসব ঘটনায় ১০টি মামলা হয়েছে।

বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ৫ আগস্টের পর হামলা ও আগুনের ফলে পোশাক কারখানাগুলো যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল, তা এখন অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। বেক্সিমকোসহ কয়েকটি কারখানা বন্ধ আছে। অনেক কারখানাই আবার চালু হয়েছে। তবে সার্বিক বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে অন্থিরতা আছে। মব অনেকটা কমে এসেছে। তারপরও হঠাৎ হাঠাৎ যেভাবে হামলা হয়, তা দুঃখজনক।

সবশেষ, গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদের নামে বাংলাদেশে যা হলো, তা তো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানে এসেছেন, তাদের চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটলো। তারা কী মনে করবেন? এটা আমাদের ইমেজের ক্ষতি করলো, বলেন তিনি।

তার কথা, ৫ আগষ্টের পর শিল্প খাতে হামলা, আগুন, ভাংচুর ছাড়াও আরো অনেক কারণে শিল্পখাতে কিছু সংকট হয়েছে। কেউ ঋণখেলাপি, কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন আবার কেউ দেশের বাইরে চলে গেছেন।

এফবিসিসিআইর-এর এক সাবেক পরিচালক এক সময় দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখার দায়িত্বে ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, আমি কোনো মন্তব্য করে বিপদে পড়তে চাই না। কথা বললে না আবার আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি দুই ধরনের বিনিয়োগই দরকার। আমাদের জিডিপির মাত্র ০.৪ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ। সেই অবস্থায় বিনিয়োগ সম্মেলন চলাকালে গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদের নামে যে তাণ্ডব এখানে হলো, তাতে ৫০টি দেশের বিনিয়োগকারীরা কী মেসেজ নিয়ে যাবে?

বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হলো, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আমরা একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ৫ আগস্টের পর অনেক শিল্প কারখানায় হামলা হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের উচিত সেগুলো চালু করতে সহায়তা করা। আর নতুন করে যাতে হামলা না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থেকে ব্যবস্থা নেওয়া, বলেন তিনি।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে বাংলা

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Comments are closed.

‍এই ক্যাটাগরির ‍আরো সংবাদ