1. faysal.rakib2020@gmail.com : admin :
  2. thelabpoint2022@gmail.com : Rifat Hossain : Rifat Hossain
কারণ ছাড়াই বাড়ছে চালের দাম - বাংলার কন্ঠস্বর ।। Banglar Konthosor
বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৬:১৫ অপরাহ্ন

কারণ ছাড়াই বাড়ছে চালের দাম

  • প্রকাশিত :প্রকাশিত : শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫
  • ৪৩ 0 বার সংবাদি দেখেছে
রেজাউল রেজা // বোরোর ভালো উৎপাদনের পর বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরু চালের দাম কমলে কিছুটা স্বস্তির দেখা পেয়েছিলেন ভোক্তারা। কিন্তু তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। কোরবানির ঈদের ছুটি শেষ হতে না হতেই এক লাফে ফের চালের দাম বেড়ে গেছে। মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় পৌঁছেছে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অত্যাবশ্যকীয় চালের দাম হঠাৎ এতটা বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ভোক্তারা। বাজারে চাল কিনতে গিয়ে অনেকে অতিরিক্ত দামের কারণে জড়িয়ে পড়ছেন বাগ্-বিতণ্ডায়।

মাসের চাল কিনতে গতকাল বাজারে গিয়ে দাম শুনে হতবাক কদমতলী এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. কৌশিক আহমেদ। ঈদের আগে ৭৫ টাকা কেজি দরে কেনা সরু চালের দাম বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে শুনে বেজায় চটে যান তিনি। কথা হলে তিনি বলেন, বোরো সিজনের নতুন চাল ওঠার পর দাম কমে ৭৫ টাকা হলো বেশিদিন হয়নি। এর মধ্যেই এক লাফে বেড়ে ৮০ টাকা হয় কী করে, বুঝে পাই না। এগুলো খতিয়ে দেখার কি কেউ নেই?

চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ বাসাবো এলাকার বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম ফরিদও। তিনি বলছিলেন, এক লাফে বস্তায় (৫০ কেজি) ৩০০ টাকা বেড়ে গেছে। দোকানির কাছে জানতে চাইলে তারা বলছেন, কারণ জানেন না। চালের মিলগুলোই নাকি দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মিলগুলো কেন বাড়াল, সেই তদারকি কে করবে? যেহেতু চাল অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য, সরকারের উচিত দ্রুত বাজার খতিয়ে দেখা।

মালিবাগ বাজারের গাজী স্টোরে খুচরা বিক্রেতা মো. রুবেল হোসেন বলেন, বোরোর নতুন চাল ওঠায় বাজার নিম্নমুখী ছিল। মিনিকেটের কেজি ৭৫ টাকা পর্যন্ত নেমেছিল। এখন তা ৮০ টাকা হয়েছে। মিলগুলো থেকে দাম বাড়ানোয় আমাদেরও বাড়াতে হয়েছে। সরবরাহকারীরা আমাদের জানিয়েছেÑ মিলে খরচ বেড়েছে, শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। তাই দাম বাড়তি। এর বেশি আমরা কিছু জানি না।

কদমতলী এলাকার চাল ব্যবসায়ী মো. মিলন ও মালিবাগের সবুর মোল্লা জানান, কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ঈদের পর সরু চালের দাম এক লাফে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে মিলগুলো। এতেই খুচরা ও পাইকারি বাজারে দাম লাফিয়ে বেড়েছে। অথচ বাজারে চালের সংকট নেই। এর আগে সংকট থাকলেও বোরো মৌসুমের নতুন চাল ওঠায় সরবরাহ বেড়েছে। বাজারে চালের সরবরাহ এখন পর্যাপ্ত রয়েছে।

জানা গেছে, ধান উৎপাদনে সর্বাধিক উৎপাদনশীল মৌসুম হচ্ছে বোরো। কেননা দেশের মোট উৎপাদনের বড় একটি অংশ আসে এ মৌসুমে। এবার আবহাওয়া ও সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় বোরোর ফলন সন্তোষজনক। নির্বিঘ্নে কৃষকের ঘরে উঠছে বোরো ধান। বাজারে নতুন চাল ওঠায় দামও কমে এসেছিল। কিন্তু ঠিক কী কারণে হঠাৎ বাজারে অস্থিরতা তার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না কেউ।

ভরা মৌসুমে দাম বাড়ার পেছনে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা দুষছেন মিল মালিকদের। অপরদিকে মিল মালিকরা দায়ী করছেন অবৈধ মজুদদারদের। আর এর মাঝে পড়ে অতিরিক্ত দামে চাল কিনে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বোরো মৌসুমের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এবার সারাদেশে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫০ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ টন। এ পর্যন্ত যতটুকু অর্জিত হয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কথা হলে অধিদপ্তরের সরেজমিন শাখার অতিরিক্ত পরিচালক (সম্প্রসারণ ও কো-অর্ডিনেশন) ড. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, এবার আবহাওয়াসহ সবকিছু অনুকূলে রয়েছে। ভালো ফলন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সামান্য যে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ক্ষতিকর তেমন প্রভাব ফেলবে না। কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া ধানকাটা প্রায় শেষের দিকে। এবার উৎপাদন সন্তোষজনক। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশ ধান কাটা শেষ। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টন।

ভালো ফলন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়ার বিষয়ে মিলাররা বলছেন, একদিকে মিলে খরচ বেড়েছে। অপরদিকে ধানের বাজারেও দর ওঠানামা করছে। চালের দামে এর প্রভাব পড়েছে।

কথা হলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লায়েক আলী বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, মিলগুলোতেও খরচ বেড়েছে। তার চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে ধানের বাজারে দর হঠাৎ ওঠানামা করছে। ধানের দাম হঠাৎ প্রতি মণে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় চালের দামও বেড়ে গেছে। এখন আবার কিছুটা কমেছে।

তিনি আরও বলেন, ধানের দাম বেশি হলে কৃষকরা লাভবান হন। কিন্তু এখন যে ধানের দাম বাড়ানো হচ্ছে এগুলো এক শ্রেণির অবৈধ মজুদদাররা করছে। এর সঙ্গে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও জড়িত। এরাই বারবার এ কাজ করে। এসব মজুদদারের কোনো কাগজপত্রও নেই। এরা কোনো নীতিমালার তোয়াক্কা করে না।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরো মৌসুমে যে ফলন হয়, তাতে চালের দাম কমে আসে। এ সময় নতুন চাল উঠলে বাজারে অনেকটা স্বস্তি মেলে। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমেও সরু চালের দামে নাজেহাল ভোক্তা।

কারওয়ানবাজারের মোশাররফ হোসেন বলেন, বোরো মৌসুমে ফলন ভালো হলে চালের বাজারে স্বস্তি থাকে। যদিও বাজারে দাম কমা কিংবা বৃদ্ধি পাওয়া ফলনের ওপর যতটা নির্ভর করে তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে মিলগুলোর ওপর। তারা যে দামে ছাড়ে, সে দামেই কিনতে হয় ও বিক্রি করতে হয়।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনা ও নজরদারিতে গাফিলতির সুযোগ নিয়ে অসাধু চক্র বারবার নানা কায়দায় চালের দাম বাড়িয়ে অল্প সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নিচ্ছে। এতে যৌক্তিক দামে চাল কিনে খেতে পারছেন না ভোক্তারা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, মূলত ধান-চালের বাজারে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে বাজারÑ সবখানেই নজরদারিতে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। আর এতেই বারবার অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। বোরোতে ভালো ফলন হয়েছে। এ সময় সরু চালের দাম ৬২ থেকে ৬৪ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। মাঝারি ও মোটা চালের দামও অনেক চড়া। ৫৫-৫৬ টাকা দিয়ে মোটা চাল কিনে খেতে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির তুলনায় মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। তাই চালের মতো অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে দাম যাতে অযৌক্তিকভাবে না বাড়ে সেদিকে নজর রাখা জরুরি।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Comments are closed.

‍এই ক্যাটাগরির ‍আরো সংবাদ