1. faysal.rakib2020@gmail.com : admin :
  2. ukbanglatv21@gmail.com : Kawsar Ahmed : Kawsar Ahmed
স্বাভাবিক হয়নি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, উদ্বেগ বাড়ছেই - বাংলার কন্ঠস্বর ।। Banglar Konthosor
বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন

স্বাভাবিক হয়নি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, উদ্বেগ বাড়ছেই

  • প্রকাশিত :প্রকাশিত : শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২২ 0 বার সংবাদি দেখেছে

 

অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হলো। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্ষমতায় আসা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আশার বাণী শোনালেও এই ছয় মাসে তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন, ধর্ষণ, হামলা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অনেকাংশে বেড়ে গেছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ কমেনি বরং বাড়ছেই। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।

কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বের হয়েই খুনোখুনিতে লিপ্ত

রাজধানীর পল্লবীর টেকেরবাড়িতে গত ২০ জানুয়ারি দিনে-দুপুরে ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু নামের এক যুবককে চাপাতি ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।

 

বাবুর স্বজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এ হত্যায় কলকাঠি নাড়েন সন্ত্রাসী মুসা শিকদার ওরফে সুমন শিকদার। এ ঘটনায় মুসাকে প্রধান আসামি করে পল্লবী থানায় মামলাও করেন বাবুর স্ত্রী। মুসার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্রসহ ১১টি মামলা রয়েছে। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে বের হন মুসা।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, মুসার মতো চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে এসেই ফের জড়াচ্ছেন অপরাধে। এতে বাড়ছে খুনোখুনি। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যেও সংঘাতে জড়াচ্ছে তারা।

 

বছরের শুরুতেই গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগের বেড়িবাঁধ এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সোনা ব্যবসায়ী সজল রাজবংশী আহত হন। তার কাছ থেকে ৭০ ভরি সোনা ও চার লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এর আগে ২১ জানুয়ারি গুলশানে ব্যবসায়ী দুই ভাইকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে এক কোটি টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। রাত ৯টার দিকে গুলশান-২ এ হামলার শিকার হন তারা।

এরও আগে ১০ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে এহতেশামুল হক নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ওয়াহিদুল হাসান নামের আরেক ব্যবসায়ীর ওপর একই সময়ে হামলা হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এহতেশামুলকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অন্তত ২০ জন জড়িত ছিলেন। তারা এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার বিপণিবিতান, ইন্টারনেট, ক্যাবল টিভির সংযোগ (ডিশ) ও ফুটপাতে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায়ও জামিনে মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম সামনে আসে।

 

সম্প্রতি দখল, চাঁদাবাজি ও খুনোখুনির ঘটনায় কয়েকজনের সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে। তাদের মধ্যে ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, সানজিদুল ইসলাম ওরফে ক্যাপ্টেন ইমন, আব্বাস আলী ওরফে কিলার আব্বাস ও সুব্রত বাইন, শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু। তারা সবাই কারামুক্ত হন ৫ আগস্টের পর।

ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় খুনের ঘটনা

২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার হানিফ ফ্লাইওভারে বাস থেকে নেমে হেঁটে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাচ্ছিলেন ২৩ বছরের তরুণ কামরুল হাসান। উদ্দেশ্য ছিল বন্ধুদের সঙ্গে সাজেক যাওয়ার। ফ্লাইওভারে কয়েকজন ছিনতাইকারী তাকে ঘিরে ধরে। এতে বাধা দিলে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীরা তার বুকে চাকু মেরে দেয়। রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে তার মোবাইল ফোন ও সাত হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

জোড়া খুনের মামলা

মাদক কারবার ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের ১ নম্বর ফটকের পাশে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দুটি অপরাধী চক্রের সংঘর্ষে নাসির বিশ্বাস ও মুন্না হাওলাদার খুন হন। সংঘর্ষে জড়ানো এলেক্স ইমন ও আরমানের অনুসারীরা চুরি-ছিনতাই, মাদক কারবারসহ নানা অপরাধে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তারা জামিনে বের হয়ে নিজেদের সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে নেমে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। নিহত দুজনই আরমান গ্রুপের সদস্য।

খুনের ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল এবং কিশোর গ্যাংয়ের মূলহোতা এলেক্স ইমনসহ কয়েকজনের নামে মামলা হয়। পিচ্চি হেলাল দীর্ঘ ২৪ বছর পর ১৫ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পান।

ব্যবসায়ীর ওপর হামলা

গত ১০ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে দুর্বৃত্তরা ব্যবসায়ী এহতেশামুল হককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজেদুল হক ওরফে ইমন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় মামলা হয়।

ইদানীং যে অপরাধটি মানুষের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে সেটি ছিনতাই। ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ মাদকাসক্ত, অল্প বয়সী ছেলেরা। ছিনতাইয়ের ঘটনার ৮০ ভাগই মোবাইল ছিনতাই। -ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর ইমন জামিনে বের হয়ে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের কিছু দোকান দখল ও চাঁদাবাজির চেষ্টা করেন। এছাড়া মার্কেটের ইন্টারনেট, খাবার পানি সরবরাহ ও পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে নিতে চেয়েও একাধিকবার মার্কেট নেতাদের কাছে ফোন করেন ইমন ও তার সহযোগী কিলার মুন্না। এ ঘটনার পর ইমনের মা ডা. সুলতানা জাহান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ইমন বিদেশে চলে গেছেন। তাকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। হামলার ঘটনার সঙ্গে সে জড়িত নয়।

বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যা

১৩ আগস্ট বিকেলে গেণ্ডারিয়ার বসুবাজার এলাকায় স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আনিসুর রহমানকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাজনৈতিক বিরোধ ও ফ্ল্যাট দখল নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে স্থানীয় যুবলীগ নেতা রেজাউল কবির তিতাস তাকে খুন করেন বলে জানতে পারে পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তিতাসকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। তিনি নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল থেকে গুলি করেন। গেণ্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শাহেদ খান বলেন, ঘটনার পর তিতাস পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

 

৫ মাসে খুন ১৫৬৫

পুলিশ সদর দপ্তরের এক বছরের তথ্য বলছে, দেশে ২০২৪ সালে তিন হাজার ৪৩২ জন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ খুনের ঘটনায় মামলা হয়। এর মধ্যে পেশাজীবীর সংখ্যা বেশি। সবচেয়ে বেশি খুন হয় ঢাকা রেঞ্জ এলাকায় ৮০৩ জন। এরপর চট্টগ্রাম রেঞ্জে ৫৭০ জন, রাজশাহী রেঞ্জে ৩৪৩ জন এবং রাজধানী ঢাকায় খুন হয় ৩৩৯ জন। আর গত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে খুনের সংখ্যা এক হাজার ৫৬৫ জন। এর আগের সাত মাসে খুন হয় এক হাজার ৮৬৭ জন। ২০২৪ সালে প্রতি মাসে গড়ে খুনের সংখ্যা ২৮৬ জন। যদিও ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেক আগের বছরের খুনের ঘটনায় মামলা করেন ভুক্তভোগীরা।

শেষ চার মাসে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের অন্তত ৮০০ মামলা

পুলিশের অন্য এক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে দেশে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৭৯৬টি মামলা হয়েছে। আগের বছর ২০২৩ সালে একই সময়ে এই অপরাধে মামলা হয় ৪৯৪টি। একই সময়ে অপহরণের ঘটনায় ৩০২টি মামলা হয়। ২০২৩ সালের এ সময় এসব অভিযোগে মামলা হয় ১৬০টি। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সাধ্যমতো কাজ করছে। কিন্তু কিছু সামাজিক অপরাধের কারণেই খুনের পরিসংখ্যান বাড়ছে।

 

সর্বশেষ ২৪ জানুয়ারি এক দিনেই তিনটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুরের দিয়াবাড়ী সিটি বস্তিতে মো. মিলন নামের এক পোশাককর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিনে রাত সাড়ে ৯টায় খুলনা নগরের তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব কুমার সরকারকে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর আগে ওই দিন দুপুরে চট্টগ্রামের রাউজানে জুমার নামাজে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন।

কারাগার থেকে পলাতক ৭০০ বন্দি এখনো অধরা

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন জানান, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন কারাগার থেকে পালানো বন্দিদের মধ্যে এখনো ৭০০ জন বন্দি পলাতক। তারা খুন, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় ছিনতাই প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নিজের মোবাইল ও ব্যাগ নিজ দায়িত্বে নিরাপদে রাখার মাধ্যমে পুলিশকে ‘সহায়তা’ করতে বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করবো। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত ব্যাগ এবং মানিব্যাগ, পার্স, মোবাইল নিজে একটু নিরাপদে রাখার চেষ্টা করবেন। তাহলে এ কাজটির মাধ্যমে আপনি আমাদের সহযোগিতা করতে পারবেন।’

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ইদানীং যে অপরাধটি মানুষের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে সেটি ছিনতাই। ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ মাদকাসক্ত, অল্প বয়সী ছেলেরা। ১৫ থেকে ২২ বছরের ছেলেরা মাদকাসক্ত হয়ে এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

ছিনতাইয়ের ঘটনার ৮০ ভাগই মোবাইল ছিনতাই জানিয়ে তিনি বলেন, বাসে বা প্রাইভেটকারে যখন কথা বলে তখন মোবাইল নিয়ে দৌড় দেয়। তাদের হাতেনাতে ধরা কঠিন কাজ। আমার অফিসারদের কাছে বড় অস্ত্র থাকে, বুট পরা, ইউনিফর্ম পরা থাকে। ছিনতাইকারী থাকে খালি পায়ে বা একটা কেডস পরা। তার সঙ্গে দৌড়ে পারাটা অনেক কঠিন।

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে সেই দায় কেউ নিতে চাইছে না। বাহিনী হিসেবে দায় না নিয়ে পুলিশ ব্যক্তি হিসেবে দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। এটি পেশাদারত্বের পরিপন্থি। মাঠ পর্যায় ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এখনও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়। অতীত চরিত্র থেকে পুলিশের অনেকেই নিজেকে বদলাতে পারেনি। -ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ছিনতাই-চাঁদাবাজি হচ্ছে, অস্বীকার করছি না। তবে যারা এসব করছে তারা ধরাও পড়ছে। আবার যারা ছাড়া পাচ্ছে তারাও এ ধরনের কাজ করছে, এটা সত্যি কথা। আমরা চেষ্টা করছি যতভাবেই হোক ছিনতাই-চাঁদাবাজি কমিয়ে আনার জন্য। পুলিশের স্বল্পতা নেই তবে আগের মতো কাজের উদ্যম নেই। তাদের কাজের উদ্যম বাড়াতে সর্বদা চেষ্টা করছি। যারা জামিনে বেরিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে তাদের আবার তাড়াতাড়ি ধরে আইনের আওতায় আনা হবে। যেই ধরা পড়বে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পুলিশ আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অপরাধীদের শনাক্তের পর আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রথাগত পুলিশিং সক্রিয় রয়েছে, ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ পুরোদমে অপারেশনে রয়েছে।

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে ৪০০ রাজনৈতিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে র‍্যাব বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। এছাড়া অপরাধ সংগঠন যেন না হয় সেজন্য বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারেও কাজ করে যাচ্ছে র‍্যাব। ৫ আগস্ট পরবর্তী ১৮১টি অবৈধ অস্ত্র ও ১ হাজার ৩১৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র সংক্রান্ত গ্রেফতার ১০১ জন, হত্যা মামলায় ৫৫৮ জন এবং মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জেল পলাতক ১২০ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

মুনীম ফেরদৌস আরও বলেন, ১ হাজার ৩৫ মাদক কারবারি, দুই মাসে ২১৭ জন ছিনতাইকারী ও ডাকাত, ধর্ষণ মামলায় ১৩১ জন ও ১৩৫ জন অপহরণকারী গ্রেপ্তার এবং ১৯৬ জন অপহৃত ব্যক্তি উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধে ১ হাজার ৩৯২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ পর্যায়ের ৪০০ রাজনৈতিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এরমধ্যে ৩০ জনের সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেখে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া র‍্যাবের লুটকৃত ৯০ অস্ত্র ও সাত হাজার ৩০৩ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার, পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্রের মধ্যে ২২৮টি এবং ১১ হাজার ৯৫৩ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিলের আবেদন করবে ডিএমপি

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, জেল থেকে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা নানা ধরনের অপকর্মে জড়াচ্ছে। তাদের জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করা হবে। কদিন আগেও দেখলাম ‘বেনজীরের ক্যাশিয়ার’ খ্যাত জসিম জামিন পেয়েছেন। সুব্রত, পিচ্চি হেলাল ও ইমনসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ে পত্রপত্রিকায় নিয়মিত খবর বেরুচ্ছে। আধিপত্য নিয়ে তারা বিরোধে জড়াচ্ছে। তাদের নানা অপকর্মে জড়ানোর তথ্যও পাচ্ছি। রেকর্ড হচ্ছে, মামলা হচ্ছে। তাদের পেলেই আমরা ধরে ফেলবো। কাউকে ছাড় দেবো না। আপাতত আমরা তাদের জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করবো। এছাড়া দাগি এসব অপরাধীর ব্যাপারে ইমিগ্রেশনে তথ্য দেওয়া হবে।

অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জাগো নিউজকে বলেন, গুন্ডা পান্ডা বা অপরাধীরা নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলে নিহত হওয়ার ঘটনাও কাম্য নয়। যারা নিজেরা মারামারি করছে সেখানে প্রোঅ্যাকটিভ পুলিশিং দরকার। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তৎপর রয়েছে। অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, দেশ পরিচালনায় গত পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ৯০ শতাংশ সফল। আইনশৃঙ্খলার বর্তমান পরিস্থিতি সন্তোষজনক প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সন্তুষ্ট হওয়া যায় না। কারণ, আমরা তো চাই অপরাধ আরও কম হোক।

নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে মাঠ পুলিশের দূরত্ব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে যে মাত্রায় স্বাভাবিক হওয়ার কথা বা জনগণ প্রত্যাশা করে সেই মাত্রায় স্বাভাবিক এখনো হয়নি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অগ্রগতি আছে, তবে তা পরিমাপ করাও কঠিন। গণঅভ্যুত্থানে পুলিশকে যেভাবে দেখেছি তাদের আইনগতভাবে ও মানুষের অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল। সেই জায়গা থেকে তাদের নৈতিক ও মনোবল সংকট এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কারণ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের দূরত্ব আছে। এ কারণেই সংকট কাটাতে সময় লাগছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বাস্তবতায় আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে সেই দায় কেউ নিতে চাইছে না। বাহিনী হিসেবে দায় না নিয়ে পুলিশ ব্যক্তি হিসেবে দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। এটি পেশাদারত্বের পরিপন্থি। এজন্য আইন ও কর্ম ঘণ্টার মধ্যে একজন পুলিশ ওইটুকুই দায়িত্ব পালন করছে কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন। এছাড়াও মাঠপর্যায় ও নীতিনির্ধারণী পর্যায় এখনও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়, অতীত চরিত্র থেকে পুলিশের অনেকেই নিজেকে বদলাতে পারেনি। মানসিকতা, অনৈতিক কিংবা অপেশাদারত্বমূলক সুযোগ-সুবিধা কিংবা আর্থিক সুযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে সব পুলিশ মুক্ত হতে পারেনি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের নিজেদের সংশোধিত রূপে কাজ করার ঘাটতি রয়েছে। এ সুযোগে অপরাধীরা সুযোগ নিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে।

ড. তৌহিদুল হক আরও বলেন, শীর্ষ পর্যায়ের অপরাধী যারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন আদালত চাইলে তাদের জামিনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ রয়েছে। অপরাধীদের যে নজরদারিতে রাখা হয়নি তাদের দৌরাত্ম্য দেখলেই বুঝতে পারা যায়। সত্যিকার অর্থে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Comments are closed.

‍এই ক্যাটাগরির ‍আরো সংবাদ