পৌরসভা এলাকায় সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনায় পৌরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডাকাতদের প্রতিহত করতে পৌরসভার অর্জুন্দী, ভট্টপুর, বানীনাথপুর, ষোলপাড়া ও নোয়াইলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত গ্রামবাসী কয়েকটি গ্রুপ করে পর্যায়ক্রমে এ পাহারার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, সোনারগাঁ পৌরসভার নোয়াইল গ্রামের মুদি দোকানী মামুন মিয়ার বাড়িতে গত ১৬ মার্চ রাতে ডাকাতি হয়। ডাকাতরা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল সেটসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নেয়। এছাড়া ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় ব্যবসায়ীর স্ত্রী মনি আক্তারকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়।
এর পরদিন একই এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে দুই ডাকাত গণধোলাইয়ের শিকার হয়। একই দিনে লাহাপাড়া গ্রামের দুবাই প্রবাসী আজিজুল ইসলামের বাড়িতে দিনদুপুরে ডাকাতি করতে গিয়ে আরও এক ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা। ডাকাতের ছুরিকাঘাতে প্রবাসীর স্ত্রী লাবন্য আক্তার আহত হন।
এদিকে গত ৩০ মার্চ মোগরাপাড়া রতনদী এলাকায় দেশীয় অস্ত্রসহ দুই ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেন এলাকাবাসী। ১ এপ্রিল সোনারগাঁ পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা আমির হোসেন ভূঁইয়া ও তার চাচাতো ভাই দলিল লেখক আব্দুর রউফ ভূঁইয়ার বাড়িতে ডাকাতির হুমকি দিয়ে বাড়ির দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে দেয় ডাকাত দল। এর আগে ২৫ মার্চ চিঠি পাঠিয়ে একই হুমকি দেয় ডাকাতরা।
মূলত একের পর এক ডাকাতি, ডাকাতির হুমকি ও ডাকাত আটকের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফলে গ্রামবাসী প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়াই নিজ উদ্যোগে তাদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য গ্রুপ করে পাহারার ব্যবস্থা করে।
অর্জুন্দী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ জানান, ২৫-৩০ জন লোক লাঠিসোটা ও টর্চলাইট হাতে একত্রিত হয়ে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন। গ্রামের মানুষকে একত্রিত করে সাতটি দলে ভাগ করে প্রতিদিন পাহারা দেওয়া হচ্ছে। তারা গ্রামের প্রতিটি বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। কোথাও চিৎকার চেঁচামেচি শুনলে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলে তার দিকে লক্ষ্য রাখছেন।
অর্জুন্দী গ্রামের বাসিন্দা মইনুল ইসলাম বলেন, ‘পাহারা দেওয়ার পর থেকে আগের মতো অপরিচিত কেউ আর গ্রামে ঢোকেন না। এক সময় ডাকাতের পাশাপাশি মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী ও অপরিচিত মানুষ গাড়ি নিয়ে চলাচল করত। এখন সেটা দেখা যায় না।’
বানীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা মিমরাজ আহমেদ বলেন, ‘ডাকাতরা শুধু সম্পদ লুট করে না, মানুষকে কুপিয়ে জখমও করে। তাই আতঙ্কটা বেশি। ডাকাতি প্রতিরোধে রাত ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত পাহারা দেওয়া হচ্ছে।’
সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, ‘গ্রামবাসীর নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেরাই পাহারা দেওয়ার বিষয়টি প্রশংসনীয়। পুলিশের জনবল কম তাই সব স্থানে যাওয়া সম্ভব হয় না।’
সবার প্রতি নিরাপত্তা জোরদার করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের এ কাজে পুলিশ সহযোগিতা করবে।