1. faysal.rakib2020@gmail.com : admin :
  2. thelabpoint2022@gmail.com : Rifat Hossain : Rifat Hossain
অতিদারিদ্র্য বেড়েছে, সংকটে জনজীবন - বাংলার কন্ঠস্বর ।। Banglar Konthosor
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫১ পূর্বাহ্ন

অতিদারিদ্র্য বেড়েছে, সংকটে জনজীবন

  • প্রকাশিত :প্রকাশিত : বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫
  • ৩৪ 0 বার সংবাদি দেখেছে
আবু আলী // প্রায় তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, ময়দা থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ভারসাম্য হারিয়ে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ঋণ এবং সঞ্চয় ভেঙে খরচ চালাচ্ছে। গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে দারিদ্র্যের হার আরও বাড়বে।

গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। জুন মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দরিদ্র মানুষের জন্য চালু থাকা কর্মসূচিগুলো দ্রুত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। একই সঙ্গে এক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে কঠোর হতে হবে। দ্রুত মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসনে টার্গেট করে কর্মসূচি চালুর পরামর্শও দেন তারা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণায় উঠে এcnছে- গত তিন বছরে দারিদ্র্য ১৮ দশমকি ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৭ দশমকি ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেড়েছে। খাবার, চিকিৎসা, বাসাভাড়া ও শিক্ষাÑ এমন প্রতিটি খাতেই ব্যয় বেড়েছে। ফলে দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত সবাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখতে পারছে না। বিশ্বব্যাংক মনে করে, অতিদারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণÑ আয় কমে যাচ্ছে, দুর্বল শ্রমবাজার ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে মন্থর গতি। বিশ্বব্যাংক বছরের শুরুতেই আভাস দিয়েছেÑ খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২৫ সালে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র হয়ে যেতে পারে।

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান এমএ রাজ্জাক বলেন, গত তিন-চার বছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের আয় কমেছে। ফলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দারিদ্র্য যে হারে বেড়েছে, মানুষের প্রকৃত মজুরি সে হারে বাড়েনি। ফলে দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল নীতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অতিরিক্ত টাকা সরবরাহের কারণেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এখন সরকারকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

 

তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিরসনে টার্গেট করে কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। সামাজিক সুরক্ষায় যেসব কর্মসূচি আছে, সেখানে সুবিধাভোগীর (বয়স্ক ভাতা ও শিক্ষা বৃত্তি) বাইরের অনেক মানুষ সুবিধা ভোগ করছেন। সেগুলো ঠিক করতে হবে। গত কয়েক বছরে বেড়ে যাওয়া আয় ও সম্পদের বৈষম্য কমাতে হবে। বৈষম্য কমাতে করযোগ্যদের কাছ থেকে কর আদায় করতে হবে। আর প্রকৃত সুবিধাভোগীর কাছে সরকারের সুবিধা পৌঁছাতে হবে।

বিশ^ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এখন দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মোবাইলের আওতায় রয়েছে। এজন্য সরকারে সুবিধাগুলো মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে বিতরণ করা উচিত। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।

জানা গেছেÑ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যয়কে বিবেচনায় রেখে দারিদ্র্য পরিমাপ করে বিবিএস। একজন মানুষকে দৈনিক গড়ে ২ হাজার ১২২ ক্যালরির খাবার কিনতে এবং খাদ্যবহির্ভূত খরচ মেটানোর মতো টাকা আয় করতে হবে। নইলে ওই ব্যক্তিকে দরিদ্র হিসেবে ধরা হয়। তবে খাবারের দাম এলাকাভেদে ভিন্ন হয়।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় বলেন, মূলত তিন ধরনের সংকটের প্রভাব আছে দেশে- করোনা মহামারী, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। সর্বশেষ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিশাল আশা ও একই সঙ্গে অনিশ্চয়তাও তৈরি করেছে। এগুলোর প্রভাব পড়েছে মানুষের আয়-ব্যয়, দারিদ্র্য পরিস্থিতি ও অন্যান্য খাতে।

জানা গেছে, তুলনামূলক গরিব পরিবারগুলো নিজেদের আয়ের চেয়ে বেশি খরচ করছে। এমনকি মধ্যবিত্তদেরও আয়ের চেয়ে তাদের ব্যয় বেশি। আর এই ব্যয়ের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে খাদ্যে। ফলে কেউ কেউ সঞ্চয় ভেঙে ফেলছেন বা ধারদেনা করতে হচ্ছে। পরিবারগুলোর ওপর ঋণের চাপ বাড়ছে, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারে এই চাপ বেশি। এই ঋণ মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ব্যয়, চিকিৎসা কিংবা ঘর মেরামতের মতো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, গত কয়েক বছর মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ছিল। অর্থনীতি শ্লথ ছিলÑ এজন্য দারিদ্র্য বেড়েছে। তিনি প্রত্যাশা করেন, আগামী বছরের শুরু থেকে এমন পরিস্থিতির উন্নতি হবে। রাজনৈতিক সরকার এলে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হবে, কর্মসংস্থান ও মানুষের আয় বাড়বে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ট্রাকসেল বাড়ানোর পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Comments are closed.

‍এই ক্যাটাগরির ‍আরো সংবাদ