ঝালকাঠির নলছিটি পৌর শহরের নলছিটি-বরিশাল সড়ক সংলগ্ন এই মসজিদটি এখন মল্লিকপুর জামে মসজিদ নামে পরিচিত। এটি প্রাচীন মুঘল স্থাপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি উচ্চতায় ৩০ ফুট এবং এর গায়ে নির্মাণকাল হিসেবে ১৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দ লেখা রয়েছে।
মসজিদটির দেয়ালগুলো ৩২ ইঞ্চি পুরু এবং নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে চুন-সুড়কি। আগে মসজিদে একসাথে ৩০-৩৫ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারতেন। তবে এখন স্থানীয়দের সহায়তায় মসজিদের তিন পাশে আলাদা বারান্দা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে প্রায় শতাধিক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হন।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে দক্ষিণাঞ্চলে নৌপথে জলদস্যুদের উৎপাত বাড়ে। এই জলদস্যুদের বিতাড়িত করতে ঝালকাঠির মগর এলাকায় আসেন শাহজাদা সুজা। তিনি সুগন্ধা নদী পাড়ে মাটির নিচে একটি দুর্গ গড়ে তোলেন এবং সৈন্যবাহিনী ও স্থানীয়দের সহায়তায় জলদস্যুদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হন।
স্থানীয়দের অনুরোধে তিনি নদীর অপর পাড়ে নির্মাণ করেন এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি, যা মুঘল আমলের এক অসাধারণ নির্মাণশৈলী হিসেবে আজও টিকে আছে।
মসজিদটি মুঘল শাহ সুজার মসজিদ নামেও পরিচিত। তবে দীর্ঘ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে এর জৌলুস কিছুটা কমে গেছে। এলাকার জনসংখ্যা বাড়ানোর কারণে মসজিদে একসাথে সবার নামাজ আদায়ের জন্য জায়গার সংকুলান হয় না।
মুসুল্লি কামরুজ্জামান সুমন বলছিলেন, ‘এই প্রাচীন নিদর্শনটির রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কয়েক শতাব্দী পুরনো মুঘল নির্মাণশৈলীর একটি অসাধারণ উদাহরণ। তবে যদি সংস্কার না করা হয়, তাহলে হয়ত এটি আর বেশি দিন টিকবে না।’
মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে মগড় ইউনিয়নে অবস্থিত সুজাবাদ কেল্লার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেলেও, শাহজাহানের আমলে নির্মিত এই মসজিদটি এখনও আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরব বহন করে টিকে আছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা এখানে নামাজ পড়তেন, সেই সময় এলাকার মসজিদের সংখ্যা ছিল অনেক কম। কিন্তু এই মসজিদটি সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে এবং এটি রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাচীন নিদর্শনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের। আমরা তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি এবং উপজেলা প্রশাসন থেকেও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা প্রদান করা হবে।’
আজও এই মসজিদটি মুঘল আমলের ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশিল্পের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, যা সময়ের সঙ্গে নিজের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব হারায়নি।