বিশেষ প্রতিনিধি।।
মঙ্গলবার (২৪জুন) ২০২৫ ইং বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে “সারাবিশ্ব একই দিনে রোজা ঈদ পালনের” পক্ষের লোকদের সাথে বাহাস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফতোয়া নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা শুনার জন্য দুই পক্ষের শত শত লোকজন উপস্থিত হন। এক পর্যায় উত্তেজনা দেখা দিলে ইউএনও মোঃ রিয়াজুর রহমান পুর্বানির্ধারিত স্থানে বাহাস অনুষ্ঠান না করে তার অফিস কার্যালয়ে দুই পক্ষের মনোনীত মুফতি মাওলানাদের নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা এবং যুক্তি তর্ক করতে গিয়ে উভয় পক্ষই একে অপরকে নিয়ে তর্ক বির্তক জড়িয়ে পড়লে বাহিরে দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। এক পর্যায় ইউএনও রাগান্বিত হয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করার মধ্যে দিয়ে বড় ধরনের সংঘাত থেকে রক্ষা করেন। কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমাপ্ত হয়। এদিকে ইউএনওর এমন প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন স্থানীয়রা।
সকাল দশটায় মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা মিলনায়তনে বাহাস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রচলিত নিয়মের তথা “একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন জরুরী এর পক্ষের লোকেরা যথা সময়ে উপস্থিত হয়নি।
অবশেষে প্রচলিত নিয়মের পক্ষের লোকদের দৃঢ়তায় বেলা সাড়ে এগারোটার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উভয়পক্ষের বাহাস সংগঠিত হয়।
মেহেন্দিগঞ্জের বদরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা রুহুল আমিন সৌদির সাথে মিলিয়ে আরাফার রোজা, ঈদ ও কোরবানি করাই ইসলামের বিধান মর্মে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিল। আর বলেছিল কেউ যদি তার বিপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে পারে তাহলে মসজিদের ইমামতির চাকুরী ছেড়ে দিবে।
মেহেন্দিগঞ্জের হক্কানী ওলামায়ে কেরাম উক্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং তাদের সাথে বাহাসের আয়োজন করেন।
অতঃপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষের লোকজন প্রশাসকের কার্যালয়ে বাহাসের জন্য দিন তারিখ নির্ধারণ করেন।
উক্ত বাহাসের জন্য ঢাকা থেকে আগমন করেন মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী, মুফতি সাইফুল্লাহ হাবিবি, মুফতি জুবায়ের বিন আব্দুল কুদ্দুস সহ আরো অনেক উলামায়ে কেরাম।
অপরদিকে সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ঈদ পালনের সপক্ষে ছিলেন চান্দ্র মাসের সঠিক তারিখ বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব মাওলানা রফিকুল ইসলাম ও ড. মুফতি একে এম মাহবুবুর রহমান সহ আরো অনেকে।
বাহাসে প্রথমে মুফতি লুৎফর রহমান ফরায়েজি ভূমিকা স্বরুপ কিছু আলোচনা করে তাদেরকে একটি প্রশ্ন করেন। তারা এর উত্তর দিতে পারেনি। তিনি প্রশ্নে বলেন – যদি সৌদি আরবে চাঁদ দেখা যায় আর ওই সংবাদ গ্রহণযোগ্য পন্থায় হাওয়ায় দ্বীপপুঞ্জে (আমেরিকার একটি দ্বীপ) পৌঁছে যায়, আর তখন সেখানে রাতের চারটা বাজবে। তাহলে তারা কিভাবে রোজা রাখবে?
কেননা তখন সৌদি আরবে যদি মঙ্গলবার সন্ধ্যা হয় তাহলে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে সোমবার রাতের শেষ অংশ। তাহলে তারা কবে রোজা রাখবে? যদি সোমবারের রাত শেষে মঙ্গলবার রোজা রাখে তাহলে সৌদির সাথে রোজা রাখা হয়না। কারণ তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার কারণে বুধবার রোজা রাখবে। আর যদি হাওয়াইবাসীরা মঙ্গলবার না রেখে বুধবার রোজা রাখে তাহলে চাঁদ উঠা প্রমানিত হওয়ার পরও কেন রোজা রাখবে না। তা আমাদেরকে কোরআন সুন্নাহ এবং ফিকহের দলিলের মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হবে। এ নিয়ে সদুত্তর না পাওয়া যায়নি।
অতঃপর আরো বেশ কিছু আলোচনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাহাস মুলতবি ঘোষণা করেন।
অতঃপর উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে সম্মানিত উপজেলা প্রশাসক এই কথা ঘোষণা করেন, আমাদের দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আছে। ধর্মীয় ব্যাপারে তারা যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটা আমরা সবাই মেনে চলবো। এতদিন মেহেন্দিগঞ্জে মুসলমানগণ শান্তিপূর্ণভাবে যেভাবে রোজা ঈদ পালন করে আসছেন ঠিক সেভাবেই মেহেন্দিগঞ্জে চলতে থাকবে। কেউ কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারবে না।
উক্ত বাহাসে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বাজার রোড মাদ্রাসার সম্মানিত মুহতামিম মাওলানা আব্দুল হালিম সাহেব ও বরিশাল জেলা মডেল মসজিদের খতিব মুফতি মুনিরুল ইসলাম সাহেব। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন দিপেন, জামায়াত ইসলাম এর সভাপতি মাওলানা শহীদুল ইসলাম, স্থাসীয় আলেম মাওলানা মানসুর আহমেদ, মুফতী আব্দুল কাদের, মুফতী আবুল কালাম আজাদ, মুফতি আনোয়ার হোসাইন প্রমূখ।