নিজস্ব প্রতিবেদক // ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির সময় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রসহ ডাকাতদলের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গৌরনদী থানা পুলিশ। পাশাপাশি এ সময় তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত কিছু স্বর্ণালংকার ও টাকা উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, গৌরনদী থানার কেফায়েতনগর এলাকার একটি বসতবাড়িতে গত ১১ জুন মধ্যরাতে ডাকাতদল হানা দেয়।
এ সময় তারা বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ওই ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে এবং বাড়ির সব সদস্যের হাত-পা ও মুখ কাপড়ের ওড়না দিয়ে বেঁধে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা লুণ্ঠন করে। পরে এ ঘটনায় ওই বাড়ির বাসিন্দা তানিয়া বেগম বাদী হয়ে গৌরনদী থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার সূত্র ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে গৌরনদী থানা পুলিশের একটি টিম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে।
যার মধ্যে দুজন ডাকাত সদস্য এরইমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, টানা তিনদিনের অভিযানে ডাকাতদলের সর্দার বরগুনা জেলার আমতলী থানার কলাগাছিয়া এলাকার আমজেদ হাওলাদারের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন দিলুকে (৪৭) গ্রেফতার করা হয়।
পাশাপাশি তার সহযোগী বরিশালের গৌরনদী থানাধীন চর-রমজানপুর এলাকার সেলিম সরদারের ছেলে রবিউল ইসলাম পারভেজ (২০), পটুয়াখালী সদর থানার বড়বিঘাই ইউনিয়নের পসারবুনিয়া এলাকার আনোয়ার মীরার ছেলে মোতালেব মীরা পনু (৩৯), বরগুনা জেলার তালতলী থানাধীন ছোটবগির বেতিপাড়া এলাকার আ. কাদের প্যাদার ছেলে হারুন ওরফে তৈয়ব আলী (৫৩) ও একই এলাকার সৈয়দ ফকিরের ছেলে মো. আমিনুল ফকির (২৪), পটুয়াখালী সদর থানার তিতকাটা এলাকার মো. সোহরাব সিকদারের ছেলে ও বরিশাল নগরের রুপাতলী চান্দুমার্কেট এলাকার বর্তমান বাসিন্দা মো. ছগির সিকদার ওরফে সবুজ (২৫) এবং ডাকাতিকালে লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার কেনাবেচার সহযোগী নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার উত্তর চর কাকড়া এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে মো. শাহীন আলমকে (৩১) গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রবিউল ইসলাম ওরফে পারভেজ ও মোতালেব মীরা ওরফে পনু গৌরনদী থানায় দায়েরকৃত ডাকাতির মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এছাড়া গ্রেফতারকৃত ডাকাতদলের সর্দার মো. দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিলু ও হারুন ওরফে তৈয়ব আলীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঢাকার পূর্ব জুরাইন এলাকার দুলাল স্বর্ণাকারের মালিকানাধীন সুমাইয়া জুয়েলার্স নামক দোকান থেকে ডাকাতির ঘটনায় লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে।
পাশাপাশি তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ডাকাতি লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার কেনাবেচার সহযোগী মো. শাহীন আলমকেও গ্রেফতার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. শাজাহান হোসেন বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মো. দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিলু, হারুন ওরফে তৈয়ব আলী, আমিনুল ফকির ও মো. ছগির সিকদার ওরফে সবুজ গণদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গৌরনদী থানার কেফায়েতনগর এলাকার বাসিন্দা ও ডাকাতির মামলার সঙ্গে জড়িত আবুল বাশার ফকির ওরফে ফটিক ফকিরের (২৯) মুদির দোকানে অভিযান চালানো হয়।
বুধবার মধ্যরাতে চালানো ওই অভিযানে ফটিক ফকিরের দোকানের পাটাতনের নিচ থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তার মধ্য থেকে দেশীয় তৈরি একটি পিস্তল, আট রাউন্ড গুলি, একটি লোহার তৈরি রেঞ্জ, একটি প্লাস, একটি চাপাতি, দুটি দা ও নগদ ২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও গৌরনদী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরনদী সার্কেল) এসএম আল বেরুনী বলেন, গ্রেফতারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাদের নামে জেলার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
Leave a Reply