নিজস্ব প্রতিবেদক // মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরে মেঘনা নদীর নৌকাত ডাকাত ও বালুদস্যু কিবরিয়া মিজি ও কানা জহিরের দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে ৯ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা নারী গুলিবিদ্ধ হয়।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেয় সে। বর্তমানে মা ও সন্তান সুস্থ রয়েছে।
এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা নারী পিংকি আক্তার (২৩) তার বড় ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। আহত নারী কিবরিয়া মীজীর সহযোগী রাজু সরকারের ছোটবোন এবং স্থানীয় শাহজাহান সরকারের মেয়ে।
পিংকির মা নুরজাহান বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার আমার ছেলে রাজুকে হত্যার উদ্দেশ্যে নৌকাত ডাকাত ও বালুদস্যু কানা জহিরের ভাই শাহিন বেপারি ও তার লোকজন আমার বাড়িতে হামলা চালায়।
এ সময় আমার ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে পিংকি ভাইকে বাঁচাতে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। সেই সময় হত্যাকারীদের ছোড়া গুলিতে আমার মেয়ে আহত হয়। গুলিবিদ্ধ পিংকিকে প্রথমে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে পিংকির বাচ্চা পেটে নড়াচড়া করছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বিকেল ৪টার দিকে শহরের আধুনিক হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে গেলেন সিজারের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। আমার নাতি ও মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছে।
অপারেশনের দায়িত্বে থাকা গাইনি চিকিৎসক রুনা আক্তার দোলা জানান, অন্তঃসত্ত্বা পিংকি আক্তারে কোমরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে তার শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল। এর মধ্যে পেটের বাচ্চা নড়াচড়াও করছিল না। তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে অপারেশন করাতে হয়। তবে মা ও বাচ্চা দুজনেই সুস্থ আছে।
পিংকি আক্তার জানান, ঐদিন সকালে শাহীন ও তার সন্ত্রাসীরা পিস্তল, রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তখন আমি ও আমার মা রাজুকে বাঁচাতে ওকে ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেই এবং মা ও আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে যাই। সেই সময় তাদের ছোড়া গুলিতে আমি আহত হই।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম জানান, হত্যার উদ্দেশ্যে গুলির ঘটনায় পিংকি আক্তারে স্বামী সম্রাট বেপারি গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে একটি মামলা দায়ের করেন।
এজাহারে কানা জহিরকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়াও ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৮/১০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চলমান রয়েছে।
তিনি আরও জানান, কানা জহির ও কিবরিয়া মিজি দুজনেই আন্তঃজেলা ডাকাত। জহিরের বিরুদ্ধে ডাকাতি, অস্ত্র, চাঁদাবাজির অভিযোগে মুন্সিগঞ্জ সদর, গজারিয়া ও চাঁদপুরে ১৫ থেকে ১৬টি মামলা রয়েছে। কিবরিয়া মিজির বিরুদ্ধে এই তিনটি থানায় ডাকাতি ও হত্যাসহ ১০ থেকে ১২টি মামলা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) মেঘনা নদীতে গোলাগুলিতে দুজন নিহতের ঘটনার জেরে সকালে কিবরিয়া মীজীর পক্ষের রাজু সরকারের বাড়িতে হামলা চালায় কানা জহিরের ভাই শাহিন বেপারি ও তার লোকজন। এ সময় অতর্কিত গুলিতে আহত হন পিংকি।