
নিজস্ব প্রতিবেদক // দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টিকে দরকার বলে মন্তব্য করেছেন দলটির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে এসেছে, অর্থনীতি স্থবির হয়ে আছে। সুতরাং, আমরা মনে করি আজকে জাতীয় পার্টিকে দরকার। জাতীয় পার্টির একটা ভবিষ্যৎ আছে। জনগণের কাছে আমাদেরকে যেতে হবে।’
শনিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতারা গত ৯ আগস্ট দলের দশম কাউন্সিল আয়োজন করেন। সেখানে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সাম্প্রতিক কার্যক্রম তুলে ধরে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘পার্টির প্রেসিডিয়াম মিটিংয়ে আমরা কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছিলাম। যার মধ্যে ছিল পার্টির গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। গঠনতন্ত্রের ২০ এর ১ (ক) ধারা বিলুপ্ত করা, নোটিশ ছাড়া কাউকে যেন পার্টি থেকে বের করে না দেয়ার নিয়ম, অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করা এবং পার্টির খরচে স্বচ্ছতা আনা। আরেকটি বিষয় ছিল, আমাদের জাতীয় পার্টি থেকে যারা বিভিন্ন কারণে চলে গেছেন, তাদের সবাইকে আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতবছর ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পরে রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর অভ্যন্তরীণ কোনো আন্দোলনে এত লোক মারা যায়নি। এই জীবনগুলো বৃথা যেতে পারে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হলেও অনিশ্চয়তা কাটেনি উল্লেখ করে প্রবীণ রাজনীতিক আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। তারা দেশ চালাচ্ছে। কিন্তু আজকে বলতে বাধ্য হচ্ছি, দেশ আজকে এক বছর পরেও অনিশ্চয়তা থেকে উত্তরণ পায়নি। তাই আমরা মনে করেছি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের সামনে আসতে পারলে হয়তো জাতিকে কিছু দিতে পারব এবং জনগণও আমাদের গ্রহণ করবে।’
মানুষ কেন জাতীয় পার্টিকে গ্রহণ করবে, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আমাদের যে সাড়ে নয় বছরের শাসন, সেখানে আজকে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, এই সংস্কারের অনেকগুলো আমরা করেছিলাম বা করার চেষ্টা করেছি।’
এরশাদ সরকারের সময়কার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এই দেশের উন্নয়নকে যদি কেউ পরীক্ষা করে দেখে, তখন দেখবে আমাদের জাতীয় পার্টির সাড়ে নয় বছরে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন আমরা করেছি।’
ক্ষমতার প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি বর্তমানে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। কীভাবে ক্ষমতা দখল করা যায় সেটাই এখন প্রশ্ন। আমাদের দেড় হাজার ছেলে-মেয়ে তাদের রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে। এটা কি শুধু কোনো একটি গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় আনার জন্য? কেবল ক্ষমতা বদলের জন্য?’
তিনি বলেন, জনগণের গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই সংস্কার সম্ভব। ‘যত শিগগিরই সম্ভব, আমরা সংসদ নির্বাচন চাই। তবে যেকোনো রকমে একটি নির্বাচন করে দেয়া আমরা চাই না। আমরা চাই সেই নির্বাচন, যেটি নিরপেক্ষ হবে, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, স্বচ্ছ হবে এবং যেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে।’
বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সবচেয়ে জরুরি হলো বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তিশালী করা এবং আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। কারণ আইনশৃঙ্খলা যদি ঠিক না থাকে, নির্বাচন ঠিক হবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মুজিবুল হক চুন্নু, আবু হোসেন বাবলাসহ দলের অন্যান্য নেতারা।