কারওয়ান বাজারে গতকাল বুধবার বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরেও ইলিশের দরদাম করে পেরে উঠছিলেন না বেসরকারি চাকরিজীবি নাজনীন হাসান। কাক্সিক্ষত দামের মধ্যে না পাওয়ায় শেষমেশ সাধের ইলিশটি আর কেনা হয়নি তার। কর্মজীবী এ নারী বলেন, এতদিন দাম ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল। এখন মৌসুম চলছে, দাম কমেছে শুনে এলাম। কিন্তু এখনও যে দাম চাইছে, তা অত্যাধিক বেশি। এত দাম দিয়ে ইলিশ কিনে খাওয়া আমাদের জন্য বিলাসিতা হয়ে যাবে। দেখি দাম কমলে কিনব।
তবে ইলিশের দাম আগের চেয়ে কমেছে জানিয়ে কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা স্বপন চন্দ্র বলেন, এক কেজির একটু বেশি ওজনের ইলিশের কেজি ২ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করছি। প্রকারভেদে ২ হাজার ৬০০ টাকাও বিক্রি করছি। আগে এগুলো ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক কেজির একটু কম ওজনেরগুলো ২ হাজার ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
বাড়তি দামের বিষয়ে স্বপন চন্দ্র বলেন, আমাদের পাইকারিতে কেজিপ্রতি কেনা পড়ছে ২ হাজার ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে খুচরায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা যোগ করে বিক্রি করছি। মূলত, স্থানীয় ঘাটে দাম এখনও সেভাবে কমেনি। জালে আরও বেশি ইলিশ ধরা পড়লে দাম আরও কমে আসবে।
জুলাই ও আগস্টকে ইলিশের ভরা মৌসুম ধরা হয়ে থাকে। এ সময় জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। এতে সরবরাহ বাড়লে স্থানীয় ঘাট থেকে শুরু করে রাজধানীর বাজারেও মাছটির দাম কমে আসে। তাই বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এ মৌসুমে কম দামে ইলিশ কিনে খাওয়া অপেক্ষায় থাকেন ভোক্তারা। কিন্তু এবার হাতাশ হতে হয়েছে তাদের। কারণ, বর্তমানে দাম কমার পরও যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে অনেকের পক্ষেই কিনে খাওয়া কঠিন। ইলিশের বাজার চিত্র বলছে, গত বছরের একই মৌসুমের চেয়ে এবার দাম অনেকখানি বাড়তি রয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এমন সময় রাজধানীর খুচরা বাজারে যে ইলিশের কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা। সংস্থাটির হিসাবে গত বছরের চেয়ে বর্তমানে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ইলিশের আড়তদাররা জানান, এবার জালে কম মাছ ধরা পড়ছে। তাই দাম এখনও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে কমেনি। চাঁদপুরের বড় স্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ইলিশ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বছরের এমন সময় ঘাটে ইলিশের আমদানি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সেখানে এ মৌসুমে খুবই কম বেড়েছে। তাই দামে এখনও স্বস্তি মিলছে না। তারপরও পাইকারি দর আগের চেয়ে অনেকটা কমেছে।
চাঁদপুর মৎস বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সবে বরাত সরকার বলেন, ঘাটে কাক্সিক্ষত আমদানি নেই। এমন সময় সাধারণত দৈনিক ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার হাজার মণ ইলিশ ওঠে। সেখানে এখন উঠছে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ মণ ইলিশ। তার ওপর যেগুলো উঠছে, তার বেশিরভাগই ছোট ইলিশ।
ঘাটের দরদাম নিয়ে মো. সবে বরাত সরকার আরও বলেন, এখন দাম নিম্নমুখী রয়েছে। বর্তমানে ঘাটে ১ থেকে ১ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৯৫ হাজার থেকে ৯৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, আগে যা ১ লাখ ১০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। লোকাল ইলিশের দাম একটু বেশি পড়ে। অন্যদিকে হাতিয়া ও ভোলার ইলিশের দর তুলনামূলক কম।