
আহাদ তালুকদার আগৈলঝাড়া, বরিশাল // বিকেল গড়িয়ে যখন দিনের আলো নিবে যায় ঠিক তখনই বরিশালের গৌরনদীতে জমে উঠে পানের হাট। সাধারণ হাটবাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগমন ঘটে দিনের আলোতে আর পানের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা আসেন রাতের অন্ধকারে। বৃহস্পতিবার ও সোমবার বাদে সপ্তাহের পাঁচদিন বসে এই হাট। প্রতিটা হাটেই প্রতিদিন বিক্রি হয় কোটি কোটি পাকার পান। যা গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সরেজমিন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার টরকী, নীলখোলা ও কসবা, মাহিলাড়া, বাটাজোর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনের আলো গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নেমে আসে, ঠিক তখনই বিভিন্ন এলাকার পান চাষীরা ভ্যানযোগে তাদের পছন্দের আড়তে নিয়ে আসেন বরজের পান। পানগুলো আড়তে নিয়া আসার পরপরই শুরু হয় পান গোছানোর কাজ। প্রতিটা পানের আড়তে কমপক্ষে ১০-১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। যা দিয়ে তাদের সংসার চলে। পান চাষী, পাইকার, আড়তদার ও শ্রমিকদের আগমনে সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা এগারটা পর্যন্ত সরগরম থাকে পানের হাট। পানের হাটকে কেন্দ্র করে আড়তের আশপাশেই গড়ে ওঠেছে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
পান ক্রেতা (পাইকার) শাহজাহান তালুকদার সহ একাধিক পাইকাররা জানিয়েছেন, সপ্তাহের পাঁচদিন আমরা টরকী, নিলখোলা সহ একাধিক আড়ত থেকে পান ক্রয় করি। একেক জন পাইকার প্রতিদিনি কমপক্ষে ১০-১২ লাখ টাকার পান ক্রয় করেন। এই পান এখান থেকে ঢাকা, সিলেট, ফেনী, চৌমুহনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে আমাদের যেমন উপকার হচ্ছে, তেমনি পানচাষী ও আড়তদাররা লাভবান হচ্ছেন।
একাধিক পান চাষীরা জানিয়েছেন, আড়তগুলো গড়ে ওঠার আগে পান চাষীরা গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে পান বিক্রি করতো। সেসময় অনেক পান অবিক্রিত থাকতো। আড়ত হওয়ার পর একটা সুবিধা হচ্ছে, পান অবিক্রিত থাকেনা। যে কারনে আমরা আড়তগুলোতে পান বিক্রি করে আসছি। বর্তমানে বিভিন্ন সাইজের একেক বিড়া পান আড়তে ৭০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে শীতের দিনে পানের দাম আরও বেশি। পান চাষে যে পরিমাণ খরচ তাতে চাষীরা লাভবান হচ্ছেন কম। চাষীদের সুবিধার্থে আড়তগুলোতে কমিশন হার কমানো উচিত। কারন চাষীরা ভাল থাকলেই কেবল আড়তদার ও পান ব্যবসায়ীরা ভাল থাকবে।
পান হাটের আড়ত মালিকরা জানিয়েছেন, আড়তগুলো হওয়ার ফলে চাষিরা যেমন স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের পান বিক্রি করতে পারছেন, তেমনি ক্রেতারাও পান ক্রয় করে ব্যবসা করতে পারছেন। পান চাষী এবং ক্রেতাদের আমরা সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে আসছি।
গৌরনদী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সেকেন্দার শেখ জানান, উপজেলার প্রায় ৬৮০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। আমরা পানচাষীদের সব ধরনের প্রযুক্তি ও পরামর্শ সেবা দিয়ে আসছি। অন্য বছরের তুলনায় এবার পানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আশা করছি পান চাষীরা লাভবান হতে পারবেন।