নিজস্ব প্রতিবেদক // বরিশাল রেঞ্জ কার্যালয় থেকে তুলে নেওয়ার দুইদিন পরে পুলিশ কর্মকর্তা আপেল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত হয়েছেন, এমন একজন জনৈক ব্যক্তির স্বজনদের মামলায় পুলিশের ৩১তম বিসিএস কর্মকর্তা আপেলকে গ্রেপ্তার দেখাল ঢাকা মহানগর পুলিশ। এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে এএসপি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) পদমর্যাদার এই কর্মকর্তাকে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের কার্যালয় থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু একদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর সন্ধান পাচ্ছিলেন না স্বজনেরা। এই খবর জানাজানি হলেও বুধবার রাত থেকেই তথ্য অনুসন্ধান শুরু করে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। এনিয়ে মধ্য রাতে বরিশালের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন পত্রিকা ‘বরিশালটাইমস’ ‘বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের কর্মকর্তাকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ’, শিরোনামে একটি খবরও প্রকাশ করে।
বৃহস্পতিবার সকালে খবর আসে, বরিশালের এই পুলিশ কর্মকর্তা আপেলকে রাজধানী যাত্রাবাড়ি থানা আওতাধীন এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত একজনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এবং তাকে সংশ্লিষ্ট আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
অবশ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন বলছে, আপেল উদ্দিনকে মঙ্গলবার দুপুরে নয়, বুধবার রাতে বরিশাল মহানগরী এলাকা থেকে আটক করা হয়। তিনি হত্যা মামলার আসামি, যাত্রাবাড়ি থানায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। এবং তার বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. শরিফুর রহমান দুইদিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাবাদের অনুমতি দেন।
পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ওয়াফা নুসরাত বুধবার সন্ধ্যায় জানিয়ে ছিলেন, একদিন আগে অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুরে আলেপ উদ্দিনকে তুলে নেওয়ার সময় তিনি ফোন করেছিলেন। এবং বলেছিলেন, বরিশালের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
ওই রাতেই নুসরাত দাবি করেছিলেন, আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, তারপরেও তাঁকে কর্মস্থল বরিশাল রেঞ্জ কার্যালয় থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এবং কোথায় রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানতে পারছেন না। আইনি বাধ্যবাধকতা তুলে ধরে বলেছিলেন, ইতিমধ্যে ২৪ ঘণ্টার অনেক বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু আপেলের সন্ধান মিলছে না।
কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর আটক বা গ্রেপ্তারের কারণ এবং তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছে, সেটি পরিবারকে জানানোর বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা আপেল উদ্দিনের ক্ষেত্রে যেনো আইনের ব্যত্তয় ঘটল।
গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডের খবরে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী দাবি করেন, আলেপ উদ্দিন পুলিশের ৩১তম বিসিএস কর্মকর্তা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তিনি পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্মরত ছিলেন। এবং তিনি আওয়ামী লীগের শাসনামলে কোনোরূপ অমকর্মের সাথে জড়িত নন, তারপরেও তাকে ফাঁসানো হয়েছে, যা অমানবিক।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র, গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, আপেল উদ্দিনকে বুধবার রাতে বরিশাল শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ি থানায় হত্যার মামলা আছে, সেই মামলায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এবং তার বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত দুইদিনের মঞ্জুর করেন।
আপেলের স্ত্রীর অভিযোগ, তার স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের আগে কিছু বলা অসম্ভব। তাছাড়া পুলিশ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ-মামলা ব্যতিত কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করছে না।
এদিকে বরিশাল পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আপেল উদ্দিন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরিভাবে জড়িত ছিলেন। এবং ছাত্রলীগ কোটায় পুলিশে চাকরি করতে গিয়ে আওয়ামী লী সরকারের লেজুরবৃত্তি করাসহ কর্মস্থলে বিরোধী মতের কর্মকর্তাদের কোনঠাসা করে রাখতেন। তার বিরুদ্ধে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও অপদস্ত করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।