1. faysal.rakib2020@gmail.com : admin :
  2. ukbanglatv21@gmail.com : Kawsar Ahmed : Kawsar Ahmed
বালু লুটে ‘ভাই ভাই’ বিএনপি-আ.লীগ - বাংলার কন্ঠস্বর ।। Banglar Konthosor
শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৫১ অপরাহ্ন

বালু লুটে ‘ভাই ভাই’ বিএনপি-আ.লীগ

  • প্রকাশিত :প্রকাশিত : শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ১৯ 0 বার সংবাদি দেখেছে

নিজস্ব প্রতিবেদ // সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। দীর্ঘদিন ধরে বালু তুলে বিক্রি করে আসছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা ও তার লোকজন।

মূলত জগন্নাথপুরের নারিকেলতলা গ্রামে কৃষি ইনস্টিটিউটের মাঠ ভরাটের জন্য বালু তুলতে ইজারা দেওয়া হয়েছিল সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর ভাগ্নে জাবেদ মিয়াকে।

সেই অনুমোদনের সুযোগ নিয়ে এই চক্র অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে বাগময়না গ্রাম রক্ষা প্রকল্পে ও অন্যত্র। এরই মধ্যে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির অঙ্গসংগঠনের এক নেতার সঙ্গে মিলে একই কাজ করে যাচ্ছেন ওই নেতা।

ওই ইজারার মেয়াদ এখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এজন্য ইজারা এলাকার বাইরে থেকেও দেদার বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে প্রশাসন একেবারে নির্বিকার।

ওই নেতা হলেন জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাগময়না গ্রামের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানু মিয়া। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি হাত মিলিয়েছেন জগন্নাথপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক আকমল হোসেনের সঙ্গে।

এই সিন্ডিকেটে আছেন শেরপুরের ইমরান মিয়া, সোনাতলা গ্রামের আল আমিন ও ফেচী গ্রামের জিতু মিয়া। অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বিষয়টি ব্যাপক হারে জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় আরও কয়েকজনকেও টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে।

জানা যায়, বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা ছানু মিয়া ও যুবদল নেতা আকমল হোসেন মিলে বালু তুলে বাগময়না গ্রাম রক্ষা প্রকল্পে বিক্রি করছেন। তারা অন্য সাধারণ মানুষের কাছেও বালু বিক্রি করছেন।

এই সিন্ডিকেটে আছেন শেরপুরের ইমরান মিয়া ও ফেচী গ্রামের জিতু মিয়া। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ কাজে ভাগ বসিয়েছেন বিএনপি এবং এর সহযোগী, অঙ্গসংগঠনের নেতারাও। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আদর্শিক বিভেদ থাকলেও বালু লুটপাটে তারা যেন ভাই ভাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারিকেলতলা গ্রামে কৃষি ইনস্টিটিউটের মাঠ ভরাটের জন্য বালু উত্তোলন করার ইজারা পান সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর ভাগ্নে জাবেদ মিয়া।

ওই অনুমোদন থাকায় এই চক্র কৃষি ইনস্টিটিউট মাঠে বালু দেওয়ার পাশাপাশি বাগময়না গ্রাম রক্ষা প্রকল্প ও জনসাধারণের কাছে বিক্রি করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে তারা এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

কৃষি ইনস্টিটিউটে বালু দেওয়ার মেয়াদ আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। তাই এর আগে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের মাসিক বৈঠকে বারবার জনপ্রতিনিধিরা তুললেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়নি।

স্থানীয়রা রানীগঞ্জ ভূমি অফিসের তহশিলদারকে অবহিত করলেও কোনো কাজ হয়নি। তাদের অভিযোগ, ওই তহশিলদারও এ কাজে জড়িত আছেন।

পাইলগাঁও ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নজুমউদ্দিন বলেন, কুশিয়ারা থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি হচ্ছে। বিষয়টি মাসিক বৈঠকে বারবার বলা হলেও প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। কৃষি ইনস্টিটিউটে বালু দেওয়ার ঠিকাদার জাবেদ মিয়ার কাগজ ব্যবহার করে চোরাই পথে বালু বিক্রি করা হচ্ছে।

রানীগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মো. ছদরুল ইসলাম জানান, বালু তোলার কথাটি শুনে আসছি, এখানে একটি সিন্ডিকেট হয়েছে। আমি প্রতিবাদ করলেও লাভ হবে না, উল্টো মিথ্যা মামলা খেতে হবে।

পাইলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল হোসেন বলেন, একটি সিন্ডিকেট কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে। ওই সিন্ডিকেটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা রয়েছেন। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

স্থানীয় বালিশ্রী গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাগময়না ও বালিশ্রী এলাকায় অবৈধভাবে বালু বিক্রি হচ্ছে। এই বালু তোলার কারণে নদীর পাড় ভেঙে সর্বহারা হচ্ছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। তবে সিন্ডিকেটে প্রভাবশালীরা থাকায় সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে।

বাগময়না গ্রাম রক্ষা প্রকল্পের ঠিকাদার স্বপন হাজি মোবাইল ফোনে বলেন, গ্রাম রক্ষা প্রকল্পে বালু দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা ছানু মিয়া ১ লাখ টাকা নিয়েছেন। শেরপুরের ইমরান মিয়া, ফেচী গ্রামের জিতু মিয়া ও সোনাতলা গ্রামের আল আমিনের কাছ থেকেও বালু কিনেছি। এখন তারা বালু দিচ্ছেন না।

শেরপুরের ইমরান মিয়া বলেন, আমি ২০ দিন আগে গ্রাম রক্ষা প্রকল্পে বালু দিয়েছি। এখন আর বালু দিচ্ছি না, আমাদের বালু তোলার কাজ বন্ধ রয়েছে। অবৈধ বালু দিইনি। ইজারার মেয়াদ ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে।

সোনাতলা গ্রামের বালু সিন্ডিকেটের সদস্য আল আমিন বলেন, আমি কোনো বালু দিইনি। স্বপন হাজি মিথ্যা কথা বলেছেন। আর জিতু মিয়া বলেন, বাগময়না গ্রাম রক্ষা প্রকল্পে আমি বালু দিয়েছিলাম, এখন আর সেখানে বালু দিচ্ছি না। বৈধ ও অবৈধ আমি বুঝি না। আমি অবৈধ বালু বিক্রি করিনি।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানু মিয়া বলেন, আমি কোনো বালু বিক্রি করিনি। রানীগঞ্জ দক্ষিণ পাড়েও বালু দিইনি। আমি এর সঙ্গে জড়িত নই। প্রমাণ পেলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।

যুবদল নেতা আকমল হোসেন বলেন, আমি বালু তোলার বা বিক্রির সঙ্গে নেই। আমার নাম যে বা যারা বলছে তারা আমাকে প্রতিহিংসা করে বলছে।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন বলেন, বালু তোলার সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত নয়। যদি জড়িত থাকার প্রমাণ দিতে পারেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু হোরায়ার সাদ মাস্টার বলেন, এ কাজগুলো যদি বিএনপির কেউ করে থাকেন, আমরা দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেব।

রানীগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সেলিম মিয়া জানান, আমি নতুন যোগদান করেছি। এখনো অনেক রাস্তাঘাট চিনি না, আমি জড়িত থাকব কীভাবে? এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যে বলেছে মিথ্যা কথা বলেছে।

জগন্নাথপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা সা-আধ বলেন, অবৈধভাবে বালু তোলার খবর পেয়েছি। আমি সরেজমিন মাঠে যাব, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Comments are closed.

‍এই ক্যাটাগরির ‍আরো সংবাদ