টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের ১৮ মাসের কাজ ১৮ বছরেও শেষ হয়নি। এতে উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। শুধুমাত্র অবকাঠামো নির্মাণ না হওয়ায় ৫০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি হাসপাতালটি।
অপারেশন থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও এসব সেবা মিলছে না। সামান্য কাটাছেঁড়ার জন্যও রোগীকে টাঙ্গাইলে রেফার করা হয়। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে উপজেলার আড়াই লাখ মানুষকে। স্থানীয়রা দ্রুত পরিপূর্ণ সেবা পাওয়ার দাবি জানান।
জানা যায়, সারাদেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় রূপান্তরের গেজেট হলে ২০০৬ সালে বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা কনস্ট্রাকশন এখানে ভবন নির্মাণের কাজ পায়। কার্যাদেশের শর্ত অনুযায়ী ১৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর সরকারের সঙ্গে নানা টানাপোড়েনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকা পড়ে নির্মাণ কাজ। যার ফলে ১৮ মাসের কাজ ১৮ বছরেও আর শেষ হয়নি। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ভবনটি।
সূত্র জানায়, অবকাঠামো নির্মাণ না হওয়ায় এ উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা হয়। অথচ সামান্য কাটাছেঁড়ার রোগীকেও বাসাইল থেকে টাঙ্গাইলে রেফার করা হয়। প্রতিদিন এ হাসপাতালের আউটডোরে প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।
রোগী এবং স্থানীয়রা জানান, নরমাল ডেলিভারি এবং সিজার ছাড়া আর তেমন চিকিৎসা সেবা মেলে না এখানে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও অবকাঠামো না থাকায় কোনো প্রচার অপারেশন হচ্ছে না। কোনো কিছু হলেই টাঙ্গাইলে পাঠানো হয়। অনেক সময় রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়। হাসপাতালের ওষুধও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। বিশেষ করে চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, প্রায় পরিত্যক্ত ওই ভবনটিতে অনেক সময় মাদকের আড্ডাও হয়। আবার সম্প্রতি হাসপাতালের এসির তারও চুরি হয়েছে। প্রায় পরিত্যক্ত ওই ভবনটির জানালাসহ অনেক কিছুই নিয়ে গেছে একটি চক্র।
স্থানীয় আল-আমিন মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামান্য ছোটখাটো কাটাছেঁড়া রোগী হাসপাতালে এলেও চিকিৎসা না দিয়ে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’
হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজাউদ্দিন তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ভবন না থাকার কারণে আমাদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে। রোগীদের ঠিকমতো ‘প্রাইভেসি মেনটেইন’ করতে পারছি না। অনেক সময় রোগীরা আমাদের সঙ্গে ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শার্লি হামিদ বলেন, আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে প্রায় ৫ জন চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসক দরকার প্রায় ১৭ থেকে ১৮ জন।
অনেক চিকিৎসক দিনে ও রাতেও কাজ করছেন। সম্প্রতি হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরে আনা হয়েছে। চিকিৎসক এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণে তা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো সমাধান হয়নি।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের জন্য বাজেট বরাদ্দ এসেছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের এনওসি না দেওয়ার কারণে বরাদ্দ চলে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা কনস্ট্রাকশনে যোগাযোগ করা হলেও দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।