বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) ইব্রাহিম খলিলের ভাই হুমায়ুন কবির ‘জিয়া শিশু একাডেমির মহাপরিচালক’ হিসেবে পরিচিত। তিনি এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হুমায়ুন তার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘নূরজাহার আইডিয়াল’ স্কুলের নাম পরিবর্তন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নাম ব্যবহার করে উদ্বোধনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। এই স্কুলের নামে দেদার চাঁদা আদায় করা হচ্ছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে বিতর্ক এবং ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। স্কুলটি যেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেটা বিষখালী নদীর পাড়ে। এলাকার নাম মোকামিয়া খালগোড়া।
এদিকে, পতিত সরকারের দোসর হিসাবে পরিচিত অনেককেই আশ্রয়-প্রশ্রয়ও দিচ্ছেন হুমায়ুন কবির। এদের মধ্যে বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম গোলাম কবীরের নামও আছে। এলাকায় ‘ফিফটিন পার্সেন্ট’ হিসাবে পরিচিত এই ব্যক্তিদের নিয়ে ঢাকায় গোপন বৈঠকও করেছেন। আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার বিরুদ্ধে স্থানীয় গণমিলনায়তন নির্মাণে ‘পুকুর চুরির’ তদন্ত শুরু হয়েছে। গত ১৫ বছরে শত শত কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্যের এই হোতাদের মামলায় আসামি না করার অভয় দিয়ে হুমায়ুন হাতিয়েছেন বিপুল টাকা। নিয়েছেন নতুন বিলাসবহুল গাড়ি। যুগান্তরের অনুসন্ধানে মৎস্য আড়তে চাঁদাবাজি, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, এলাকায় পুলিশ এসকর্টের ভিডিওসহ নানা তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, তৎকালীন (২০০১-২০০৫) বিএনপি শাসনামলে বাংলাদেশ জিয়া শিশু একাডেমির মহাপরিচালক এম হুমায়ুন কবির নিজের মায়ের নামে নূরজাহান আইডিয়াল গার্লস স্কুল অ্যান্ড কৃষি কলেজ উদ্বোধন করেন। কিন্তু ২০০৮ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে স্কুলের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এম হুমায়ুন কবির কখনো নিজ এলাকা মোকামিয়াতে আসেননি। ২০২৩ সালের ২২ মার্চ হুমায়ুন কবির তার মায়ের নামে নূরজাহান আইডিয়াল গার্লস স্কুল অ্যান্ড কৃষি কলেজের উদ্বোধন করলেও সম্প্রতি কলেজের নাম পরিবর্তন করে খালেদা জিয়া গার্লস স্কুল অ্যান্ড কৃষি কলেজ রাখেন। এরপর এই কলেজ উন্নয়নের নামে শুরু করা হয় চাঁদাবাজি। ছোট ভাই বরগুনার এসপি হওয়ায় এসব কর্মকাণ্ড অনায়াসে ‘জায়েজ’ করে নিচ্ছেন। বরগুনা জেলাসহ বেতাগী উপজেলায় বিএনপির কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবে প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ করার মতো কেউ নেই। আবার পুলিশি হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেন না।
জানতে চাইলে হুমায়ুন কবীর যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার সুনাম নষ্ট করতে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি নির্বাচন করব এমনটা ধরে নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে নানা বানোয়াট তথ্য ফেসবুকে দিচ্ছে। আমাদের স্থায়ী ঠিকানা পটুয়াখালী। আমরা সেখানেই বড় হয়েছি। পরে বরগুনোর চলে আসি। সম্প্রতি আমার ভাই বরগুনার এসপি হিসাবে যোগ দেওয়ার পর বিতর্ক এড়াতে আমি তার বাসায় যাওয়াই বাদ দিয়েছি। পুলিশের কোনো কাজে আমার তার কাছে যেতে হয় না। আমি সরাসরি ডিআইজির সঙ্গেই কথা বলি।’ আপনি পুলিশ প্রটোকল পাওয়ার যোগ্য কিনা-কিংবা আপনাকে যে পুলিশ প্রটোকল দেওয়া হয়েছে সেটা আইনসম্মত মনে করেন কিনা-জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আমার নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহায়তা চাইতেই পারি। তাছাড়া পূজার সময় আমি তারেক রহমান সাহেবের পক্ষ থেকে এলাকায় মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে সহায়তা দিয়েছি। তখন পুলিশ সদস্যরা সঙ্গে ছিলেন। এটাকেই অন্যভাবে প্রচার করা হচ্ছে।’ স্কুলের নাম পরিবর্তন করে আপনি চাঁদাবাজি করছেন কিনা-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্কুলে নাম আরও ২ বছর আগে পরিবর্তন করা হয়েছে। ফখরুল সাহেব ওটা উদ্বোধন করেছেন। মাছের আড়ত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ ঠিক নয়।’ আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি একটি দাওয়াতে গিয়েছিলাম। ওই দাওয়াতে বিএনপির আরও অনেক নেতা ছিলেন। এখন তারা আমার টেবিলে এসে বসলে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সৌজন্যতার কারণেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে।’