1. faysal.rakib2020@gmail.com : admin :
  2. ukbanglatv21@gmail.com : Kawsar Ahmed : Kawsar Ahmed
অসহায় রহিমার করুণ আর্তনাদ পৌঁছায় না কারও কানে! - বাংলার কন্ঠস্বর ।। Banglar Konthosor
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন

অসহায় রহিমার করুণ আর্তনাদ পৌঁছায় না কারও কানে!

  • প্রকাশিত :প্রকাশিত : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৭ 0 বার সংবাদি দেখেছে

প্রায় ৫১ বছর বয়সী মোসা. রহিমা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর বৃদ্ধা মায়ের কাছে থাকতে শুরু করেন তিনি। তবে তার শত বছর বয়সী বৃদ্ধা মা আনুরা খাতুন রহিমা বেগমের চোখের সামনেই করুণভাবে মারা যান। ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের টিপকল বাড়ি সংলগ্ন একটি ঝুপড়ি ঘরে গত ৮ বছর ধরে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন রহিমা বেগম। গত ২০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) রাতে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় সেই ঝুপড়ি ঘরটি। ওই ঘরের নিচে চাপা পড়ে মারা যান রহিমা বেগমের বৃদ্ধা মা আনুরা খাতুন। ঝড়ে মা হারালেন, ঘরও হারালেন রহিমা বেগম। দুই মাস আগে আঘাত হানা ওই আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত বসতঘরটি এখনো নতুন করে তুলতে পারেননি রহিমা বেগম। উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও পাননি কোনো সহযোগিতা। তাই এখনো ঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়া সেই ঘরেই কোনো রকমে দিন পার করছেন রহিমা বেগম। তার এমন জীবনযাপনে মনে হবে; ‘অসহায় রহিমার করুণ আর্তনাদ যেন পৌঁছায় না কারও কানে’!

রহিমা বেগম জানান, গত ৮ বছর আগে আমার স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর স্বামীর বাড়ি থেকে এসে বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করি। কারণ মা বৃদ্ধা এবং কোনো কাজও করতে পারতেন না। তাই মায়ের সঙ্গে থেকে আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম। এছাড়া প্রতিবেশীরাও কিছু সহযোগিতা করতেন। মানুষের সহযোগিতা ও নিজের কাজের বিনিময়ে পাওয়া সামান্য পরিমাণের অর্থে চাল-ডালে কিনে কোনোভাবে খেয়ে-পরে দিনপার করছি। তবে গত ২০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) রাতে হঠাৎ করেই ঝড় শুরু হয়। তখন আমরা সকলে ঘরের মধ্যেই ছিলাম। ওই ঝড়ের তাণ্ডবে ঝুপড়ি ঘরটি ভেঙে যাওয়ার শব্দ শুনে আমি চৌকির নিচে আশ্রয় নিই। মাকেও চৌকির নিচে নামাবো, এরইমধ্যে ঘরটি দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে যায়। ওই সময় ঘরের নিচে চাপা পড়েন আমার বৃদ্ধা মা। তখন চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা এসে আমিসহ মাকে উদ্ধার করেন। তবে ঘর চাপা পড়ে মা পেটে এবং বুকে প্রচণ্ড আঘাত পান। যার ফলে পরদিন সকালে আমার চোখের সামনে মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে বৃদ্ধা মায়ের করুণ মৃত্যু হয়।
তিনি আরো জানান, মা তো মারাই গেলেন। তবে যেই ঝুপড়ি ঘরটিতে থাকতাম তা ভেঙে যাওয়ায় এখন রাতের বেলায় অন্যের ঘরে গিয়ে ঘুমাই। কয়েকটি গাছ এবং বাঁশ দিয়ে আপাতত ঘরের টিনের চালাটা দাঁড় করিয়ে দিনের বেলায় সেই ভাঙা ঘরটিতেই থাকি। ঝড় চলে গেছে অন্তত ২ মাস আগে, তবে অর্থের অভাবে এখনো নতুন করে ঘরটি তুলতে পারছি না। যার জন্য সহযোগিতার জন্য উপজেলায় আবেদন করেছি, সেখান থেকেও এক পয়সার অনুদানও পাইনি। এখন কিভাবে ঘর তুলবো, আর অন্যের ঘরেই বা কতদিন রাত্রীযাপন করবো, তা ভেবে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছি। তাই সমাজের বিত্তবান মানুষের এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করছি। এছাড়া আমার যেহেতু স্বামী মারা গেছেন, সেজন্য আমাকে সরকারিভাবে একটি বিধবা ভাতা করে দেওয়ারও অনুরোধ জানাচ্ছি। তাহলেই বাবার রেখে যাওয়া ভিটায় একটু শান্তিতে থাকতে পারবো।

রহিমা বেগমের প্রতিবেশী মো. সামছুউদ্দিন সরদার বলেন, মায়ের সঙ্গেই একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন রহিমা। তবে ঝড়ে তার ওই বৃদ্ধা মা করুণভাবে মারা যান। তাদের ঘরটিও একেবারে ভেঙে গেছে। ঝড় গেল সেই কবে, তবে এখনো কারও কোনো সহযোগিতা পাননি রহিমা। যার জন্য নিজের নিরাপত্তার জন্য রাতের বেলায় অন্যের ঘরে ঘুমান তিনি। আর দিনের বেলায় সেই ভাঙা ঘরেই থাকেন রহিমা বেগম। নতুন করে ঘর তোলার তার কোনো সাধ্য নেই। তাই প্রতিবেশী হিসেবে আমি অনুরোধ করবো; মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও অসহায় রহিমা বেগমের পাশে সকলকে দাঁড়ানো উচিত।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ওই নারী সহযোগিতার জন্য যে আবেদনটি করেছেন তা আমরা জেলায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে কোনো বরাদ্দ না আসায় তাকে কোনো ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। তবে বরাদ্দ আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া তাকে একটি বিধবা ভাতা করে দিতে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলবো।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Comments are closed.

‍এই ক্যাটাগরির ‍আরো সংবাদ