উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি // নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় গ্রাম্য সাালিসে এক নববধূর (১৯) ‘সম্ভ্রমের মূল্য’ প্রথমে ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা! পরে তা নেমে আসে ৩০ হাজারে। তারপরও অভিযুক্তের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় দুই দফায় গ্রাম্য সালিস হলেও একটি টাকাও দেওয়া হয়নি নববধূর পরিবারকে। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, গত (২২ জুন) নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামে ঘটে এ ঘটনা।
অভিযুক্ত আহাদ মোল্যা (৩৫) উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন মোল্যার ছেলে ও অপর অভিযুক্ত রানা মুসাল্লী ওরফে ফেলা (৩০) একই গ্রামের মহিদুল মুসাল্লির ছেলে।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২২ জুন সকাল ১১টার দিকে উপজেলার চাঁচুড়ী বিল এলাকায় মৎস্য ঘেরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে বের হন এক নববধূ। এ সময় ওই মৎস্য ঘেরে উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের আহাদ মোল্যা ও একই গ্রামের রানা মুসাল্লী ওরফে ফেলা ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে ধরে দূরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করেন ও হত্যার হুমকি দেয়। পরে আহাদ মোল্য ওই নববধূকেও চড়-থাপ্পড় মেরে শ্লীলতাহানি করে ও ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, আইফোন ও নগদ কিছু টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আহাদ মোল্যা ও রানা মুসাল্লীকে অভিযুক্ত করে কালিয়া থানায় ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। তবে রহস্যজনক কারণে ঘটনার প্রায় ৯ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আহাদ মোল্যা ও রানা মুসল্লির সঙ্গে যোগাযোগ এর চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ঘটনার দুইদিন পর ২৪ জুন রাতে চাঁচুড়ী গ্রামের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা ফসিয়ার রহমান শেখের বাড়িতে প্রথম দফার গ্রাম্য সালিশে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই গ্রাম্য সালিশে প্রতিপক্ষের সালিশদার চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত আহাদ মোল্যার বড় ভাই প্রভাবশালী মো. আশরাফুল ইসলাম জরিমানার টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় পুণরায় শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে বিষয়টি মীমাংসা করতে কৃষ্ণপুর-ডহর চাঁচুড়ী সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ডাকা সালিসে সাবেক চাঁচুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, চাঁচুড়ী ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সভাপতি নাজির হোসেন মোল্যা, কালিয়া উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী ও স্থানীয় মাতব্বর হারুন অর রশীদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নববধূর ‘সম্ভ্রমের মূল্য’ পুণনির্ধারণ করেন ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ভুক্তভোগী নারীর পরিবার সালিসের এ রায় প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে ২য় দফায় সালিস বৈঠক করেও বিষয়টি মীমাংসায় ব্যর্থ হন স্থানীয়রা।
সালিস বৈঠকের আহব্বায়ক সাবেক চাঁচুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে সালিসের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ঘটনাটি
স্পর্শকাতর হওয়ায় গ্রামের ইজ্জতের কথা চিন্তা করে সামাজিকভাবে এলাকার লোকজন নিয়ে দুইবার সালিস-বিচার করেছি। প্রথমে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও অভিযুক্ত পক্ষ মানেনি। বিধায় ২য় দফায় জরিমানা ৩০ হাজার টাকা পুণনির্ধারণ করা হয়েছে। এলাকার গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত থেকে বিচার করেছেন বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ওই দিন খবর পেয়ে বিষয়টি থানার ওসিকে জানান তিনি। এরপর ঘটনার দুইদিন পর উভয়পক্ষ ঘটনাটি মিটিয়ে ফেলতে সালিসে বসেন স্থানীয় মাতব্বররা। অভিযুক্তের পরিবারকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও অভিযুক্ত পক্ষ মানেনি। বিধায় ২য় দফায় শনিবার জরিমানা ৩০ হাজার টাকা পুণনির্ধারণ করা হয়েছে। আবার এটিও ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন মেনে না নেওয়ায় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় উভয়পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদের সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে কালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, চাঁচুড়ী বিল এলাকায় মৎস্য ঘেরে মারধর করে শ্লীলতাহানির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এক ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী দুইজনকে আসামি করে থানায় মামলা।