আজ বুধবার (২৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন নিহতের বাবা আবু ছালেক মাস্টার। সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকান্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক অপরাধিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
নিহত ইতি আফরিন সম্পা বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের চাউলাকাঠি গ্রামের আবু ছালেক মাস্টারের ছোট মেয়ে। চলতি বছরের গত ৭ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকালে বড়মগবাজারে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের ষষ্ঠ তলার ৬০৩ নম্বর কক্ষ থেকে ইতির ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য নিহতের বাবা মো. আবু ছালেক মাস্টার বলেন, ‘২০২১ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর ইতি আফরিন সম্পা ঢাকার বড়মগবাজারে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রীনিবাসের সুপার হিসেবে যোগদান করেন। তার চাচাতো বোন একই স্কুলে শিক্ষক পদে চাকরি করার সুবাধে দুজনেই হোস্টেলের ৬ষ্ঠ তলার ৬০৩ নম্বর রুমেই থাকতো।
চলতি বছরের ৬ জুলাই বিকালে সম্পার সাথে তার পরিবারের সদস্যদের কথা হয়। এরপর রাতে ফোন করার কথা বলে ইতি ফোন কেটে দেন। ওই রাতে আর ফোন না করায় পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার ইতির মুঠোফোনে কল করে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তার রুমমেট চাচাতো বোন মাহফুজাকে ফোন দিলে সে তার ভাইয়ের বাড়িতে গেছে বলে জানায়।
নিহতের বাবা অভিযোগ করে বলেন, ‘ইতি ফোন রিসিভ না করার কারণ জানতে চাইলে মাহফুজা বলে ‘আপনার মেয়ে ফোন ধরে না কেন আমি কিভাবে বলবো, আপনি ঢাকায় এসে দেখেন বলে ফোন কেটে দেন।’ পরবর্তীতে আমি ও আমার স্বজনরা ঢাকায় রওয়ানা হই। পথিমধ্যে আমার দুই শ্যালক এবং শ্যালকের বৌ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাকে জানায় ইতি আর নেই। আমি ঢাকায় গিয়ে দেখতে পাই ইতি ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলে আছে। ডান পা খাটের ওপরে হাটু ভাজ করা এবং বাম পা অনেকটা খাটের নিচে ঝুলানো। হাত দুটি ওপরের দিকে তোলা। সমস্ত বিছানা এলোমেলো এবং মেঝেতে রক্ত পড়ে আছে।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরে রমনা মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। পাশাপাশি এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল হলে ইতির দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করে পুলিশ। মোবাইল ফোন দুটি একসপ্তাহ পরে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। কিন্তু আদৌ সেই মোবাইল ফোন দুটি ফিরিয়ে দেয়নি। ঘটনার শুরুতে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ যতটা সক্রিয় ছিল দিন পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তাদের কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবু ছালেক মাস্টার বলেন, ‘ঈদের ছুটেতে সবাই যখন বাড়ি চলে গেছে ইতিও ঘটনার দুদিন আগে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল। এজন্য সে ঢাকা সদরঘাটেও এসেছিল। কিন্তু কোন একজনের ফোন পেয়ে সে বরিশালে না এসে হোস্টেলে ফিরে যায়। ইতি ওইদিনই বিষয়টি আমাদের মুঠোফোনে জানিয়েছিল। কিন্তু কে তাকে ফোন করে সে বিষয়টি জানায়নি। এরপরেই তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের বাবা আবু ছালেক মাস্টারসহ তার পরিবারের দাবি, ইতির চাচাতো বোন মাহফুজা এবং হোস্টেলের কেয়ারটেকর হারুন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে। তাই তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে ইতির চাচাতো বোন বড়মগবাজারে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মাহফুজা আক্তারের মুঠোফোনে একাধিক কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
এ প্রসঙ্গে, অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক নারায়ণ সরকার বলেন, ‘ইতির ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে আসেনি। তাছাড়া জব্দকৃত তার মুঠোফোন দুটি নিয়ে তদন্ত করছে সিআইডি বিভাগ। সেখান থেকেও কোন রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। ময়না তদন্ত এবং সিআইডি’র রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘যেই রুমে ইতির মৃতদেহ ঝুলছিল সেই রুমের দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল। নিহতের মামাসহ অন্যান্য স্বজনরা দরজা ভেঙে মৃতদেহ দেখতে পেয়ে আমাদের খবর দেয়। এ কারণে প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে ধারনা করা হচ্ছে। তার পরেও ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ বেরিয়ে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাবা ছাড়াও নিহত ইতি আফরিন সম্পার মা লাভলী ইয়াসমিন সেফালী, বড় ভাই সাইফুল ইসলাম এবং ভাগ্নি অনন্যা ইয়াসমিন বৃষ্টি উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply