স্কুলটির অধিকাংশ ক্লাসরুমের অবস্থায় খুবই ঝরাজীর্ণ। একটু বৃষ্টি হলেই চালের পানি গড়িয়ে ভেতরে পড়ে। বৃষ্টি একটু বেশি হলেই শিক্ষার্থীদের ছাতা কিংবা পলিথিন মাথায় দিয়ে বসতে হয়। ১৫টি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে ৯টিই প্রায় অকেজো।
স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মোসা. খদিজা জানান, তাদের স্কুলের চালের অবস্থা খুব খারাপ, সিলিংও ভাঙা। একটু বৃষ্টি হলেই তাদের ক্লাসরুমের ভেতরে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়তে শুরু করে। মেঝেতে পানি জমে যায়।
একই কথা বলেন স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম, ক্লাসের অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের কোন কোন শ্রেণি কক্ষের ছাদে এবং দেয়ালেও ফাটল রয়েছে। অকেজো ভবনেও আমাদের ক্লাস হচ্ছে। বেশি বৃষ্টি হলে চালের ফুটা দিয়ে পানি ঘরের ভেতরে পড়ে। অনেক সময় শেণি কক্ষের ভেতরেই আমাদের ছাতা কিংবা পলিথিন মাথায় দিয়ে ক্লাস করতে হয়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা রহমান জানান, ১৯২৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৩ সালে এটি জাতীয়করণ হয়। স্কুলটি এ গ্রেডের হলেও এখানে ভালো ক্লাস রুম নেই। স্কুলের (অফিস কক্ষ বাদে) ১৫টি ক্লাস রুমের মধ্যে ৬টি ভালো বাকিগুলে পাঠদানে অনুপযোগী। ক্লাসরুমের সংকটের কারণে ভাওয়াল রাজার আমলের একতলা অকেজো ভবনেও ক্লাস নিতে হচ্ছে। এ ভবনের দু’টি শ্রেণি কক্ষের ছাদ ও দেয়ালের ফাটল রয়েছে। ঝুকির মধ্যেই ক্লাস নিতে হচ্ছে। সেমিপাকা অন্য ভবনের টিনের চাল-সিলিং ভাঙা ও স্থানে স্থানে ফুটো রয়েছে। তা দিয়ে বৃষ্টির পানি ক্লাসরুমে ঢুকে পড়ে। এতে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ করতে সমস্যা হয়।
তিনি আরও জানান, স্কুলটিতে ১৭ জন শিক্ষক ও ৯৫৭জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানে ২০১৩ সাল থেকে ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণি (সরকারের পাইলট প্রকল্প) চালু হয়েছে। ২০০০ সালে একটি দোতলা ভবন এবং ২০০১ সালে দুই কক্ষের একটি একতলা ভবন নির্মিত হলেও দোতলা ভবনের ৬টি কক্ষের মধ্যে দুইটি ব্যবহৃত হচ্ছে অফিস কক্ষ হিসেবে। শিক্ষক সংকট নেই। তবে পাঠদানের মানসম্মত ক্লাস রুমের সংকট রয়েছে।
প্রধান শিক্ষক জানান, এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় জেলা শিক্ষা অফিস, স্থানীয় মন্ত্রী/এমপিদের কাছেও ভবনের জন্য একাধিকবার আবেদন করেছি। তারা আশ্বাস দিলেও ভবন পাইনি। কিন্তু মাঝে মধ্যে সংস্কারের জন্য স্বল্প পরিমাণে টাকা পেয়েছি। যা দিয়ে সংস্কার করলেও তা বেশিদিন টেকে না। ২০১৭ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রকৌশলী পরিদশর্ন করে পুরোনো ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও শ্রেণি কক্ষের অভাবে সেখানেও ক্লাস নিতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় নতুন ভবন নির্মাণ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
সর্বশেষ এ প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৯ সালের সমাপনী পরীক্ষায় ২৬০জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১২৫জন ’এ প্লাস’ ১৮জন টেলেন্টপুল এবং ২জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিসহ শতভাগ পাশ করেছে। ক্লাসরুমের সংকট কাটলে শিক্ষার্থীদের পাশ ও মানের হার আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, এ স্কুলে মানসম্মত পাঠদানের জন্য আরও কমপক্ষে ৯টি ক্লাসরুম প্রয়োজন। কক্ষ সংকটে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ভবন বরাদ্দের জন্য ডিজি অফিসে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তবে কেন পায়নি তা বলতে পারছি না। আবারো ভবনের জন্য প্রস্তাব পাঠাবো এবং স্বশরীরে ডিজি স্যারকে বিষয়টি বলবো। বিভিন্ন সময়ে মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেয়া হলেও তা দিয়ে শ্রেনিকক্ষ নির্মাণের জন্য যথেষ্ট নয়।
Leave a Reply