অপ্রশস্ত সড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। গত ২৬ জুন সেতু চালুর পর এক মাসে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে অন্তত ১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। সেতু চালুর আগে জুন মাসে এ মহাসড়কে ৬টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৫ জনের। আর মে মাসে নিহত হয়েছিলেন ১৭ জন।
সড়ক ও পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাসড়কে এ প্রাণহানি ও দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম অপ্রশস্ত মহাসড়ক, যানবাহনের সংখ্যা ও চলাচল কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়া, বেপরোয়া গতি ও বাঁক। পদ্মা সেতু চালুর পর এ সড়কপথে নতুন ৫০০ বাস নেমেছে বলে জানান বরিশাল বাসমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে।
পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কল্যাণে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটাসহ দক্ষিণের ছয় জেলায় মহাসড়কের গাড়ি চলাচল আগের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়লেও সে অনুযায়ী সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। ফলে বর্ধিত যান চলাচলের উপযোগী নয় ২৪ ফুট প্রশস্ত পুরোনো মহাসড়ক।
ঢাকা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার সুপ্রশস্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের পর ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রায় ২০৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ২৪ ফুট রয়ে গেছে। এক মাস ধরে সরু এ সড়কে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।
সড়ক ও সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এই এক মাসে সেতু দিয়ে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৫৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। ২০১০ সালে নকশা প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ৩৫ বছরে যানবাহনের সংখ্যা ও আয়ের একটি ছক তৈরি করেছিল। সে অনুযায়ী, চলতি বছর প্রতিদিন পদ্মা সেতু দিয়ে গড়ে ২৩ হাজার ৯৫৪টি যানবাহন চলাচলের কথা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের তথ্য অনুযায়ী, সেতু চালুর পর এক মাসে দুর্ঘটনায় অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত ২১ জুলাই দুপুরে উজিরপুরের নতুন শিকারপুর এলাকায় মাইক্রোবাস ও বাসের মুখোমুখী সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হন। আগের দিন বাকেরগঞ্জে বিআরটিসি বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ছয় যাত্রী নিহত হন। বড় এ দুটি দুর্ঘটনা ছাড়াও মহাসড়কের খাঞ্জাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন, বাবুগঞ্জের ছয় মাইল এলাকায় একজন, নতুন শিকারপুরে অটোভ্যানের চাপায় একজনসহ মোট ২৫ জন নিহত হন।
গৌরনদী হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শেখ বেল্লাল হোসেন বলেন, অতিরিক্ত গতির কারণে মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে। মহাসড়ক সরু ও অনেক স্থানে বাঁক থাকায় দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে।
তবে মহাসড়কে ঘন ঘন বাঁকও দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর জয়শ্রী বাজার থেকে বরিশাল বিমানবন্দর মোড় পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়ক এলাকায় ১০টি ছোট–বড় বিপজ্জনক বাঁক আছে। এসব বাঁকে প্রায়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। শিকারপুর এলাকায় আছে বিপজ্জনক একটি বাঁক। ২১ জুলাই মহাসড়কের এ অংশে নতুন শিকারপুর এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হন। বাঁকের মোড়ে গাছ থাকায় অপরপ্রান্তের যানবাহন চালকদের চোখে পড়ে না।
মহাসড়কটি প্রশস্ত করতে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ভাঙ্গা–বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়ক প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়। কিন্তু সে প্রকল্পে এখনো জমি অধিগ্রহণ করা যায়নি। ফলে কবে নাগাদ মহাসড়কের নির্মাণকাজ শুরু হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। প্রকল্প প্রস্তাবে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের জুনেও সেই কাজ শুরু করতে পারেনি সড়ক ও সেতু বিভাগ। এরই মধ্যে পর পর তিনবার ফেরত গেছে প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ।
জানতে চাইলে সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশালের সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে দক্ষিণাঞ্চলের সরু সড়কপথকে চার লেনে উন্নীত করা জরুরি ছিল। এ কাজ দ্রুত শুরু করে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে।
Leave a Reply