নিজস্ব প্রতিবেদক // ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংরক্ষণে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) ওয়্যারহাউজ ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ওয়্যারহাউজের ভাড়া পরিশোধ নিয়ে জটিলতায় পড়েছে সংস্থাটি। শুধু তাই নয়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে অনেক ইভিএম।
এদিকে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ ভাড়া বাবদ ৫৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (৫০ মাসের ভাড়া) দাবি করেছে। এছাড়া ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণেও দরকার ৬০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় ইভিএম সংরক্ষণে নিজস্ব ওয়্যারহাউজ নির্মাণের চেষ্টা চালায় ইসি। তবে তা সম্ভব হয়নি। এমনকি বিএমটিএফের বকেয়া ভাড়ার বিষয়টিও এখনো অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন নির্বাচনে একই ইভিএম বারবার ব্যবহার করায় এগুলোর অধিকাংশের এখন রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত আবশ্যক হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তও নয়। এমনকি সদ্য সমাপ্ত প্রকল্পটি ইসিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। এসব কারণে ইসি ইভিএম প্রকল্প নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
প্রকল্পের ডিপিপির ক্রয় প্যাকেজের আওতায় ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা দরে মোট দেড় লাখ ইভিএম সেট কেনা হয়। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। চলতি (২০২৪ সালের) জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও এখনো তা ইসিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে বুয়েটের তৈরি ইভিএম প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীসময়ে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার শুরু হয়। কে এম নূরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের জন্য ইভিএম তৈরি করে বিএমটিএফ।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের ডিপিপি অনুসারে আর্থিক অগ্রগতি মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৯৬ শতাংশ এবং বাস্তব ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
ইসি সচিব শফিউল আজিম জানিয়েছেন, ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ ভাড়া বাবদ ৫৩ কোটি টাকা বাকি আছে। বার বার ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ ভাড়া দেয়া সমাধান নয়। সরকারের টাকা অপচয় বন্ধ করতে হলে ইসির নিজস্ব একটা ওয়্যারহাউজ নির্মাণ করা দরকার। সেজন্য আমরা জমি খুঁজছি।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের একজন প্রকল্প পরিচালক ছিলেন, তিনি এখন নেই। প্রকল্পের বিষয়টি আমরা বুঝে পাইনি। এখানে সংশ্লিষ্টদের বেতন দেয়ার একটা বিষয় থাকে। এমন নানান কারণে ইভিএম একটা ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ইভিএম নষ্টও হয়ে যাচ্ছে। এসব যন্ত্র দীর্ঘদিন যদি পড়ে থাকে, ব্যবহার যদি না হয় তবে নষ্ট হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানায়, চলতি বছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে এক হাজার ৩৯৪টি নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় সংসদের ৩১টি আসনে (উপ-নির্বাচনসহ), জেলা পরিষদে সাধারণ ও উপ-নির্বাচন ৬৬টি, সিটি করপোরেশনে সাধারণ ও উপ-নির্বাচন ২৪টি, পৌরসভা নির্বাচন ২৩৫টি, উপজেলা নির্বাচন ৩৪টি এবং ইউনিয়ন পরিষদের এক হাজার চারটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ইভিএমের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে কোয়ালিটি চেকিং (কিউসি) কার্যক্রম শেষে বর্তমানে ইভিএমের স্থিতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে বিএমটিএফে এক লাখ এক হাজার ৩৫টি, মাঠ পর্যায়ে ৪৮ হাজার ২৬৭টি এবং প্রকল্প কার্যালয়ে ৬৯৮টি ইভিএম সেট রয়েছে। সবমিলিয়ে দেড় লাখ ইভিএম সেট রয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুসারে, দেড় লাখ ইভিএম সেট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, ৬টি সফটওয়্যার, ৫টি যানবাহন এবং ৯ হাজার ২০০টি র্যাক কেনা হয়। ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুই চুক্তির আওতায় ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৯৯৯টি ইভিএম সেট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া, বিএমটিএফ প্রয়োজন অনুসারে ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ সাপোর্ট দিচ্ছে। জেলা পর্যায়ে ভাড়া গুদামে এবং বিএমটিএফের ওয়্যারহাউজে ইভিএম সেট সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
এসব ইভিএম সেট সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে বিএমটিএফ ওয়্যারহাউজ ভাড়া বাবদ বকেয়া রয়েছে ৫৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ডিপিপিতে ওয়্যারহাউজ ভাড়া বাবদ কোনো বরাদ্দ না থাকায় বিএমটিএফের ভাড়া পরিশোধ সম্ভব হয়নি। তবে প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুযায়ী প্রকল্পের অনুকূলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ মিলেছে। বর্তমানে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বকেয়া বিল পরিশোধের প্রক্রিয়া চলমান। এতে ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।