রাকিব জোমাদ্দার মহিপুর(পটুয়াখালী ) প্রতিনিধি // পর্যটক কেন্দ্রিক পটুয়াখালীর কুয়াকাটার সৈকতঘেঁষা, কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নামেই শুধু ২০ শয্যার হাসপাতাল। প্রকৃতপক্ষে শয্যা সেবা দেওয়া হয় না এখানে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবলেট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ২ জন ডাক্তার, ৫ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ১জন ওয়ার্ড বয় দিয়েই চলছে হাসপাতালটি। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের বাইরের যত্রতত্র পড়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাশে থাকা পাবলিক টয়লেটগুলোর দরজা ভাঙা, নোংরা ও জরাজীর্ণ। চিকিৎসকের সকল পদই শূন্য। হাসপাতালটিতে নেই কোন ধরনের যন্ত্রপাতি। ওয়ার্ড ও শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। স্বাস্থ্য পরীক্ষারও কোনো ব্যবস্থা নেই। আউটডোরে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক রোগীর চিকিৎসা নেয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার দুই লক্ষাধিক মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে তিন একর জমির ওপর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কুয়াকাটা হাসপাতালটি। মূলত গর্ভবর্তী নারিদের সেবা, স্বাভাবিক প্রসব সেবাসহ বিভিন্ন সেবার কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর কিছুই নেই হাসপাতালে। বর্তমানে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো সেবা দেয়া হচ্ছে না। হাসপাতালে নেই ওয়ার্ড ও ওষুধের বরাদ্দ। শুধু অবকাঠামো হিসেবেই টিকে আছে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি। হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স সংকট ছাড়াও রয়েছে জনবল সংকটও। স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই বলে জানান স্থানীয়রা। হাসপাতাল সূত্র আরো জানা যায়, হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ শূণ্য পদগুলো হলো জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি অ্যান্ড অবস), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া), আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল টেক (ল্যাব), ফার্মাসিস্ট, সিনিয়র স্টাফ নার্স, প্রধান অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী কাম হিসাব মুদ্রাক্ষরিক, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ওয়ার্ড বয়, ল্যাব অ্যাটেনড্যান্ট, আয়া, দারোয়ান, এমএলএসএস, ঝাড়ুদার ও কুক। চিকিৎসা নিতে এসে আক্ষেপ করে ষাটোর্ধ্ব পিয়ারা বেগম বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসা দরকার, আমাদের সেবা দিবে কে? সেবা নিতে আসা মমতাজ বেগম আক্ষেপ করে বলেন, কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি শুধু নামেই আছে, আমাদের এলাকার মানুষের কোন কাজে আসছে না। আমরা অসুস্থ হলে এখান থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে কলাপাড়ায় চিকিৎসা নিতে হয়। আমরা চাই হাসপাতালটি চিকিৎসা দেওয়ার উপযোগী করা হোক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুয়াকাটা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। প্রসূতিদের অস্ত্রোপচারের জন্য একজন গাইনি সার্জন ও একজন অবেদনবিদ প্রয়োজন। রোগীরা জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ২২ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে কলাপাড়া হাসপাতালে যেতে হয়। কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সংকর প্রসাদ অধীকারি বলেন, কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অতিরিক্ত দায়িত্বে দুজন ডাক্তার আছে। তারা নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতালটির কোড তৈরির জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছি। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, অনেক রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জেনেছি মূলত তাদের লোকবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে। লোকবল বৃদ্ধিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো যাতে অতি দ্রুত সংকট কেটে যায়।