নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের একমাত্র সরকারি মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামার। খামারে বিভিন্ন জাতের মহিষ থাকলেও নেই পর্যাপ্ত জনবল। পরিচর্যার অভাবে মহিষের রুগ্নতা ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে দেশের মাংস ও দুগ্ধ উৎপাদনে।
দেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারটি গড়ে উঠেছে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার খুলনা-মোংলা মহাসড়কের সুখদাড়ায়। ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে সালে ১১১টি বিভিন্ন জাতের মহিষ নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় ১০০ একর জমিতে মুররা, নিলিরাভিসহ অন্যান্য জাতের মিলে ছোট-বড় ৪১৮টি মহিষ রয়েছে।
খামারের মূল উদ্দেশ্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে চাষিদের ষাঁড়-মহিষ সরবরাহ করা। গত অর্থবছরে ১৪২টি মহিষ বিক্রি হয়েছে। তবে ৪১৮টি মহিষের সরাসরি পরিচর্যার জন্য ৩৮টি চতুর্থ শ্রেণির পদের বিপরীতে কর্মী রয়েছেন মাত্র চারজন। ফলে যথাযথভাবে শেড পরিষ্কার করা, সময়মতো খাবার দেওয়া ও যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না মহিষগুলোকে। দুধ দোহন ও বিক্রয়সহ অন্যান্য কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিন মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে দেখা যায়, একাধিক শেডে মহিষ রাখা হয়েছে। ষাঁড় ও মা মহিষের পাশাপাশি শাবকদের জন্যও রয়েছে আলাদা শেড। মহিষের স্বাস্থ্য দেখলেই পরিচর্যার ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
মহিষের খাবারের জন্য খামার চত্বরে বিশেষভাবে ঘাস রোপণ করা হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত দুধের গুণগতমান ভালো হওয়ায় প্রতিদিন সকালে ক্রেতাদের লাইন পড়ে। মহিষের দুধ গরুর দুধের চেয়ে চারগুণ বেশি ঘন এবং খাঁটি হওয়ায় ক্রেতারা ভিড় করেন। বর্তমানে প্রতি লিটার দুধ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখানে বছরে ৭০-৮০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদিত হয়।
স্থানীয় চাকরিজীবী মো. আব্দুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘গরুর দুধের তুলনায় মহিষের দুধ ঘন হওয়ায় আমরা এখান থেকে দুধ কিনি। কিন্তু এখানের জনবল কম থাকায় আমরা সবসময় পর্যাপ্ত দুধ পাই না। লাইনে দাঁড়িয়ে দুধ নিতে হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খামারের একজন কর্মচারী বলেন, ‘জনবল কম থাকায় ঠিকমতো মহিষের পরিচর্যা করা সম্ভব হয় না। ঠিকমতো খাবার খাওয়াতে পারি না। এজন্য এরা ধীরে ধীরে রুগ্ন হয়ে পড়ছে।’
এ বিষয়ে মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক শেখ আল মামুন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি শুরুর সময় ৫২ জন জনবল দেওয়া হয়েছিল। তবে গত ৪-৫ বছরে অবসরজনিত কারণে জনবলের সংখ্যা কমে গেছে। মহিষ উন্নয়ন প্রকল্পের জনবল থাকায় এতদিন এই অভাব অনুভূত হয়নি। কিন্তু প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।’
তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তবে চিঠি পাঠানোর ৮-৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে অন্তত ৩০ জন নতুন জনবল পেলেই খামারের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।