নিজস্ব প্রতিবেদক // বরিশাল নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে জেল খালে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ৭টায় মড়কখোলার পুল এলাকা থেকে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন।পরিচ্ছন্নতা অভিযানে বিভিন্ন শ্রমিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী দীপ্ত কুমার দে বলেন, জেল খাল হচ্ছে নগরীর ধমনি। কিন্তু এলাকাবাসীর ময়লা ফেলা এবং সিটি করপোরেশন সঠিকভাবে পরিষ্কার না করাসহ দখল দূষণে খালটি মৃতপ্রায়। জেলা প্রশাসনের আহ্বানে আজ আমরা পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিয়েছি। নগরী পরিচ্ছন্ন রাখলে আমরাও ভালো থাকবো।
স্কাউটস বরিশাল জেলা রোভোরের সহকারী কমিশনার কিশোর চন্দ্র বালা বলেন, ২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসনের আহ্বানে জেল খাল পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ সব খাল উদ্ধার অভিযানে সম্পৃক্ত ছিলাম।
নানা প্রেক্ষাপটের কারণে সেই কাজটি স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বরিশালের মানুষের দুর্ভোগ চলছিলই। দুর্ভোগ লাঘবে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন পুনরায় খাল উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশ স্কাউটস ও জেলা রোভার সেবার মানসিকতা নিয়ে এই মহৎ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। এবারের অগ্রযাত্রা থেকে আমরা প্রত্যাশা করবো এটি যেন শুধু পরিচ্ছন্নতা অভিযানেই সীমাবদ্ধ না থেকে স্থায়ী পরিকল্পনা করে খাল উদ্ধার ও পুনঃখনন করে জনগণের দুর্দশা লাঘব করা হয়।
বিডি ক্লিন বরিশালের বিভাগীয় সমন্বয়ক জায়েদ ইরফান বলেন, আজ আমাদের সংগঠনের শতাধিক কর্মী সরাসরি অংশ নিয়ে খাল পরিচ্ছন্ন করছে। আমি সবাইকে বলতে চাই, একা নয় এক হয়ে গড়ে তুলতে হবে পরিচ্ছন্ন ও জীবানুমুক্ত বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, পরিচ্ছন্নতার এই অভিযান নিয়ে আশা-হতাশার কিছু বলবো না। ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে খাল পরিচ্ছন্ন, পুনরুদ্ধার ও খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সেসবের কোনো সুফল নগরবাসী পাননি। কারণ সেই উদ্যোগগুলো পরিকল্পিত হয়নি। আমরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছিলাম খালগুলোর সীমানা নির্ধারণ করা, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা এবং খনন করার।
জেলা প্রশাসন এবার যে উদ্যোগ নিয়েছে এটি ইতিবাচক হোক এই প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে যেন তারা ময়লা-আবর্জনা ফেলে খালগুলোকে ভরাট ও দখল করে না ফেলেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট লিংকন বায়েন বলেন, বিগত দিনে খাল উদ্ধারে বড় আয়োজন করা হয়েছিল। সব মানুষ এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তখন মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণভাবে পূরণ হয়নি। আজকেও একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি শুধু পরিচ্ছন্ন অভিযান চালালেই চলবে না, খালটি পুনরুদ্ধার, খনন করে যদি পূর্বের রূপে ফিরিয়ে নেওয়া হয় তাহলেই বরিশালবাসীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ড. খুরশিদ আলম বলেন, নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। বরিশালের সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ সব স্তরের ব্যক্তিরা তাতে সম্পৃক্ত হয়েছেন।
গত সপ্তাহে শহরে যে জলাবদ্ধতা দেখলাম, তা নিরসন করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খালগুলো সংস্কার করা। খালগুলোর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পারলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।
তিনি বলেন, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার সব ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এখন রাজনৈতিক চাপমুক্ত অবস্থায় বরিশালের খালগুলোকে উদ্ধার করে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি ১২ সেপ্টেম্বর বরিশালে আসার পরে দেখলাম শহরে প্রচণ্ড জলাবদ্ধতা। সবার সঙ্গে কথা বলে জানলাম শহরের মধ্যে প্রবাহিত খালগুলো অপরিচ্ছন্ন থাকায় পানি কীর্তনখোলায় নামতে পারে না।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমিত পরিসরে জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে আজ জেল খালের মড়কখোলার পুল এলাকা থেকে পরিচ্ছন্ন অভিযান শুরু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন আমাদের যে পথ দেখিয়েছে, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আমরা সেই চেতনা ধারণ করে উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে এসেছি। এখন সবার সহায়তায় ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশালের পুরানো সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই।