
মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি।।
আমেরিকান প্রবাসী কাজী জামান উদ্দিনের আধুনিক প্রযুক্তির দুগ্ধ খামার ঘিরেই স্বপ্ন বুনছেন এলাকার বাসিন্দারা।
তার সেই খামারের মাধ্যমে কম দামে দুধ বিক্রিতে এলাকায় ব্যপক সাড়া পড়েছে। এলাকার মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছে খামারটির মাধ্যমে।
সম্প্রতি দেশে এসে নিজ গ্রামে বেঙ্গল ক্যাটল এন্ড ডেইরী ফার্ম নামে প্রান্তিক খামার গড়ে তোলেন তিনি। উৎপাদিত দুধকে ঘিরেই স্বপ্ন বুনছেন তার গ্রামের বাসিন্দারা।
চলতি বছরের মার্চ এপ্রিলে খামারটি গড়ে তোলেন তিনি। দিন দিন খামারের পরিচিতি অর্জন হচ্ছে। গ্রামের মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পেরে খুশি খামার মালিক।
আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে দুগ্ধজাত বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। দাম ভালো পাওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও হচ্ছে অনেকের।
প্রাথমিকভাবে ৪৭টি ফ্রিজিয়ান হলস্টিন, জারসি ও অস্ট্রেলিয়ান জাতের গাভী উত্তোলন করলেও তার টার্গেট ৩শত গাভী উত্তোলন করার। একেকটি গাভী ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে খামারটিতে দৈনিক ৪/৫ মন দুধ উৎপাদন করা হয়।
দিনে দুই বেলা যন্ত্র দিয়ে ও সনাতন পদ্ধতিতে দুধ সংগ্রহ করা হয়। দোহনকারীর পায়ে থাকে ভাইরাসমুক্ত জুতা ও গায়ে অ্যাপ্রোন। এই দুধ দিয়ে খামারমালিক ঘি ও মাখন তৈরি করে বিক্রি করেন।
খামারটিতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রয়েছে। নালা দিয়ে দূরে বর্জ্য ট্যাংকে পড়ে। সেখান থেকে প্ল্যান্টে বায়োগ্যাস ও জৈবসার তৈরি হয়। এসব খামারে যন্ত্রপাতি ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আধুনিক মানের। সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে দুধ, মাংস ও দুগ্ধপণ্য উৎপাদন হচ্ছে।
খামারের ম্যানেজার মোল্লা নাঈম বলেন, এলাকার মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করা হয় ৭০ টাকা হারে। অথচ বাজারে বর্তমানে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা হারে। কম দামে দুধ নেওয়ার জন্য সকাল -বিকাল দীর্ঘদিন লাইন পড়ে যায় গ্রামবাসীর।
নিয়মিত ক্রেতা হাবিবা বেগম বলেন, আমি নিয়মিত এখান থেকে দুধ নেই। অন্য জায়গায় ১০০ টাকা হলেও এখানে ৭০ টাকা। একটু ছাড় আছে। অনেকে আসে দুধ নেওয়ার জন্য। খামারটি আমাদের জন্য আশির্বাদ। ১০০ টাকা দুধ কেনা অনেকের পক্ষে সম্ভব না।
জসিম উদ্দিন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, আমি দৈনিক ৫লিটার দুধ নেই। কেজিতে ৩০টাকা হারে ১৫০টাকা কমে নিতে পারছি।
খামারী আমেরিকান প্রবাসী কাজী জামান উদ্দিন বলেন,
আমেরিকার উইসকনসিনের এক্সপোতে বিভিন্ন দুগ্ধ খামার ঘুরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। সেগুলোর অনুপ্রেরণা নিয়ে তারই আদলে নিজের খামার তৈরি করি। খামারটি গড়তে আমার ৫কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। খামারটিতে ১২ জন কর্মচারী ছাড়াও একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে
নিজের গ্রামের মানুষকে কমদামে দুধ খাওয়াতে পেরে আমি খুশি। এটাও একটা সেবামুলক কাজ। যার মাধ্যমে আমি তৃপ্তি পাই। এসব দুধ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ জৈব সার উৎপাদন করা হয়। তাও স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সুলভ মূল্য বিক্রি করে যাচ্ছি। উৎপাদন বাড়াতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তেমন একটা সহযোগিতা পাচ্ছি না গো-খাদ্যের দাম যে হারে বেড়েছে সে অনুপাতে দুধের লিটার হওয়ার কথা দেড়শো টাকা।
গ্রামবাসীকে কম দামে দুধ দিতে গিয়ে মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা লোকসান হলেও আফসোস নেই তার। তার বিশ্বাস তিনি অচিরেই লাভের মুখ দেখবেন।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম জাকারিয়া তৌহিদ বলেন, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় মোট ১১৮টি গরুর খামার রয়েছে। কালিকাপুরে এক প্রবাসী যে দুগ্ধ খামার করেছে আমি ইতিমধ্যে সে খামারটি ভিজিট করেছি। সম্ভাবনায় এ দুগ্ধশিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারিভাবে নতুন উদ্যোক্তাকে সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হবে।
মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার কালিকাপুর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রবাসী বরিশাল বিভাগ কল্যান সমিতি ইউ, এস এ (ইনক্) এর সভাপতি কাজী জামান উদ্দিন দীর্ঘদিন স্ব-পরিবারে আমেিকার নিউইয়র্কে বসবাস করে আসছেন। তিনি সেখানে নাগরিকত্ব নিয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
তার এমন উদ্যোগ দেখে এখন অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে দুগ্ধ খামার গড়ার জন্য আগ্রহী হচ্ছেন।