শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট // দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাটের ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের পাইরি ডাইজা ইকো পার্কের জন্য বাগেরহাটে তৈরি করা হচ্ছে কাঠের ঘর। বাগেরহাট সদর উপজেলার সিএনবি বাজার সংলগ্ন করোরি গ্রামে ন্যাচারাল ফাইবার নামের একটি কারখানায় ঘরগুলো তৈরি হচ্ছে। ঘরের কাঠামো, দরজা, জানালা এবং আসবাবপত্র তৈরি করা হচ্ছে আম, জাম, মেহগনিসহ দেশি সব গাছের কাঠ দিয়ে।
সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এ ঘরের একটি স্যাম্পল পছন্দ করেছেন বিদেশি ক্রেতারা। এর মধ্য দিয়ে কাঠের তৈরি ঘর রপ্তানিতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলল বাংলাদেশের। আগামী বছর ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে ১২০টি কাঠের ঘর রপ্তানি হবে ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে গ্রিসের কোকোম্যাট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেলজিয়াম থেকে কাঠের ঘর তৈরির অর্ডার পায় বাগেরহাটের ন্যাচারাল ফাইবার নামক প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে কাঠের ঘরের স্যাম্পল তৈরি শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। কাঠের তৈরি স্যাম্পল ঘরটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পছন্দ হওয়ায় চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের মধ্যে ১২০ টি ঘর তৈরি করে রপ্তানির জন্য কাজ শুরু করেছে ন্যাচারাল ফাইবার নামের এই প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিন ন্যাচারাল ফাইবার কোম্পানির কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘরের মূল কাঠামো সহ দরজা, জানালা ও আসবাবপত্র। শ্রমিকদের মধ্যে কেউ মেশিনে কাঠ কাটছেন, কেউ ফিটিং করছেন আবার কেউ কাঠের উপর ডিজাইন করছেন। সবশেষে শ্রমিকদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব কাঠের ঘরের বিভিন্ন অংশ। এই অংশগুলোকেই জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আস্ত কাঠের ঘর। প্রতিটি ঘর ১১ মিটার লম্বা এবং চওড়া সোয়া ৪ মিটার। দুটি বেডরুমে মোট পাঁচজন থাকার উপযোগী এ ঘর সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ঘরের একপাশে একটি বারান্দা, বেডরুমের সাথে বাথরুম ও বসার ঘর রয়েছে। বসার ঘরে টেলিভিশন দেখার ব্যবস্থা এবং ঘরের ভেতরেই রান্না করারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঘরের প্রতিটা অংশ খুলে প্যাকিং করে পাঠানো হবে বেলজিয়ামে।
কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার শংকর বিশ্বাস বলেন, আমরা এখানে যে ঘর তৈরি করছি তা বিশ্বমানের পরিবেশবান্ধব ঘর। ক্রেতাদের ডিরেকশন অনুযায়ী আমরা প্রথমে যে ঘরটি কমপ্লিট করেছি সেটি ক্রেতারা পছন্দ করেছেন। এর মাধ্যমে কাঠের তৈরি ঘর রপ্তানিতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে। আমাদের কাছ থেকে তারা মোট ১২০ টি ঘর ক্রয় করবেন। আমরা অত্যন্ত যত্ন সহকারে কাজ করছি যাতে ইউরোপের বাজারে আমাদের চাহিদা আরো বৃদ্ধি পায়।
পাইরি ডাইজা ইকো পার্কের প্রধান স্থপতি পেসেল ডি বেক বলেন, আমরা এখানে এসেছি কারণ আমরা খুঁজে পেয়েছি এখানের মানুষ কারুশিল্পে দক্ষ। এছাড়া এই এলাকার কাঠও খুবই উন্নত। আমরা এই কাঠের বাড়িগুলোয় থেকেছি, তবে সেখানে অবশ্যই মশার ভয় ছিলো। আমাদের দেশে এতো মশা নেই। তবে আমরা বাড়িগুলোতে থেকেই খুবই শান্তি পেয়েছি। কাঠের ঘর হওয়ায় এর মধ্যে থাকতে খুবই প্রশান্তি লেগেছে, মনে হয়েছে প্রকৃতির কাছেই আছি। বাংলাদেশী কাঠমিস্ত্রিদের দক্ষতা অনন্য। আমরা মনে করছি সামনে আরো প্রজেক্ট আমরা আনতে পারবো।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাচারাল ফাইবারের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, এই প্রোডাক্টটি বেলজিয়ামের পাইরি ডাইজা ইকো পার্কের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। কোকোম্যাট নামে গ্রিসের একটি প্রতিষ্ঠান পাইরি ডাইজার কাছ থেকে কাজটি আমাদের এনে দিয়েছে। আমরা ক্রেতাদের ডিরেকশন ও ডিজাইন অনুযায়ী একটি আস্ত ঘর তৈরি করে দেখিয়েছি। ক্রেতারা আমাদের যে ডিজাইন ও ডিরেকশন দিয়েছে সে অনুযায়ী কাজ হয়েছে কিনা সেটি তারা যাচাই করে দেখেছে। ক্রেতারা এই ঘরে রাত্রি যাপন করেও সন্তুষ্ট হয়েছেন। আগামী বছর জুন মাসের ভেতর মোট ১২০ টি ঘর তৈরি করে তাদেরকে দিতে হবে। আমাদের লোকজন গিয়ে পাইরি ডাইজা ইকো পার্কে ঘরগুলো সেট করে দিয়ে আসবে।
তিনি আরো বলেন, কাঠের সাথে ঘরের যেসব ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল জিনিসপত্র ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড হতে হবে। আমরা প্রাথমিকভাবে স্যাম্পল ঘরে বাংলাদেশের লোকাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করেছি। এই একই প্রোডাক্টগুলো আমরা ইউরোপ থেকে কিনে সাপ্লাই দিব। ঘরের একেক অংশে একেক রকম কাঠের প্রয়োজন হয়। আমাদের দেশি কাঠের পাশাপাশি আফ্রিকার ঘানা থেকেও কাঠ কিনে এই ঘরের একটি অংশে ব্যবহার করবো।