এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট // বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ১৬ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ জন চেয়ারম্যান পরিষদে না আসার কারনে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এদের মধ্যে আবার অনেক ইউপি চেয়ারম্যান তাদের বিগত কর্মকান্ডে মাঠ পর্যায়ে রয়েছে নানামুখী কথা, স্থানীয়দের ক্ষোভ। তারা বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে একাধীকবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, আবার এদের মধ্যে ৭ বারেরও নির্বাচিত একজন প্রবীণ চেয়ারম্যান রয়েছেন। এ সকল জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, নিরাপত্তাহীনতায় পরিষদে আসতে শঙ্কিত তারা। ইতিমধ্যে পঞ্চকরণ ও তেলিগাতী এ দুই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দ্বায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে মোরেলগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদরুদ্দোজা টিপুকে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, দেশের রাজনৈতিক প্রক্ষাপট পরিবর্তনের ফলে গত ৫ আগস্টের পর থেকেই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ৮টি পরিষদের চেয়ারম্যানগণ তাদের দপ্তরে না আসায় কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। পরিষদের সচিবরাই পরিচালনা করছে নামমাত্র কার্যক্রম। তবে চিংড়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সপ্তাহে শুধুমাত্র বুধবার খুলছেন সচিব। দু’একটি পরিষদের সদস্যরা সভা ডেকে রেজুলেশন করে প্যানেল চেয়ারম্যানের দ্বারা কোনমতে পরিষদ চালাচ্ছেন। এদের মধ্যে দু’একজন চেয়ারম্যান মাঝে মধ্যে দু,একদিন অফিস করলেও সপ্তাহের প্রায় সময়ই থাকছেন অনিয়মিত। পঞ্চকরণ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার, তেলিগাতী ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তার, রামচন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম, বনগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান রিপন চন্দ্র দাস, চিংড়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান আলি আক্কাস বুলুসহ এ ৫ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যান ৫ আগস্টের পর থেকে একেবারেই পরিষদে আসছেনা। এছাড়াও বহরবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিপন হোসেন তালুকদার, বলইবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আলী খান ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লাসহ ৩ চেয়ারম্যান মাঝে মধ্যে দু,একদিন পরিষদে আসলেও বেশীরভাগ সময়ই থাকছেন অনুপস্থিত। এদিকে এলাকার একাধিক সচেতনমহল ও সাধারণ জনগনের অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন গুলোতে চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিত থাকার কারনে পরিষদের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ কয়েম সনদ, পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় সেবা নিতে এসে সাধারণ নাগরিকরা সেবা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। পাশাপাশি পরিষদের কার্যক্রমে পানির ট্যাংকি বিতরণ থেকে শুরুকরে বয়স্ক, বিধবা ভাতাসহ সরকারী সকল প্রকার সুযোগ সুবিদা দেয়া হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় সুবিদা ভোগীর্দে তাদের বিগত কর্মকান্ডে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্ণীতির কারনে অনেকেই রোষানলে পড়েছে, তারা আসতে পারছে না নিজ এলাকায়। তবে নির্বাচিত এসব চেয়ারম্যানগন দূর্ণীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দেশের পটপরিবর্তনের ফলে তারা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। চিংড়াখালী ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেয়ায় ২০১৬ সালে মামলা করায় সে মামলা তুলে নিতেও তার ওপরে রয়েছে চাপ। ইতিমধ্যে আবার কোন কোন চেয়ারম্যানের মৎস্য ঘের দখল, বাড়ি-ঘর ও পরিষদ কার্যালয় হামলা হওয়ার কারনে নিরাপত্তাহীনতায় পরিষদে যেতে পারছে না তারা।
এ সম্পর্কে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম তারেক সুলতান বলেন, যে সকল ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী নির্দেশনার আলোকে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশসক মহোদয়ের এক আদেশে পঞ্চকরণ ও তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক ও আয়ন ব্যায়ন কর্মকর্তা হিসেবে সহকারী কমিশনার ভূমিকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে।