হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) বলেন, ইয়াহুদীদের একজন আলেম নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, পৃথিবীর মধ্যে উত্তম স্থান কোনটি? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন এবং বললেন, তুমি নীরব থাক যতক্ষণ জিবরীল (আ.) না আসেন।
অতঃপর সে নীরব থাকল এবং জিবরীল (আঃ) আসলেন। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন। জিবরীল (আ,) উত্তরে বললেন, জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি অধিক জ্ঞাত নন। কিন্তু আমি আমার প্রভুকে জিজ্ঞেস করব।
অতঃপর জিবরীল (আ.) বললেন, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আল্লাহর এত নিকটে হয়েছিলাম, যত নিকটে ইতিপূর্বে হইনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে এবং কত নিকটে হয়েছিলেন? তিনি বললেন, তখন আমার মধ্যে ও তার মধ্যে মাত্র সত্তর হাজার নূরের পর্দা ছিল। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, পৃথিবীর নিকৃষ্টতর স্থান বাজারসমূহ এবং উৎকৃষ্টতর স্থান মসজিদ সমূহ’। -(ইবনু হিববান, ১৫৯৯; মিশকাত,৭৪১, পৃঃ ৭১)
সর্বোত্তম স্থান মসজিদ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের মহান আল্লাহ ভীষণ পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। -(সুরা : তাওবা, আয়াত : ১৮)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৫০)
মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি এর রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের সওয়াব (ইবাদতের প্রতিদান) আমার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, এমনকি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক মসজিদ থেকে ময়লা-আবর্জনা দূর করার সওয়াবও (যা আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে পুণ্যের কাজ)।
অন্যদিকে আমার উম্মতের পাপরাশিও আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি তাতে কোরআনের কোনো সুরা বা আয়াত শেখার পর তা ভুলে যাওয়ার চেয়ে বড় গুনাহ আর দেখিনি। -(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬১)
মসজিদকে অপবিত্র করা, ময়লাযুক্ত করা কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত করার অধিকার কারো নেই। জাবির ইবনে আবুদুল্লাহ (রা.) থেকে বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এ রসুনজাতীয় উদ্ভিদ খাবে, কোনো কোনো সময় তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন বা মুলা খাবে সে যেন আমার মসজিদের কাছেও না আসে। কেন না মানুষ যেসব জিনিস দ্বারা কষ্ট পায় ফেরেশতারাও সেসব জিনিস দ্বারা কষ্ট পায়। -(মুসলিম, হাদিস : ১১৪১)
মসজিদ সব সময় পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখতে হবে। এটা সবার দায়িত্ব। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করতে, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং সুবাসিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। -(তিরমিজি, হাদিস : ৫৯৪)
মসজিদে যত্রতত্র থুথু ফেলা নিষিদ্ধ। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ, আর তার কাফফারা হচ্ছে তা মুছে ফেলা। -(বুখারি, হাদিস : ৪১৫)
যে কেউ স্বেচ্ছায় মসজিদের সেবা করতে পারে। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন কালো বর্ণের পুরুষ অথবা বলেছেন কালো বর্ণের নারী মসজিদ ঝাড়ু দিত। সে মারা গেল। নবী (সা.) তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবিরা বলেন, সে মারা গেছে। তিনি বলেন, তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তার কবরের কাছে গেলেন এবং তার জানাজার সালাত আদায় করলেন। -(বুখারি, হাদিস : ৪৫৮)
Leave a Reply