মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি।।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দু’টি গ্রাম সর্বমহলের কাছে ডাকাত কান্দি হিসাবে পরিচিত। এই ডাকাত কান্দির কিশোর ও যুবকদের পেশাই হলো চাদাবাজী, ডাকাতি, গরু চুরি আর ছিনতাই করা। অতিষ্ঠ গ্রামবাসীর পক্ষে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন আকন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন নান্নু সিকদার, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এর সভাপতি আবুল কাশেম বয়াতি, হোসেন বয়াতি ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, আমরা ডাকাত দলের কাছে জিম্মি। ডাকাতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা এবার ডাকাত কান্দি নাম ঘুচাইতে চাই। কলঙ্কমুক্ত হইতে চাই। আমরা কোথাও নিজের এলাকার পরিচয় দিতে পারছি না। আমাদের লজ্জ্বা হয়। শত চেষ্টা করেও ডাকাতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। এদের কারনেই এই অঞ্চলের ছেলে মেয়েদের বিয়ে সাদি দিতে পারছি না। দেশের যেখানেই যাই, মানুষ বলে তোমাদের বাড়ি কি ডাকাত কান্দি। ওদের কাছে গোটা ইউনিয়নবাসী জিম্মি। কালেভদ্রে দুই একজন প্রশাসনের হাতে আটক হলেও জামিনে বের হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে যায়।
বুধবার (৭ই মে) সকাল ১১টায় কালীগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির আয়োজনে উপজেলার ১২নং দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে কথিত ওই ডাকাত কান্দির স্বতন্ত্র হাফেজিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় নৌ-পথে ডাকাতি ও চাঁদাবাজি রোধকল্পে মতবিনিময় সভায় এসকল কথাগুলো বলেন স্থানীয় বক্তারা।
মেহেন্দিগঞ্জের কালীগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি পিপিএম -সেবা ইনচার্জ ম.এনামুল হক সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজুর রহমান। নৌ-পুলিশের ইনচার্জ ম. এনামুল হক বলেন, এই অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজির কারনে ছেলে মেয়ের বিয়েও হয় না। বাধ্য হয়ে ডাকাতের মেয়ে ডাকাতের ছেলের কাছে বিয়ে হয়। আমরা জানি এখানে দেওয়ান বংশের লোকগুলো ডাকাতির সাথে জড়িত। দেওয়ান বংশের প্রায় ৫শতাধিক ভোটার রয়েছে আর ডাকাতের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ৩০জন। ডাকাত নির্মূলে আপনারা প্রশাসনকে সহযোগিতা করুন। ডাকাতদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে বলেন আপনার ছেলেকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনেন প্রয়োজনে তাদের কর্ম-সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। না শুনলে
কঠোর হস্তে দমনের হুশিয়ারি দেওয়া হয়। চুরি,ডাকাতি ও চাঁদাবাজির পথ থেকে ফিরে না আসলে তাদের অভিভাবকদেরও অপরাধের সহযোগী হিসেবে আইনের আওতায় আনার হুশিয়ারী দেন। সভায় ডাকাত প্রতিরোধকল্পে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই অঞ্চলে প্রশাসনের অভিযান ধারাবাহিক চলবে।
সভার বিশেষ অতিথি থানা পুলিশ এস আই বিল্লাল হোসাইন বলেন, এই অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করতে আসলে অপরাধীরা আগাম জেনে যায়, এখানে অভিযান পরিচালনা করতে এসে হামলার শিকার হয়েছেন মেহেন্দিগঞ্জের তৎকালীন ইউএনও শাহাদাত হোসেন মাসুদ, নৌ-পুলিশ, মৎস্য অফিসের স্টাফ, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, থানা পুলিশসহ আরো অনেকে।
প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজুর রহমান বলেন, আপনার সন্তানের খোঁজ খবর আপনার রাখতে হবে, প্রশাসনের পক্ষে একা ডাকাত নির্মূল করা সম্ভব নয়। আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। ২০২৫ সালে এসে এমন ডাকাতি হয় । আমি এখানে এসে অবাক হলাম। এটা মনে হয় বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। যারা ডাকাতিকে পেশা হিসাবে নিয়েছেন তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
প্রসঙ্গত মেহেন্দিগঞ্জের দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডকে ডাকাত কান্দি বলা হয়। এখানকার ডাকাতরা মেঘনা, গজারিয়া, ইলিশা ও কালাবদর নদীতে অহরহ ডাকাতি আর চাঁদাবাজি এবং নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। সর্বোশেষ গত এক সপ্তাহে মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা, গজারিয়া ও ইলিশা নদীতে ১০-১৫টি মালবাহী জাহাজে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
শত শত নৌযানে হয়েছে চাঁদাবাজি। গরু চুরি হয়েছে ১০-১৫টি। ডাকাতদের হামলায় বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।