খুলনার কয়রা উপজেলার নয়ানী গ্রামে নদীর লোনাপানি ঢুকিয়ে চিংড়িঘের তৈরির প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। নয়ানী কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত একটি গ্রাম।
সোমবার (২৬ মে) সন্ধ্যায় স্থানীয় নারী-পুরুষ সড়কে ও বিলের মধ্যে অবস্থান নিয়ে এ প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদের সময় স্লোগান দিয়ে তারা বলেন, ‘নোনাপানি তুলতে এলে মুখে দেব ঝাঁটার বাড়ি, নোনাপানির পক্ষে যারা, উপকূলের শত্রু তারা।’
বিক্ষোভকারীরা জানান, এলাকায় ২৫ বছর ধরে নোনাপানির ঘেরে চিংড়ি চাষ হলেও গত বছর থেকে জমির মালিকেরা সম্মিলিতভাবে চাষাবাদে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। এতে কৃষি সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুললেও সম্প্রতি কিছু ব্যক্তি পুনরায় ঘের তৈরির উদ্যোগ নিয়ে নদী থেকে নোনাপানি আনার চেষ্টা করেন। ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটার ঘটনায় চরম ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘেরের জন্য বসানো পাইপ ও কাটা বেড়িবাঁধের ফলে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে গবাদিপশু মারা যায় এবং মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। নারী, পুরুষ সবাই মিলে ঘের নির্মাণ প্রতিহত করতে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন।
গ্রামের কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, আমাদের এ জায়গার মাটিতে অনেক ভালো ধান হয়। গত বছর থেকে আমরা ধানচাষ শুরু করেছি। কিছু লোক ঘের করার জন্য নদীর লবণ পানি ঢোকাতে রাস্তা পর্যন্ত কাটতে চাচ্ছে। তবে গ্রামবাসী তা রুখে দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আল শাহরিয়ার বলেন, নদীর লবণ পানি দিয়ে মাছচাষ করতে করতে এ এলাকা লবণাক্ত হয়ে গেছে। লবণ পানির খারাপ প্রভাবে বিষিয়ে উঠেছে মানুষের শরীর। এছাড়াও স্থানীয় কৃষক সমাজ সিদ্ধান্ত নিয়েই ধানচাষ শুরু করে। কিন্তু একটি কুচক্রী লোভী মহল আবার ঘের ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছে।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনি শংকর রায় বলেন, ২৪০০ বিঘার পুরো জমি ধরেই একটা সময় লবণ পানির মাছ চাষ হতো। এ জমিতে গত বছর চাষাবাদের সিদ্ধান্তে সবাই লিখিত অঙ্গীকার করেন ইউনিয়ন পরিষদে। এখন অল্প কিছু লোক বেড়িবাঁধ কেটে সেই চুক্তি ভাঙার চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানিয়েছে।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী বলেন, এলাকার মানুষ চিংড়ি চাষে আগ্রহী না। গত বছর ধানচাষ করে ভালো ফলন পেয়েছে। চিংড়ি চাষে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি। কিন্তু কিছু বহিরাগত প্রভাবশালী জোর করে ঘের করতে চাচ্ছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, বিষয়টা থানায় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। গ্রাম পুলিশ দিয়ে পাহারা দেওয়া হচ্ছে যাতে কেউ রাস্তা কেটে লবণ পানি ঢোকাতে না পারে। যারা এই কাজ করছেন, তারা না থামলে তাদের খুঁজে আইনের আওতায় আনা হবে।