
নীলফামারী প্রতিনিধি // নীলফামারীর জলঢাকায় ফেসবুক চ্যাট ও সমকামিতার অভিযোগ এনে এক সেনা সদস্যকে মধ্যযুগী কায়দায় পেটানোর তথ্য সংগ্রহকালে আল আমিন নামে সংবাদকর্মীর উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় জলঢাকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় দিনব্যাপী চলে চরম উত্তেজনা। থানা এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়ন নাড্ডা পাড়ার মাহতাব উদ্দিনের ছেলে সেনা সার্জন মাহমুদুর রহমান (৪২) ৩ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসলে তার বিরুদ্ধে ফেসবুক চ্যাট ও সমকামিতার অভিযোগ এনে তাকে বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী গোলমুন্ডা বাজারে ডেকে নিয়ে গোপন টর্চার সেলে হাতপা বেধে মধ্যযুগী কায়দায় পিটিয়েছে হেলাল নামের কিশোর গ্যাং। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে এবং ওই সোনা সার্জন মাহমুদুর রহমানকে মুমূর্ষ্য আহতবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে জলঢাকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী গিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত কিশোর গ্যাং এর ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, পশ্চিম গোলমুন্ডার আফজাল হোসেনের ছেলে হেলাল (২৫), সিহাব (৩০), মোশারফ হোসেনের ছেলে মেহেদী (২০) ও মোজাম্মেল হকের ছেলে রাকিব (২২)। সেনা সার্জনকে পেটানোর ঘটনায় মনজুর রহমান বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃতরা সহ ১৬ জনের নামে ৮ অক্টোবর জলঢাকা থানায় মামলা দায়ের করেন, মামলা নং ০৯। এছাড়াও আরো ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মাফাজুল ইসলাম আরো বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকে জানান, সকালে সেনা সদস্য মাহমুদুর রহমান কে হেলাল গং ৬ থেকে ৭জন দুষ্কৃতকারী অচেতন অবস্থায় কাঁধে ভাড় করে স্থানীয় পল্লি চিকিৎসকের চেম্বারে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় ওই সেনা সদস্যকে আমরা চিনতে পাই এবং নিয়ে যেতে ও মারতে বাঁধা নিষেধ করলে নির্যাতনকারীরা চড়াও হয় এবং মার মুখি আচরণ করে। তাদের হিংস্র আকৃতি দেখে আমরা তার পরিবারবর্গকে খবর দেই। এর আগে দুষ্কৃতকারীরা সেনা সদস্য মাহমুদুর রহমানকে পুরাতন ইউনিয়ন পরিষদের পাঠাগার বর্তমানে কিশোর গাংয়ের টর্সাল সেল নামে পরিচিত কক্ষে আটকে রেখে বিদ্যুৎতের তার দিয়ে হাত পাঁ বেঁধে ভলিবল খেলার জাল দিয়ে পেচিয়ে পাষবিকভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে ওই আহত সেনা সদস্যকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য জনঢাকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় সেখানে কর্বত্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে ঘটনার তথ্যচিত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে সংবাদ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আইনী সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন-এর নীলফামারী জেলা সভাপতি আল আমিন এর উপর অতর্কিত হামলা চালাই সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় স্থানীয় সংবাদ ও মানবাধিকার কর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ সহ বিএমএসএস এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান খন্দকার আছিফুর রহমান তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা কেবল একজন সাংবাদিকের উপর নয়, এটি ন্যায় ও সত্যের কণ্ঠ রুদ্ধ করার ঘৃণ্য চেষ্টা। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে সারাদেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন তারা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাংবাদিকের ওপর হামলা মামলার প্রস্তুতি চলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানায়, এই কিশোর গাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ পুরা ইউনিয়নবাসি। এমন কোন অপকর্ম নেই যে তারা জড়িত নেই। এই বিষয়ে জলঢাকা থানা অফিসার ইনচার্জ আরজু মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ফেসবুক চ্যাট কেন্দ্র করে এ ঘটনাটি ঘটেছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং গুরুতর আহতবস্থায় সেনা সার্জনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পাঠাই। পরে সেনাবাহিনী আসলে ৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।