নিজস্ব প্রতিবেদক // বরিশালে বছরের পর বছর ফিটনেসবিহীন অবৈধ গাড়ি সড়কে দাপিয়ে বেড়ালেও তেমন কোনো কার্যকরী ব্যবস্থার ঘটনা চোখে পড়ে না। কেবল সড়ক দুর্ঘটনার পরই শোনা যায় গাড়ির কাগজপত্র সঠিক ছিল না বা ফিটনেস নেই। এমনকি ড্রাইভারের লাইসেন্সও নেই। এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, পিকআপ, মিনি পিকআপ, মাইক্রোবাস ও থ্রি-হুইলার।
ফিটনেসবিহীন অবৈধ এসব গাড়ির কারণেই প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। যাত্রীবাহী এসব যানবাহনে ট্রাফিক পুলিশের শতভাগ কার্যকরী পদক্ষেপই কমাতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা বলে মনে করে সুশীল সমাজ। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্নকথা। বরিশাল নগর ও জেলায় চলাচলকারী কয়েক হাজার গাড়ির মধ্যে ফিটনেসবিহীন অবৈধ গাড়ির ছড়াছড়ি। এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ মাঝেমধ্যে লোকদেখানো অভিযান চালালেও তেমন কোনো কাজে আসে না।
বিআরটিএ বরিশাল দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বরিশালে নিবন্ধিত ৭৪০ ট্রাকের মধ্যে ৩৭০টির কাগজপত্রই মেয়াদোত্তীর্ণ। এগুলোই আবার বীরদর্পে চলছে সড়ক-মহাসড়কে। একই অবস্থা বাস-মিনিবাসের। বরিশালে নিবন্ধিত প্রায় ৮০০ বাস-মিনিবাসের মধ্যে ৩৪০টির ট্যাক্স টোকেন রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে বহু আগে।
বরিশালের দুই বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, নথুল্লাবাদ মালিক সমিতির অধীনে মোট বাস-মিনিবাস রয়েছে ২০০টি। অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে এগুলো দৈনিক আড়াইশ থেকে তিনশো ট্রিপ দেয়। রূপাতলী বাস মালিক সমিতির অধীনে থাকা ১১৪টি বাস-মিনিবাস দৈনিক ট্রিপ দেয় ৩শর বেশি।
এ হিসাবে গত পাঁচ মাসে এসব বাস-মিনিবাস অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে লাখোবারের বেশি যাতায়াত করেছে। প্রতিবারই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করা এ বাস-মিনিবাসগুলোর মধ্যে ৩৪০টির রুট পারমিট বা হালনাগাদ ট্যাক্স-টোকেন নেই। একই অবস্থা ট্রাকের ক্ষেত্রেও। এখানে বিআরটিএ-এর নিবন্ধন পাওয়া ৭৩৮ ট্রাকের মধ্যে ৩৬০টির নেই বৈধ কাগজপত্র।
এছাড়া বরিশালে ভাড়ায় চলা ৩৫০ মাইক্রোবাসের বেশির ভাগের ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন নেই। বরিশাল নগরীতে সবচেয়ে বেশি চলাচলকারী প্রায় ২০ হাজার থ্রি-হুইলার চলে বিট বাণিজ্যে। কাগজপত্র বা ফিটনেস না থাকলেও থ্রি-হুইলারগুলো মালিক সমিতির সভাপতি শাহরিয়ার আহমেদ বাবু ও সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান দুলালের মাধ্যমে চলাচল করে।
বরিশাল থ্রি-হুইলার মালিক সমিতির এক সদস্য বরিশালটাইমসকে বলেন, সড়কে চলতে হলে ট্রাফিক বিভাগকে খুশি রাখতে হয়। লেনদেনের বিষয়ে নাইবা বললাম, পুলিশ টহলের জন্য গাড়ি দিতে হয়। ভাড়ায় চলা প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস মালিকদেরও দিতে হয় গাড়ি। সঙ্গে মাসিক বিটের টাকা তো রয়েছেই। কোনো কারণে দিতে ব্যর্থ হলে দেয় মামলা। এদিকে পিকআপ, মিনি পিকআপগুলো চলাচল করে সার্জেন্টদের বিট দিয়ে।
নগরীর বাংলাবাজারের পিকআপ ড্রাইভার আলাউদ্দিন বরিশালটাইমসকে বলেন, অনেক বছর ধরে আমার গাড়ি মেয়াদোত্তীর্ণ। নবায়ন করাতে লাখ টাকার ওপরে লাগবে। তাই মাসিক এক হাজার টাকা বিট দিয়েই চলি। একই কথা বলেন ট্রাক ড্রাইভার মোসলেম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি যে ট্রাকটি চালাই, সেটা নবায়ন করাতে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাগবে।
তাই ট্রাকের মালিক বিটের মাধ্যমে চালায়। তাছাড়া গাড়ির কাগজপত্র আছে কি না, সেটা দেখার আগে দেখে গাড়ি বিটের আওতায় কি না। এজন্য গাড়ির কাগজপত্র ঠিকঠাকের আগে তারা বিটের আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য বলেন, পরিবহণে অভিযান চালাতে হলে সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশের প্রয়োজন হয়। ইচ্ছা হলেই এসব গাড়িতে আমরা অভিযান পরিচালনা করতে পারি না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বরিশালটাইমসকে বলেন, যেখানে টুপাইসের মাধ্যমে অবৈধকে বৈধ করা যায়, সেখানে এসব যানবাহনকে পুরোপুরি ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আনা জরুরি। অন্যথায় এগুলো রোধ করা সম্ভব নয়।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত। তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। গত মাসেও শতাধিক গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আর বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল সম্ভব নয়।
এসব গাড়ি চললে জেলায় চলতে পারে। তাছাড়া অনেকটা আক্ষেপ করে তিনি বলেন, বিআরটিএ অফিসের কেন কোনো ভূমিকা নেই? তারাও তো অভিযান চালাতে পারে। এদিকে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে এখন অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ গাড়ি আইনের আওতায় আনব।